ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে রাতভর সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ৫
ডেস্ক রিপোর্টঃ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশের উপ-পরিদর্শকসহ (এসআই) উভয়পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সোমবার রাত ১১টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমে থেমে রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে। এরপর কলেজ অধ্যক্ষ এবং অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাত ৪টায় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনে। কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন কর হয়েছে।
সোমবার বরিশাল মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত মেডিসিন ক্লাবের ১৮তম সেন্ট্রাল কনফারেন্সে কলেজ ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা যোগদান করেন।
এ সময় তারা ওই অনুষ্ঠানে জোরকরে বক্তব্য রাখেন। এ ঘটনায় ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাছিম ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজের পদবঞ্চিত নেতাদের নিয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালানোর প্রস্তুতি নেয়।
এ খবর ওই ছাত্রলীগ নেতারা জানতে পেরে তারাও পাল্টা অবস্থান নিলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন সমর্থকরা ১ নম্বর (জামিলুর রহমান) হোস্টেলে এবং পদবঞ্চিত অনুপ সরকার ও নাসিমের সমর্থকরা ২ নং (হাবিবুর রহমান) হোস্টেলের সামনে অবস্থান নেয়।
পদবঞ্চিত অনুপ সরকারের সমর্থকরা সড়কের ওপর আগুন জালিয়ে ছাত্রলীগের কমিটির বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে সভাপতি সম্পাদকের সমর্থকরা।
পরে পদবঞ্চিতরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নিলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও কলেজ অধ্যক্ষ তাদের শান্ত করে। পুলিশের উপস্থিতি কমে গেলে রাত ২টার দিকে অনুপ সরকারের সমর্থকরা কমিটির পক্ষের সমর্থকদের ওপর হামলা চালাতে যায়।
এ সময় পাল্টা ধাওয়া দিয়ে ইমরান ও তুহিন গ্রুপের সমর্থকরা তাদের ২ নং হোস্টেলের ভেতরে নিয়ে যায়। পরে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ইট ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলে ছাত্রলীগের কামাল, শুভ, আসিফ আহত হয়।
বরিশাল নগর পুলিশের মুখপাত্র আবু সাইদ জানান, পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে। এ সময় কোতোয়ালী থানা পুলিশের এসআই ফরিদুল আলম আহত হন।
তিনি জানান, রাত আড়াইটার দিকে কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর সাহা ক্যাম্পাসে এসে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে দুই হোস্টেলে পুলিশকে তল্লাশীর অনুমতি দেয়। পুলিশ তল্লাশি শেষে কিছু লাঠিসোটা উদ্ধার করে।
এখন পরিবেশ স্বাভাবিক আছে বলে জানান তিনি।
কলেজে ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন মঙ্গলবার সকালে জানান, মেডিসিন ক্লাবের প্রোগ্রামে তাদের দাওয়াত দেওয়ায় তারা সেখানে যান। অনুষ্ঠান থেকে আসার পথে দেখতে পান পদবঞ্চিত কয়েকজনকে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করতে।
এরপর তারাও জড়ো হতে থাকেন। এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে জানানো হলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে পদবঞ্চিতদের সমর্থন যোগান।
অপরদিকে পদবঞ্চিত নেতা অনুপ সরকার জানান, ওই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তারপরও তারা জোরকরে নানা ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে।
ধারাবাহিকতায় মেডিসিন ক্লাবের প্রোগ্রামেও তারা জোরকরে উপস্থিত হয়ে তা পণ্ড করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এর প্রতিবাদেই বিক্ষোভের সূত্রপাত।
কলেজ অধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর সাহা জানান, কোনো পক্ষকে উস্কে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি খবর পেয়ে রাতে ক্যাম্পাসে এসে পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত করেন। সামনে পরীক্ষা বলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে সরে এসেছেন।
তবে বুধবার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভা ডাকা হবে সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।