আইএস নিয়ে প্রচলিত ৭ গল্প, যার নেই কোনো সত্যতা!!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামপন্থী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস। প্রায় প্রতিদিনই নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আর ভয়াবহ হামলার কারণে বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে থাকে এই সংগঠন। এদের সম্পর্কে নানা জানা-অজানা তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় পত্রিকার পাতায়। আইএসের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত অতিকথন কোনগুলো তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইনডিপেনডেন্ট। আসল সত্যটা কী সেটাও সেখানে জানানো হয়েছে।
১.
আইএসকে তুলনামূলকভাবে নতুন জঙ্গি সংগঠন বলে মনে করা হয়। যা বিস্ময়কর দ্রুততার সাথে বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জুন মাসে মসুল হামলার পর এরা এদের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে।
অথচ এসব কিছুই সত্য নয়। আসল কথা হলো, ২০০১ সালে তৌহিদ আল জিহাদ নামে আত্মপ্রকাশ করে সংগঠনটি। এরও আগে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত পাঁচবার নাম পরিবর্তন করেছে সংগঠনটি।
২.
মধ্যপ্রাচ্যকে জড়িয়ে গত জুলাই মাসে আইএসের দেওয়া খিলাফতের ঘোষণাকে অনেকেই অভূতপূর্ব বলে মনে করে।
তবে এটি সত্য নয়। সংগঠনটি ২০০৬ সালে প্রথম ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক’-এর ঘোষণা দেয়। এরপর এর নেতা আবু ওমর আল বাগদাদি, যিনি নিজেকে খলিফা হিসেবে পরিচয় দেন।
৩.
আইএসের বর্তমান প্রধান এবং তথাকথিত খলিফা আবু বকর আল বাগদাদি ২০০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী ছিলেন। সেখানে থেকেই তিনি মৌলবাদিতে পরিণত হন এবং কারাগার থেকে বের হয়েই তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন।
এটিও মিথ্যা তথ্য। আবু বকর আল বাগদাদি জ্যেষ্ঠ সন্ত্রাসী হিসেবেই যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী ছিলেন। ধারণা করা হয় এর আগেই তিনি আফগান যুদ্ধে অংশ নেন। তবে তাঁর সম্পর্কে অন্য একটি তথ্যও পাওয়া যায়। আর সেটি হলো, বুক্কা কারাগারে বাগদাদি মোটেও পাঁচ বছর ধরে বন্দী ছিলেন না। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি আটক ছিলেন। তবে এরপর তাঁকে আটকে রাখার আর কোনো কারণ না থাকায় তাঁকে ছেড়ে দেয় মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
৪.
বলা হয়, আইএসের নেতারা অতিমাত্রায় ধর্মান্ধ ইসলামী মৌলবাদি।
তবে এটিও ভুল ধারণা। কারণ আইএসের নেতৃত্বে এমন অনেক সেনা সদস্য রয়েছেন যাঁরা ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে সেনা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। আইএসের অন্তত ১২ জন উচ্চপর্যায়ের নেতা ইরাকের সাবেক বাথ সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। আইএস আসলে এমন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন যাদের রয়েছে অস্ত্র বিষয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সদস্য।
৫.
আইএসকে একটি বিশৃঙ্খল ও সহিংস সংগঠন বলে মনে করা হয়।
দৃশ্যত আইএস একটি সহিংস সংগঠন হলেও এদের কর্মকাণ্ডে কোনো পাগলামির লক্ষণ দেখা যায় না। মূলত ২৮০ পৃষ্ঠার একটি জিহাদি বইয়ের নির্দেশ মেনে চলেন আইএস সদস্যরা। ‘দ্য ম্যানেজমেন্ট অব সেভাজেরি’ শীর্ষক ওই বইতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লেখা আছে যে কীভাবে চরম সহিংস পন্থা ব্যবহার করে ইসলামিক স্টেট তৈরি করতে হবে। সংগঠনটি পরিচালনার জন্য আছে মজলিশে সূরা এবং যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এমনকি আত্মঘাতী বোমা হামলাবিষয়ক আলাদা শাখাও আছে এদের। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে আইএস। যেখানে বিভিন্ন স্থানে করা তাদের বোমা হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংকলিত ছিল।
৬.
অনেকেই বলে থাকে যে আইএস সৃষ্টি হয়েছে আল-কায়েদা থেকে।
এটা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত যে, জন্মের শুরু থেকেই স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করেছে আইএস। প্রথম দিকে আইএস আল-কায়েদা ইন ইরাক নামে কাজ করত। তবে প্রায়ই আল-কায়েদার সাথে এদের মতবিরোধ দেখা দিত। বিশেষ করে আইএসের পশ্চিমা ব্যক্তিদের অপহরণ করে শিরশ্ছেদ এবং শিয়া মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা জিহাদকে নষ্ট করছে বলে মনে করত আল-কায়েদা। এসব কারণে ২০০৬ সালেই আল-কায়েদার সাথে আইএসের সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে।
৭.
আইএসকে পশ্চিমা বিশ্বের অপেক্ষাকৃত নতুন শত্রু বলে মনে করা হয়।
অথচ এটি পুরোপুরি মিথ্যা তথ্য। সত্যটি হলো, ২০০৩ সাল থেকেই আইএসের সঙ্গে লড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। সবমিলে প্রায় ১২ বছর ধরে আইএসের সঙ্গে মার্কিনিদের যুদ্ধ চলছে। অর্থাৎ জাপান বা জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সময়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি সময় ধরে আইএসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে তারা।