সিলেটের শীতকালিন চুঙ্গাপিঠা !
এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী: “গ্রামের নওজুয়ান, হিন্দু মুসলমান, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে চুঙ্গা পিঠা খাইতাম” বৃহত্তর সিলেট বিভাগের প্রতিটি অঞ্চলে মাছ বিরান, চুঙ্গা পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, চিতল পিঠা, ফিরনী ইত্যাদি শীত মৌসুমে প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে রেওয়াজ হয়ে আছে। চুঙ্গা পিঠা তৈরীর জন্য প্রয়োজন বিরইন চাল ও নির্দিষ্ট জাতের বাঁশ। চুঙ্গা পিঠার বাঁশ জন্মে পাহাড়ে ও টিলায়। চুঙ্গা বাঁশের কুড়ি প্রায় ১ শ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি হয়। পিঠা তৈরী করতে ভালোভাবে চাল ভিজিয়ে নরম করে একজাতীয় বাঁশের চুঙ্গার মধ্যে ভরে খড়কুটো দিয়ে পুড়িয়ে চুঙ্গা তৈরী করা হয়। এই পিঠার বিষেশত হলো বাঁশের মধ্য থেকে একধরনের লোভনীয় গন্ধ পাওয়া যায়। গোলাকার আকৃতির এই পিঠা খেতে পৌষ সংক্রান্তির (৩০ পৌষ) বিশাল মাছের মেলা থেকে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কৈ, মাগুর ইত্যাদি মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে বৌ-মার হাতে মাছের ভাজা (মাছ বিরান) দুধের মলাই, খেজুরের গুড়, দুধের সর ও ফিরনী দিয়ে খেতে সুস্বাদু বটে। আগের মতো এখন আর গ্রামীন জনপদে শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে চুঙ্গা পুড়ার দৃশ্য চোখে পড়ে না বললেই চলে। কিন্তু এটা বিলুপ্ত প্রায় হওয়ার আগে এ ঐতিহ্য ধরে রাখা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। আগেকার মুরব্বীরা হাজী আব্দুস সাত্তার (১১০) বলেন, “আমরা আগে হকল বাড়িতে শীতের দিনো চুঙ্গাপুড়া জ্বালাইয়া আগুন তাবাইতাম ও চুঙ্গাপুড়া খাইতাম। এখন নয়া জমানায় ইতা খাওয়া ভুলিগেছইন। খাইলে এর স্বাদ মুখে লাগিতাকবো। একবার খাইয়া দেখইন এর মজা কিতা।” অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহত্তর সিলেট বিভাগের বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল স্বাপদ সংকুল বনবনানি ঘেরা। এসব অঞ্চলে বসবাস করত নাগা, কুকি ও টিপরা সহ নানা জাত ও বর্ণের পাহাড়ি অধিবাসী। তারা পাহাড়ে জুম চাষ করে পশুপাখি শিকার করে আহার করত। পাহাড়ি অধিবাসীরা এক ধরনের বিশাল বাঁশ কেটে চুঙ্গার ভেতর ভেজা চাল দিয়ে তৈরী করত চুঙ্গা পিঠা। পরবর্তীতে এ খাবার পাহাড়ী অধিবাসীদের আস্তানা ছেড়ে চলে এসেছে গ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে।