বাসর রাতেই বিরোধ, ওড়না পেঁচিয়ে স্বামীকে খুন করে নববধূ রোশনা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ‘রাতে তুচ্ছ ঘটনায় গালে চড় মারার কারণে স্বামীর সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নিচে ফেলে তার বুকের উপর উঠে পরনের উড়না দিয়ে গলা ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করি। ফজরের পর মৃত স্বামীকে একাই টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে লাশটি ফেলে ঘরে চলে আসি।’
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চাঞ্চল্যকর হত্যার দায় স্বীকার করে স্বামী হত্যার এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দেন নিহত রাজমিস্ত্রি রুবেল আহমদ ওরফে রাসেল এর নববিবাহিত স্ত্রী রুশনা বেগম। আদালতের বিচারক মো. সাহেদুল করিম তাঁর খাসকামরায় দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া রুশনা বেগমের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
গতকাল সন্ধ্যায় পৌনে এক ঘন্টা সময় ধরে জবানবন্দীদের রুশনা। সংসার শুরুর দিন থেকেই সংসারে ভাঙনের সুর উঠে তাদের। বাসর রাত থেকেই স্বামীর সাথে বিরোধের শুরু হয় রোশন বেগমের। ঝগড়া হতো নিয়মিতই। এমনকি হাতাহাতিও হয়েছে কয়েক দফা। নববধু রুশনা সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলীভোগ (কৈতক) গ্রামের মোস্তফা মিয়ার কন্যা। গত শুক্রবার (৬ নভেম্বর) রুশনা বেগমের (১৯) সাথে বিয়ে হয় বালাগঞ্জ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে রাজমিস্ত্রি রুবেল আহমদের। বিয়ের পর থেকে রুশনা স্বামী রুবেলের সাথে বাগবাড়ী নরশিংটিলার ঐক্যতান ১২৯ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিয়ের তিনদিনের মাথায় সোমবার রাতে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘাতক স্ত্রী। গত মঙ্গলবার সকালে বাসার সামনে রুবেলের লাশ পাওয়া যায়। এর পর পুলিশ রুশনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ওই সময়ই থানা নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের হত্যাকান্ডে কথা স্বীকার করে সে।
রুশনা বেগমের জবানবন্দীর বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিম পটোয়ারী জানান, পারিবারিক কলহের কারনে ঘটনার দিন রাতে স্বামী রুবেল ও স্ত্রী রুশনার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে রুবেল স্ত্রীর গালে একটি চড় মারেন। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রুশনা স্বামী রাসেলকে নিচে ফেলে দিয়ে তার বুকের উপর উঠে পরনের ওড়না দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
তিনি বলেন, তখন রুশনা কোন উপায় না পেয়ে ফজরের পর স্বামীর লাশটি একা টেনে নিয়ে বাসার গেইটের সামনে ফেলে ঘরে চলে যায়। সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে বাসার মালিকের মামা বাসার গেইটের সামনে শোয়া অবস্থায় রুবেল পড়ে থাকতে দেখে রুশানার ঘরে গিয়ে তাকে খাটে বসা পান এবং বলেন স্বামী গেইটের সামনে শোয়ে আছে তাকে ঘরে নিয়ে আসো। এ কথা শুনে রুশনা বেগম স্বামী হত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে রুবেল আহমদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসাপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। বুধবার রুশনা বেগমকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রুশনা আদালতে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। সন্ধ্যায় রুশনার জবানবন্দী শেষে তাকে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এসআই আজিম বলেন, এ ঘটনায় নিহত রুবেল আহমদের ভাই সেলিম মিয়া বাদি হয়ে বুধবার কোতোয়ালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৬।