রাজন হত্যায় কামরুলসহ চারজনের ফাঁসি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটে আলোচিত শিশু সামিউল আলম রাজনকে পৈশাচিক নির্যাতনে হত্যা মামলার রায়ে প্রধান আসামি কামরুলসহ চার জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বেলা পোনে একটার দিকে রায় পড়া শেষ হয়। প্রধান আসামি কামরুল ছাড়াও বাকি তিন জন হচ্ছেন কামরুলের সহযোগী ময়না চৌকিদার, পাভেল ও তাজউদ্দিন। দুই জন খালাস পেয়েছেন। বাকি সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
কামরুল ছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- চৌকিদার ময়না ওরফে বড় ময়না (৪৫), তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮) ও পলাতক জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮)।
এছাড়া আদালত মামলার অভিযুক্ত এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, পাঁচ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও তিনজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০)। সাত বছর করে কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- প্রধান আসামি কামরুলের মেজো ভাই মুহিদ আলম (৩২), বড় ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও ছোট ভাই পলাতক শামীম আহমদ (২০)।
এক বছর করে কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- দুলাল আহমদ (৩০) ও আয়াজ আলী (৪৫)। আর মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন- মো. ফিরোজ আলী (৫০), মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও রুহুল আমিন রুহেল (২৫)।
১৪ কার্যদিবসের মধ্যে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। রায়ের সময় প্রধান আসামি কামরুল ইসলামসহ ১১ জন উপস্থিত ছিলেন।
একই সঙ্গে শিশু রাজনের মা-বাবাসহ গ্রামের অসংখ্য মানুষ আদালতে হাজির হন। রায়ের পর তারা উল্লাস প্রকাশ করেন।
গত ৮ জুলাই চুরির অপবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন শেখপাড়ায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয় সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকার বাদেয়ালি গ্রামের সবজি বিক্রেতা রাজনকে।
লাশ গুম করার সময় ধরা পড়েন একজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করে। ফেসবুকে প্রচারের উদ্দেশ্যে নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন নির্যাতনকারীরা। পরে সেটি ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পরপরই পালিয়ে সৌদি আরব চলে গিয়েছিলেন মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম। ইন্টারপোলের মাধ্যমে গত ১৫ অক্টোবর তাকে ফিরিয়ে আনা হয়।
এরপর উপস্থিতিতে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ১১ সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণের পর একটানা তিন দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
রায়ের পর আদালতের চারপাশে শত শত মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়েন।
আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা এই রায় পাঠ শুরু করেন।
এদিকে রায় ঘোষণা উপলক্ষে রাজনের বাবা-মাসহ ঔৎসুক জনতা আদালত চত্বরে ভিড় করেছেন। রাজনের গ্রামের শত শত লোক আদালত চত্বরে অবস্থান করে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। গণমাধ্যম কর্মীরাও আদালত চত্বর থেকে সকাল থেকেই লাইভ সম্প্রচার করছে।
বিচার শুরুর এক মাসের মধ্যে আলোচিত এই মামলার রায় প্রদানের তারিখ নির্ধারিত হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নির্যাতনের সময় ঘাতকরা নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিওচিত্রে ধারণ করে যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় একে একে মুহিতের স্ত্রীসহ মোট ১২ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে গত ১৬ আগস্ট ১৩ জনকে আসামি করে এ মামলায় আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার। আদালত ২৪ আগস্ট চার্জশিট আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এক সঙ্গে ৯টি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। পরবর্তীতে ১৫ সাক্ষীর পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করলে আদালত ১১ জনের পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের অনুমতি দেন। টানা ৩ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৭ অক্টোবর আদালত মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন।