‘কাউকে দেবো না, ওদের নেতৃত্ব ওরাই ঠিক করুক
সুরমা টাইমস ডেস্ক : আসন্ন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সম্মেলনে সিলেকশন নয়, ইলেকশন হবে। দীর্ঘ এক যুগ পর আগামী ১৩ নভেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে স্বাচিপ সদস্যদের সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব অর্থাৎ সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম. ইকবাল আর্সলান সোমবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্বাচনের ঈঙ্গিত দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কেউ একজন স্বাচিপের সভাপতি মহাসচিব কীভাবে নির্ধারিত হবে এ প্রসঙ্গ তুললে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কাউকে দেবো না, ওদের নেতৃত্ব ওরাই ঠিক করুক’ বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অনেকেই নেতা হতে চায়, আমি কাকে রেখে কাকে দেবো। একবার নয়, প্রধানমন্ত্রী পরপর দু`বার সরাসরি নির্বাচনের ইঙ্গিত দেন। সূত্র জানায়, রোববার রাতে মহাসচিব পদপ্রার্থী দু`জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও তিনি একই আভাস দেন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্বাচিপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সরাসরি নির্বাচন হবে এমন কানাঘোষা শুরু হয়। রাতে স্বাচিপের কেন্দ্রীয় অফিসে যান অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। তিনিই উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের ঈঙ্গিত প্রদানের কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নির্বাচনের ঈঙ্গিত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. ইকবাল আর্সলান কোনো প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আমি শেখ হাসিনার রাজনীতি করি, তিনি কাউকে নির্বাচিত করে দিলে তাকে মেনে নেব। আর সরাসরি নির্বাচন হলে আমি যে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি এ কথা আগেও বলেছি, এখনো বলছি। জানা গেছে, বর্তমানে স্বাচিপের সদস্য সংখ্যা ১৩ হাজার ২২৩ জন। সম্মেলনের দিন প্রথমপর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এবারের নির্বাচনে সভাপতি ও মহাসচিব উভয় পদে নমিনেশন ফরমের প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেবেন তারা। নির্বাচনের দিন ঝক্কিঝামেলা এড়াতে দুই একদিন আগেই নমিনেশন বিক্রি শুরু হবে। স্বাচিপের নীতিনির্ধারকদের একজন জানান, তাদের অনেকেই অহেতুক সভাপতি ও মহাসচিব পদে নির্বাচন করবেন বলে হম্বিতম্বি করছেন। মূলত তারা কেউ প্রার্থী হবেন না। তারা নিজেরাও শীর্ষ দুটি পদে উপযুক্ত নন তা জেনেও কমিটিতে ভালো কোনো পদ ভাগিয়ে নিতে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। ৫০ হাজার টাকায় নমিনেশন ফর্ম কয়জনে কেনে তাই এখন দেখার বিষয়। স্বাচিপের সভাপতি পদে সরাসরি মাঠে রয়েছেন বর্তমান মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান। তার অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সভাপতি পদে বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নাম শোনা গেলেও তিনি এখনো নির্বাচন করবেন এমন কথা নিজে বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ও স্বাচিপের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. জুলফিকার লেনিন মঙ্গলবার ফেসবুকে স্বাচিপ সভাপতি তার প্রার্থী হিসেবে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নাম ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি সভাপতি পদে প্রার্থী না হলে একজন প্রভাবশালী প্রার্থী সভাপতি হিসেবে ইকবাল আর্সলানের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। এছাড়াও সভাপতি পদপ্রত্যাশী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, হলিফ্যামিলি হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুর রউফ সর্দার, বিএসএমএমইউ সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুযার নাম শোনা গেলেও সরাসরি নির্বাচনে তাদের কয়জন নির্বাচনের মাঠে থাকবেন তা বলা মুশকিল। এবার মহাসচিব হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বিএমএর সাবেক মহাসচিব ও বর্তমানে বিএসএমএমইউ’র প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল আজিজ, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরী, বিএমএর সিলেট জেলার সহ-সভাপতি ও বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) এহতেশামুল হক চৌধুরী, বিএমএর সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, বিএমএর কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, বিএমএর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. আবুল হাশেম খান, স্বাচিপের বিএসএমএমইউ’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. জাকারিয়া স্বপন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, কামরুল হাসান মিলন, আমীর হোসেন রাহাত ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু। মহাসচিব হিসেবে সম্প্রতি ব্যাপক প্রচার চলছে অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের (প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়) পক্ষ থেকে। অন্যান্য মহাসচিব পদপ্রার্থীরা জাগো নিউজকে বলেন, দলের জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে নেদারল্যান্ডে গেছেন। তিনি দেশে ফিরে আসার পর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত দেন কি-না সেদিকেও অনেকে তাকিয়ে আছেন। স্বাচিপের নেতাকর্মীরা শতকরা ৯০ ভাগ নির্বাচন হবে বলেই ধরে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।