ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভারে ন্যুব্জ কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন
বিশ্বজিৎ রায়, কমলগঞ্জ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার কমলগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভারে নূহ্য হয়ে পড়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা পরিষদে ন্যস্ত ১৭টি দপ্তরের মধ্যে ৮টি দপ্তরই রয়েছে কর্মকর্তা শূন্য। দায়িত্ব প্রাপ্ত, চলতি আর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভারে এইসব দপ্তরের কার্যক্রম রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারনে ইচ্ছামাফিক পরিচালিত হচ্ছে কাজকর্ম। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ মাসে মাত্র একদিন বা দুদিন অফিস করেন। পদ শূন্য থাকায় উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনেকটা শিথিলতা বিরাজ করে। বিভিন্ন দফতরে সেবা নিতে এসে কমলগঞ্জবাসীকে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ঘুরে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩ মার্চ উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা গাউছুল আজম বদলীর পর হতে শুণ্য রয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার পদ। যে কারনে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কর্মকর্তা মো.জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৪ সালের ১২ আগষ্ট হতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন দেব বদলী হলে সেই পদে আর কেউ আসেননি। গুরুত্বপুর্ণ এই দপ্তরটি ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনোরমা দেবী। ২০১৪ সালের ১০ জুলাই থেকে শূন্য রয়েছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার পদ। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুন নূর অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও তিনি মাসে মাত্র একবার অফিস করেন। তার অবর্তমানে অফিস চালান এমএলএসএস। ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে শূন্য রয়েছে পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদ। মৌলভীবাজারের কর্মরত নন্দিনী দেব অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। তিনিও মাস দুইমাস পর কয়েক ঘণ্টার জন্য অফিস করেন। ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট থেকে শূন্য রয়েছে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার পদ। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও সপ্তাহে একবার অফিস করেন। ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বদলী হলে তার পরিবর্ততে শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অসীম কুমার কর অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সপ্তাহে একদিন অফিস করেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন মৌলভীবাজার সদরে বদলী হন। তাকে আবার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা পদ শুন্য রয়েছে ১ বছর ধরে। বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর এর আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি নিয়মিত অফিসে আসেন না। প্রায়ই অফিস বন্ধ থাকে। কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. পনিরুজ্জামান প্রায় ১ বছর ধরে রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর এর অতিরিক্ত উপসহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও অন্য উপজেলায় সময় দিতে হয়। এতে করে এসব গুরুত্বপুর্ণ দপ্তরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতায় দাপ্তরিক কার্যক্রম কার্যত: ঝিমিয়ে পড়েছে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রীতিতমত অফিস না করা, বেশির ভাগই হাজিরা সর্বস্ব অফিস করায় সাধারন মানুষ তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলা পরিষদের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় একদিকে যেমন উপজেলার দাপ্তরিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে এসব অফিসে সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট দিন নির্ধারন করে অফিস করতে বলা হয়েছে। এর পরেও দায়িত্বে অবহেলা করলে সেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।