শমসের মবিনের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে চলছে ‘নতুন রাজনীতি’
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। তার এ অবসর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে এখন নানান রকম আলোচনা। রাজনীতি থেকে তার অবসরের বিষয় নিয়ে শুরু হয়েছে ‘নতুন আরেক রাজনীতি।’
বুধবার রাতে অবসর নেওয়ার কথা জানিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মবিন। খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থান করায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে তিনি চিঠিটি দেন। যেহেতু তিনি রাজনীতি ছাড়ছেন, তাই বিএনপির কোনো পদে থাকার সুযোগ নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘উনি (শমসের মবিন) পদত্যাগ করেননি, অবসর নিয়েছেন। উনি স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন।’
হঠাৎ করেই দলের অন্যতম নীতিনির্ধারক শমসের মবিন রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ায় কিছুটা হলেও অসস্তিতে পড়েছেন বিএনপি। অন্যদিকে শমসের মবিনের অবসরে উজ্জীবিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে নানান ধরনের বক্তব্য দিয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এ পদত্যাগের কারণে শমসের মবিন চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হানিফ বলেছেন, ‘তাঁর (মবিন) মতো আরও যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নেতা বিএনপিতে আছেন, তাঁরা এক সময় এভাবে বেরিয়ে আসবেন।’
অন্যদিকে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি এখন পেশাদার খুনি সন্ত্রাসীদের উপর নির্ভরশীল এবং ভাড়াটে খুনির দলে পরিণত হয়ে পড়েছে। তাই শমসের মুবিন চৌধুরীর মত প্রবীন নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেছে। শুধু শমসের মুবিন চৌধুরী নয়, আগামী কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপির অনেক নেতাকর্মী দলটিকে গুডবাই জানাবে।’
এদিকে শুক্রবার নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির হতাশাব্যঞ্জক বহিঃপ্রকাশ এবং অভ্যন্তরীণ কলহ’ই এ পদত্যাগের মুল কারণ। একজন সাবেক কূটনীতিক হিসেবে তিনি ওতোপ্রোতভাবে বিএনপির পলিসি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতায় ছিলেন। বিদেশিদের কাছে নালিশ জানানোর বিষয়টায় তিনিই পুরোভাগে ছিলেন। এখন তিনিও টিকতে পারলেন না।’
শমসের মবিনের রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতাদের করা মন্তব্যের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ নেতাদের করা মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক নেতা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এটা মানবাধিকারের বিষয়। একজন মানুষ অসুস্থ বলে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন, এটা নিয়ে কথা বলার কিছুই নেই। আর উনিতো বিএনপি থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেননি যে এটা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের এতো কথা বলতে হবে।’
অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘অবসরতো যে কেউই নিতে পারে। কেউ যদি মনে করেন যে শারীরিকভাবে সুস্থ নয়, তাহলে তিনি অবসর নিতেই পারে। এটা নিয়ে আলাদাভাবে মন্তব্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ কি বলছে সেটা দেখার বিষয় নয়। তারা তাদের অবস্থান থেকে যা বলার বলছে।’
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগতো তার কথাবার্তায় অসুস্থ হয়ে গেছে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ অনেক বেপরোয়া। যা একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের অসংলগ্ন আচরণ গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা যার-যার ব্যক্তিগত বিষয়। উনি একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আর এমনিতেই অসুস্থ। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার কারণে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে আমি শুনেছি। একটা ব্যক্তি রাজনীতি থেকে অবসর নিতে পারেন আবার যে কেউ যোগদান করতে পারেন। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। রাজনীতি থেকে তার অবসর নেয়াকে যেভাবে ইস্যু করা হচ্ছে এটা ঠিক নয়।’বিডিটুয়েন্টিফোরলাইভ