প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান অভিনেতা নজরুল ইসলাম তোফা জাতীয় পরিমন্ডলে
এসএমএ হাসনাতঃ প্রতিশ্রুতিশীল ও প্রতিভাবান নাট্যাভিনেতা নজরুল ইসলাম তোফা। মফস্বল শহরের গন্ডি পেরিয়ে নিজ গুনে স্থান করিয়ে নিয়েছেন জাতীয় পরিমন্ডলে। অভিনয় করছেন শিমুল সরকারসহ নামী-দামী পরিচালকদের নাটকে। ইতোমধ্যে নাম কুড়িয়েছেন সুধিমন্ডলে।
আলিফ চ্যালেনের অডিশনে টিকে পরিচালক সাজ্জাদ রহমানের তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিক নাটকে ৯ থেকে ১১ অক্টোবর তিন দিনব্যাপি নাট্য কর্মশালা করে সফল হয়েছেন।পরিচালক অহিদুজ্জামান ডাইমন এর তত্বাবধানে রাজশাহী জোনের নাট্যযুদ্ধে সে গত শুক্রবার ১/৫/২০১৫ তারিখে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটের প্রোগ্রামে এটিএন চ্যানেলে অতিথি শিল্পী হিসাবে ডাক্তার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাটকের নাম গল্প হলেও সত্যি। নাট্যকার ও পরিচালক শিমুল সরকার এর ধারাবাহিক নাটক সাহস সঞ্চয় ব্যুরোতে সে ২৮ জুন আর টিভিতে রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার ৭টা ৪০মিনিটে প্রচারিত নাটকে অভিনয় করেছেন।পরিচালক শাহারিয়ার চয়নের নাটক ভূতের শহরে সে আজব ভূত সেজেছিলেন এবং দর্শক নন্দিত নাটকটি s moviz television এ ২৩/৬/১৫ তারিখে মঙ্গল বার সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে প্রচার হয়েছিল। তাছাড়া পরিচালক আশিক রাজের দুটি নাটকে কাজ করেছে ছেড়া টি শার্ট ও দুষ্টু বালক এবং পরিচালক রোমো রশিদ এর নাটক লাভ স্টেশনেও কাজ করেছেন। বর্তমানে পরিচালক আব্দুল্যা আল মামুন সনেটের ঈদের প্যাকেজ নাটক বাঁকা চাঁদের মিষ্টি হাঁসি তে মুল চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক নন্দিত হয়েছেন।
ছোটবেলাতে কাঁদামাটি মেখে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ায় মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছিল। কিন্তু নাটকের চরিত্রের জন্য পরিচালক তাকে নিজ হাতে কাঁদা মাখিয়ে দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,পরিচালক শিমুল সরকারের ’মামার হাতে মোয়া’ একুশে টেলিভিশনে প্রতি মঙ্গলবার ও বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে প্রচার হয়েছিল। আমাকে টাইটেল সংয়ে উপস্থাপন করেছিলেন। তবে আগে এলাকার বড় ভাই চরিত্রে কাজ করেছিলাম না। আশা করি কাজটা সফল হবে। তাছাড়া দুটি আইসিসি বিশ্বকাপের থিম সংয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচালনায় আশিক উল আলম ও শাহারিয়ার চয়নের সঙ্গে কাজ করেছি। উল্লসিতো বিজয়ের প্রতিক তারকা শিল্পী হিসাবে তাঁদের কাজে সুয়োগ দিয়েছে বলে আনন্দ বোধ করছি। এছাড়াও ফারদিনের স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্প এ্যালবামে সুখের পরশ গানে মডেল হয়েছি। গানটি পরিচালক ও মডেল ইহতেশাম জনি। পরিচালক ইহতেশাম জনির সঙ্গে কথা চলছে নাটক করার।নাটকের নাম এরি নাম কি ভালোবাসা। আশা করি নাটকটি আপনাদের ভালো লাগবে। তিনি নিজের সম্পর্কে বলেন, প্রায় প্রতি বছরই আমার হাতে পুরস্কার আসতো। একটি ঘটনা আছে, ’যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতায় সেই ছোট বেলার গায়ে কাদা মেখে মুক্তিযোদ্ধা সেজে মার হাতে মার খেয়েছি। কারণ মা বলছিল ’এতো কিছু ভাল বিষয় থাকতে গায়ে কাদা মাখিস ক্যান’। কথাটি আজও ভাবায়, আজও গায়ে কাদা মাখি অর্থাৎ মাখিয়ে দেন পরিচালক শিমুল ভাই। ফিরে যাই সেই স্মৃতি মায়ের বকুনীর কাছে গাঁয়ের মানুষের কাছে। তারা আমাকে আজও ভালোবাসে তবে এই ভালোবাসার ভাগিদার পরিচালক শিমুল ভাই। লিখছি আর ভাবছি, জীবনের স্মৃতি অনেক…আনন্দ অশ্রুও ঝরবে অনেক। তাই বাঁচি যতদিন একটু একটু করে জানায়ে যাবো, আমার কথা আমিই বলি, নিজের ঢাক ফাটে ফাটুক। একটি কথা বলতে ইচ্ছে করছে আজীবন অভিনয়ের মাঝে বাঁচতে চাই। পাগল মন যে কোন চরিত্র চায়, যে কোন চরিত্র খুঁজে। অভিনয় ছাড়া বাঁচি কি করে সচেতন,অবচেতন, অচেতন ভাবে অভিনয় আমার জীবনের মৌলিক জায়গা দখল করে থাকে। গুরুকে খুঁজি মনেপ্রানে, মন একটু বিনোদন খুঁজে দিনে রাতে। বই পড়ি আর একা একা অভিনয় করি। আমার বন্ধু তেমন নেই বললেই চলে,তাই একা চলি। মান্য করেতে চাই গুরুকে। আছে তিনি আমার মনে, থাকবেনও চিরকাল। আমার মনের গহিনে ভাব জগতে অন্ধকারের আলো..অভিনয় গুরু নাট্যকার, নাট্যপরিচালক, সাংবাদিক, গ্রাফিক্স এডিটর এবং ডি বাংলা টেলিভিশনের পরিচালক যিনি তিনি হচ্ছেন শিমুল সরকার।
ছোটবেলা থেকেই চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি অভিনয়কে বেশ গুরুত্ব দিয়ে আসছেন বলেই আজও অভিনয় করছেন। স্কুলজীবনে কিছুটা সময় কবিতা, ছড়া লিখার চর্চা একটু আধটু জন্মেছিল আবার তা আবৃত্তিও করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বর্তমানে মিডিয়া নাটক করেন বলেই একটি নাটক লিখেছেন তবে তা টেলিফিল্ম এ রূপায়িত করলেই ভাল হবে বলে মনে করেন। নাটকটির নাম ’সেই তো ভালোবাসা’। তরকারি তৌহিদ নামের একটি মজার কমেডি নাটকের জন্য গল্প লিখেছেন। যা অনেক পরিচালক নির্মান কাজে এগিয়ে আসতে চাইছেন। কিন্তু নাট্যগুরু পরিচালক শিমুল সরকারের হাতে দিয়েছেন। কারন তিনার হাতে নাট্যরূপ ও পরিচালনা হলে ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুয়োগ আসবে বলে নজরুল ইসলাম তোফার বিশ্বাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে পা দিয়েই থিয়েটার চর্চায় মনোনিবেশ করেছিরলেন। বর্তমানে নাট্যচর্চায় বিভিন্ন ভাবে ব্যস্ত থাকছেন। অভিনয়কে জীবনের রসে ভাসিয়ে দিতে চান এই নাট্য শিল্পী। দেখিয়েও দিয়েছেন তিনি মিডিয়া নাটক, ডকুমেন্টারী এবং মিউজিক ভিডিওতে অহরহ কাজ করে। চ্যানেলে প্রচারিত নাটকের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন,মিডিয়াতে অর্থাৎ চ্যানেল আই’য়ে তার অভিনিত নাটক ২০০৫ সালে প্রথম প্রচার হয়েছিল ‘এবং একজন নারী’। তাছাড়া ডাইরেকটর, চোরকাব্য, শাস্তি, সাহস সঞ্চয় ব্যুরো, এরং মামার হাতের মোয়া।
প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেতা নজরুল ইসলাম তোফা মঞ্চ নাটক ও পথ নাটক অনেক করেছেন প্রায় সবগুলোর পরিচালনায় ছিলেন আজকের মিডিয়া পরিচালক ও নাট্যকার শিমুল সরকার। উল্লেখ্য যে উৎপল দত্তের ‘রাইফেল’ নাটক এর রহমত চরিত্রটি পরিচালক শিমুল সরকার তাকে দিয়ে করিয়ে ছিলেন। অনেক কষ্টসাধ্য এই চরিত্র তোলে ধরতে পরিচালক শিমুলকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বলে জানালেন তিনি। তারা শংঙ্কর বঙ্গ্যোপাধ্যায় এর উপন্যাসকে নাট্যরুপ করেছিলেন সাইমুন জাকারিয়া পরিচালনা করেছিলেন শিমুল সরকার সেখানেও কাজ করছেন। শিমুল সময়োপযোগি ইমপ্রোভাইজেশন প্রডাকশন তৈরী করে তাকে দিয়ে খুব সহজেই করাতেন। যেমন: রোদের আধার, সিগনাল আনলিমিটেড ওয়ান, ও সিগনাল আনলিমিটেড টু ইত্যাদি।পরিচালক শিমুল ভাই নির্দেশনা দিয়েছেন ফুটপাত, পাগলা গারদ, দাও ফিরে সে অরন্য, বাঁশ, হয়তো নয়তো, বোবো, যায় দিন ফাগুনো দিন, মে দিবস, জরিমন, ইতিহাসের পাতা থেকে, একটি অবাস্তব গল্প, মড়া, অতৃপ্ত আত্মা, হোল্লাবোল প্রভৃতি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তাছাড়া অন্য পরিচালকের কাছে নাটকের কাজ করেছেন। যেমন: কবর, জীবন নদীর তীরে, ফাইনাল বিয়ে, বহমান, ক্ষ্যাপা পাগলের প্যাচাল, চক্রব্যূহ, ফিরে আসবে ইত্যাদি।
রাজশাহীতে অবস্থানের কারণে রাজশাহীর স্থানীয় নাট্য কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া পড়ে তার। তাদের সঙ্গেও নাটকের আলাপ আলোচনা হয় এবং দু’একটি ভিডিও এবং মঞ্চ নাটক করেন তিনি। ভন্ড উপ্যাখান, ভাগ্যের পরিহাস, উপেক্ষিত রিক্সাওয়ালা। পরিচালক শিমুল সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম এ্যাবষ্টাকধর্মী নাটক নাট্যদুয়ার সংগঠনে চালু করেছিলেন বলে সেখানে আমি অভিনয় করেছিলাম। সেসব নাটকে পরিচালক শিমুল সরকার পুরো স্ক্রিপটে কি ঘটবে তা মুল এ্যাকশানগুলো নাটকের শুরুতে করিওগ্রাফিতে ফুটিয়ে তুলতেন। আমার জীবনের শ্রেষ্ট করিওগ্রাফি উৎপল দত্তের রাইফেল নাটকে করেছি এবং মজা করে উপভোগ করেছি। নাটক করতে হলে নাটক পড়তে হয় এবং দেখতে হয়।যা তিনি শিখেছেন পরিচালক শিমুলের কাছ থেকে। তাই আজও তার পথ অনুসরণ করে যাচ্ছেন নজরুল ইসলাম তোফা। বাংলাদেশ-ভারত নাট্য পরিচালক ও লেখকদের অনেক বই সংগ্রহে রেখেছেন, সময় পেলে পাতা উল্টানোর চেষ্টা করেন। গ্রামেও যাত্রা, নাটক করেছিরেন। তবে পূর্নাঙ্গভাবে চর্চা বুঝতেন না। সেগুলো চর্চা এখন জীবনকে অনেক আনন্দ দেয়। সেই যাত্রা, নাটকগুলো অবশ্য স্কুল অনুষ্ঠানে করেছিলেন প্রতি বছর। যেমন: আবির ছড়ানো মোর্শিদাবাদ, অনুসন্ধান, এই পৃথিবী টাকার গোলাম, সাঁখা দিওনা ভেঙ্গে, জেল থেকে বলছি, লোহার জাল, মন্দির থেকে মসজিদ, গরীবের ছেলে, প্রেমের সমাধি তীরে ইত্যাদি।
শাহারিয়ার চয়নের সাড়া জাগানো ফ্লাশ মব দিয়ে টি- ২০ বিশ্বকাপ এর বাতিক্রমধর্মী এবং আকর্ষনীয় ভিডিওতে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চে তিনি অভিনয় করেছেন। কন্ঠশিল্পী সোহেল এসকে ও রুলিয়া সুলতানার যৌথ মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘হারিয়ে তোমায়’ এতে মডেল হয়েছেন ড্রিম মেকিং প্রোডাকশনের ব্যানারে। মিউজিক্যাল ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন শাহারিয়ার চয়ন। পরিচালক বসন্ত বাশার এর চারুকলা বিভাগের প্রাচ্যকলা গ্রুপের ‘ওয়াশ পেইন্টিং’ নিয়ে একটি ডকুমেন্টরীতে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। যা বিটিভি চ্যানেলে প্রচার হয়েছে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৬ তারিখে রাত ১০টা ৫০মিনিটে। ছোটথেকেই নাটক ভালো লাগতো। নাটক থিয়েটার দেখতাম।যাত্রায় কাজ করতে ইচ্ছে হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে নাটকের প্রতি ভালো লাগা।
খ্যাতনামা নাট্য পরিচালক শিমুল সরকার সম্পর্কে বলেন, ময়েজ পাগলা চরিত্রের জন্য তিনি আমাকে কাদা মাখিয়ে দিচ্ছেন। আমি অঝোরে কাঁদছিলাম। আমি ফিরে গিয়েছিলাম ছোটবেলায়। আমি আনন্দিত। আমাকে এধরণের চরিত্র দেয়ায় আমার গুরু শিমুল সরকার হিসেবে আমি চিরকতৃজ্ঞ। আমি ইউনিটে খেলাম কিনা। মনখারাপ কেন। তিনি সবকিছুর খোজখবর রাখতেন। তিনি আরো বলেন, মা-বাবার পরে শিমুল সরকার হলো আমার নাটকের পথপ্রদর্শক। পেশাজীবনে ছাত্র পড়ায়, কিন্তু আমার ধ্যানজ্ঞান হলো নাটক।
তার বাবার নাম মোঃ কমর উদ্দীন শাহানা, মাতা মনোয়ারা বেগম। তিনি পেশায় কলেজ শিক্ষক ও অভিনেতা। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর পার্শ্বে পাঁজর ভাঙ্গা গ্রামে তার জন্ম। তার স্কুল জীবন নিজ গ্রামে, হাইস্কুল জীবন চকউলী বহুমূখী উচ্চবিদ্যালয়। তারপর গ্রামবাসী, আত্মীয়-স্বজন এবং স্কুল শিক্ষকের উৎসাহে তার আর্ট কলেজে পড়ার আগ্রহ জন্মায়। চলে আসেন রাজশাহীতে, ইউনিভার্সিটির পাশ্বেই ছিল চারুকলা মহাবিদ্যালয়। পরে মহাবিদ্যালয়টিকে তারা আন্দোলন করেন ইউনিভার্সিটিতে আত্মীকরণ করেন। সেখান থেকে বি,এফ,এ এবং এম,এফ,এ পাস করেন। এখন চাকরীর সুবাদে রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে কম্পিউটার গ্রাফিক্স বিষয়ের শিক্ষক।। বর্তমান নিবাস রাজশাহী মহানগরীর বর্নালীর মোড়ের পিছনে হেতেম খাঁস্থ গ্রীন গার্ডেন টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের পার্শ্বে।