পৌরসভা নির্বাচন : ক্ষোভ আর অভিমানে পরিবর্তন চায় গোলাপগঞ্জ পৌরবাসী
মাহবুবুর রহমান চৌধুরী: পরিচ্ছন্ন শহর আর উন্নত নাগরিক সেবার স্বপ্ন দেখিয়ে পরপর দুইবার ভোটারদের মন জয় করে নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও উপজেলা আওয়ামীলগের বর্তমান প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলু। রাজনীতিতে বয়সে এক তরুনকে নির্বাচিত করে যে সম্মান দেখিয়েছিলো গোলাপগঞ্জের জনগন তার প্রতিদান দিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কথিত আছে জাতের বিবেদ তৈরী করে ২বার নির্বাচনী বৈতরনী পার হয়ে তার (মেয়র পাপলু) মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ক্ষমতার অহংকার আর টাকার নেশা পেয়ে বসে পাপলুকে ফলাফল সিলেটের প্রথম শ্রেনীর গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় এবার পরিবর্তন চান ভোটাররা। এদিকে ‘মরার উপর খড়ার ঘা’ এর মত নতুন করে আলোচনায় এসেছে স্থানীয় সরকার সিলেট বিভাগের পরিচালক কর্তৃক গোলাপগঞ্জ পৌরসভার অফিস পরিদর্শন প্রতিবেদন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এই প্রতিবেদনে ৪বছরে প্রায় সাড়ে ৫কোটি টাকার অনিয়ম শনাক্ত করে ৩২টি অডিট আপত্তি দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এছাড়া প্রতিবেদনে পৌরসভায় চরম আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে এবং প্রায় সবকটি আপত্তিতে সরাসরি মেয়র পাপলু ও নির্বাহী প্রকৌশলী যুগেশ্বর চ্যাটার্জীর নিকট জবাব জানতে চাওয়া হয়েছে (সূত্র: ৪৬.৬০.০০০.০০৭.১৬.০৪৬.০৫.১৮২-৭,তাং ২জুন২০১৫ স্থানীয় সরকার শাখা সিলেট বিভাগ)। এসব বিষয় প্রকাশ্যে আসায় পরিবর্তনের আওয়াজ ভিত্তি পেয়েছে। গত ২৬মে মাসে সিলেট শহরে একটি সংবাদ সম্মেলন শেষে কথা হয় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জমির উদ্দিনের সাথে। কথা প্রসংগে পৌরকর্তৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি তখন বলেছিলেন “মৃত্যুর পূর্বে দেখে যেতে চাই গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় পরিবর্তন এসেছে।” তিনি তখন আরো বলেছিলেন গোলাপগঞ্জের প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা রোজগার করে চায় দেশে বিনিয়োগ বা বাসা বাড়ী তৈরী করতে সেই ক্ষেত্রে তাদের পছন্দ গোলাপগঞ্জ পৌর শহর; কিন্তু পদে পদে নাগরিক হয়রানী আর হোল্ডিং করের নামে মনগড়া নোটিশ দিয়ে প্রবাসীদের হয়রানী অব্যাহত থাকলে বিনিয়োগে নিরুৎসাহীত হয়ে পড়েন প্রবাসীরা। এসব কথা বলার দুই সপ্তাহ পরে জমির উদ্দিন চলে গেছেন পরপারে কিন্তু তার পরিবর্তনের আওয়াজ আজ বাঁধ ভাংগা ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়েছে ভোটারদের ঘরে ঘরে। এবার প্রকাশ্যে ভোটাররা বলে বেড়াচ্ছেন ‘পরিবর্তন চাই’। কাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চান এরকম প্রশ্নের সোজাসোজী উত্তর না দিয়ে বেশীরভাগ নাগরিক বলেছেন ‘পরিবর্তন চাই’। কিছুদিন আগে কথা হয় ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজমল হোসেনের সাথে তিনি বলেন, অতীতে সাম্প্রদায়ীক বিবেদ তৈরী করে আমাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবার দলমত নির্বিশেষে পরিবর্তন চাই। পৌর শহরের অন্তত ১০জন ব্যবসায়ী তাদের ট্রেডলাইসেন্স ও হোল্ডিং কর নিয়ে হয়রানির কথা তুলে ধরে পরিবর্তনের কথা বলেন। বর্তমান মেয়র পাপলুর পশের বাড়ীর বাসিন্দা ও স্থানীয় মাদ্রাসা শিক্ষক এম আব্দুল জলিল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি এমন মেয়র পাপলু নিজ ওয়ার্ডের ভোটের সেন্টারে পাশ করবেন তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছেনা । ভোটারদের মনে কাজ করছে কাংখিত নাগরিক সেবা না পাওয়ার হতাশা আর চাপা ক্ষোভ। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদ প্রাথী হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন সাবেক পৌর প্রশাসক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল জব্বার চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেল, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন, বর্তমান সভাপতি মশিকুর রহমান মহি, স্বতন্ত্র প্রার্থী সমাজসেবী আমিনুর রহমান লিপন, এম সি একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস আমিনুল ইসলাম আমিন। পরিবর্তনের এই সুরে সিরাজুল জব্বার চৌধুরী, আমিনুর রহমান লিপন, আমিনুল ইসলাম রাবেল সমানতালে প্রচারনা চালাচ্ছেন তাদের থেকে পিছিয়ে আছেন বর্তমান মেয়র পাপলু ও অন্যান্যরা। গোলাপগঞ্জ পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ছালিক আহমদ চৌধুরী জানান, “বৃটিশ শাসনামল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাম্প্রদায়ীকতা একটি ইস্যু হিসেবে কাজ করত; এবার নতুন নিয়মে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে ফলে সাম্প্রদায়ীক ইস্যু কাজ করবেনা, নতুন সমীকরনে পরিবর্তন বেছে নিবে সবাই।” মেয়র প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুীর জানান, “আমি নির্বাচিত হলে নাগরিকদের উপর থেকে হোল্ডিং করের বোঝা নামিয়ে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসবো এবং হোল্ডিং কর দেয়া হয়নি অজুহাতে নাগরিক সেবা প্রদানে কোনো হয়রানী করা হবেনা।” আমিনুর রহমান লিপন বলেন, যারা জনগণের টাকা দিয়ে নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত তাদেরকে এবার ভোটার কাছে টানছেনা। তিনি আরো বলেন “আমি নির্বাচিত হলে প্রতিটি ওয়ার্ডের নাগরিকদের সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে, অতীতের মত ভোট না দেওয়ার অজুহাতে কাউকে হয়রানী কিংবা বঞ্চিত করা হবেনা।” এদিকে পরিবর্তনের হাওয়ায় ৯টি ওয়ার্ডের ১১জন (সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড ৩টি) কাউন্সিলরের মধ্যে দুই একজন ব্যাতিত এবার নতুন মুখ নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাউন্সিলর পদে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৬জন করে প্রার্থী রয়েছেন। অপর দিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানাগেছে, নভেম্বরে মাঝামাঝি নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা করে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। পৌরসভা গঠনের পর ২০০২সালের মার্চ মাসে প্রথম বার ও ২০০৮ সালের মে মাসে ২য় বারের মত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে দুই বছর আগে কিন্তু নির্বাচন হয়নি তাই চাপা ক্ষোভ থাকলেও ব্যাপক উৎসাহ আর উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে পৌরবাসীর মনে।