আজ দুর্গা পূজা : সিলেট নগরীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল উৎসব শুরু হচ্ছে আজ থেকে। আনন্দমুখর পরিবেশে ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে উৎসব চলাকালীন এবং এর আগে-পরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। এবার সিলেটে মোট ৫৮৩ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগরীর ৬১ টি মণ্ডপে ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫২২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ব্যস্ততা বাড়ছে প্রতিমা শিল্পীদের। দুর্গার প্রতিমা নির্মানে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা। প্রতিমায় শেষ মূহুর্তের রং তুলির আচড় দিতে ব্যস্ত তারা। আর এ উৎসবকে ঘিরেই পূণ্যার্থীসজ্জনদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতেই চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। নগরীর পূজা মণ্ডপগুলোতে মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা পরিদর্শন করবেন, থাকবে মোবইল টিম ও স্থায়ী ফোর্স।
সিলেট মহানগরের পাশপাশি সিলেট জুড়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা সম্পন্নের জন্যও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সিলেট জেলা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে আনসার সদস্যরা পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা দিবেন। নগরীতে র্যাব-৯ ও বিজিবি সদস্যদের টহল থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের বড়লেখায় দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাংচুর করে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দদের। বৃহস্পতিবার সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যেগে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দদের সাথে বৈঠক ও সার্বজনীন পূজা মণ্ডপগুলোতে অনুদান প্রদান করার কথা রয়েছে বলে সিলেট। এ বৈঠকেও পূজার নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনা ও পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানগেছে।
সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, পূজার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজোকে ঘিরে সবার মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসবমুখর পরিবেশেই এবারের পূজো সম্পন্ন হবে। দুর্গার আরধনার মাধ্যমে অসুর শক্তির বিনাশ ঘটবে।
সিলেট জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সিলেট জেলায় সার্বজনীন ও পারিবারিক ৫৮৩ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে মহানগরীতে মণ্ডপ রয়েছে ৬১ টি যার মধ্যে সার্বজনীন ৪৩টি ও পারিবারিক পূজা ১৮টি, সদর উপজেলায় ৫১টি, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় ২৯টি, গোলাপগঞ্জে ৬২টি, বালাগঞ্জে ২৯টি, ওসমানীনগরে ৩০টি, কানাইঘাটে ৩৩টি, জৈন্তাপুরে ১৯টি, বিশ্বনাথের ২৪টি, জকিগঞ্জে ৯৪টি, গোয়াইনঘাটে ৩৩, বিয়ানীবাজারে ৫৩, কোম্পানীগঞ্জে ২৬টি ও ফেঞ্চুগঞ্জে ৩৯টি পূজামণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৬টি মণ্ডপ বেড়েছে।
সিলেট জেলার পূজা মণ্ডপগলোতে নিরাপত্তার ব্যাপারে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) সুজ্ঞান চাকমা বলেন, দুর্গাপূজায় সিলেট জেলার পূজা মণ্ডপ গুলোতে যাতে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার সকল থানার ওসিদের এ ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের পর্যাপ্ত ফোর্স থাকবে। এছাড়া উর্ধতন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক পূজোর নিরাপত্তার বিষয়টি মনিটরিং করবেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন বলেন, সিলেট মহানগরীতে পূজা মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা দিতে চার স্তরের নিরাপত্তা প্ল্যান করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ। পূজা মণ্ডপগুলোর আকার বিবেচনায় নিরাপত্তার দায়িত্বে স্থায়ী ফোর্সের সংখ্যা নির্ধারিত হবে। এছাড়াও থাকবে পুলিশ কমিশনারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করবেন এবং মনিটরিং করবেন। আশা করছি সকল ধর্মের লোকজন পূজার আনন্দ ভাগাভগি করতে এতে অংশ নেবেন ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা জানান, এবার ২২ ও ২৩ অক্টোবর দু’দিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনির সদস্যরা প্রতিমা বিসর্জনসহ ১৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠী অনুষ্ঠান থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন।