প্রথম শ্রেণীর গোলাপগঞ্জ পৌরসভা : বর্জ্য গর্ত আর দূর্ভোগের শহর!
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি: যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলায় মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার পরিবেশ। আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় পৌরশহরের যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা সহ সুরমা নদীতে বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ ও নদী দূষিত হচ্ছে। সেই সাথে মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলোর জরাজীর্ন অবস্থা। এ যেন বর্জ্য আর ভাঙ্গা সড়কের শহর গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ! পৌরশহরের ৪নং ওয়ার্ডের সরস্বতী সুরমা ডাইক রোড দিয়ে গোলাপগঞ্জ বাজারে আসেন পৌরসভার ৩টি গ্রামের ও পার্শ ¦বর্তী বাঘা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার লোক । এই এলাকায় রয়েছে সরস্বতী মহিলা মাদ্রসা , হাজী জছির আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলাশাহ মোকাম মসজিদ , গাংপার জামে মসজিদ , কামারগাঁও জামে মসজিদ। সড়ক মেরামত না করায় এই সড়ক দিয়ে বর্তমানে রিকশা নিয়ে যাতায়াত কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। পৌরসভার অভ্যন্তরে গোলাপগঞ্জ জামেয়া ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক , ঘোগারকুল মাঝপড়া হয়ে এরাল বিল মুখি সড়ক , ঘোগারকুল দক্ষিন ও মাঝপাড়া গ্রামের শেষাংশ. নয়াগ্রাম সড়ক , নিজগঞ্জ সড়ক , গোলাপগঞ্জ বাজার বাইপাস সড়কসহ অনেক সড়ক মেরামত ও পিচ ঢালাই না করায় জনদূর্ভোগ তৈরী করছে। সরেজমিন গোলাপগঞ্জ পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে পৌর শহরের বাসা- বাড়ি , রেস্টুরেন্ট ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ্যে ও লুকিয়ে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হয়। গোলাপগঞ্জ বাজারের বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল আহাদ জানান , ১ম শ্রেনীর পৌরসভা বলে পৌরকর্তৃপক্ষ গর্বের সাথে তা প্রচার করে কিন্তু আবর্জনা অপসারন করা দূরে থাক গত ১৩ বছরে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারন করতে পারেনি এমনকি এবিষয়ে কোন তদারকি নেই। মাঝে মধ্যে বণিক সমিতির পক্ষ থেকে বাজারের বর্জ্য পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উত্তর বাজারের ব্যবসায়ী দুলু আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিবছর হোল্ডিং ট্যাক্সের সাথে সমান হারে ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের রেইট হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা সাধারন মানুষের নিকট থেকে আদায় করে পৌরসভা , বাস্তবে কোনদিন এসব আবর্জনা পরিস্কারে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কেউ আসেনা। অপরিকল্পিত ড্রেন আর যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় পানি নিস্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে বর্ষা মৌসূমে জনদূভোর্গ মারাত্মক আকার ধারন করে। ২০১৩ সালে ১ম শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে এই পৌরসভার উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার যার তথ্য অনুযায়ী পৌরসভায় কৃত্রিম পাকা ড্রেন ১৭. ৮৪ কি. মি , কৃত্রিম কাঁচা ড্রেনঃ ৬. ১৭ কি. মি , প্রাকৃতিক নদী /খালের দৈর্ঘ্য ৬. ৫৮ কি. মি , প্রাকৃতিক নদী/ খালের এলাকা ১৫২. ৩৬ একর। যোগাযোগ করা হলে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নগর সমন্ব কমিটির(টিএলসিসি ) সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান , “ ২০ বছর মেয়াদী উন্নয়ন মহা পরিকল্পনার পানি নিষ্কাশন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা অধ্যায়ের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল ও প্রস্তাব অংশে উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৯টি ওয়ার্ডে ৯ টি বর্জ্য স্থানান্তরের স্থান প্রস্তাব করা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট ওয়ার্ড হতে ভ্যানের মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা বর্জ্য স্থানান্তরের স্থানে নিয়ে অস্থায়ীভাবে রাখা হবে। সেখান থেকে পৌরসভার ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য ফেলার স্থানে নিয়ে ফেলা হবে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য ফেলার (ডাম্পিং স্টেশন ) স্থানটি পৌরসভার বাহিরে অবস্থিত হবে। ১ম শ্রেনীর পৌরসভা হলেও বাস্তবে তার কোনটিই নেই। বর্জ্য অপসারনের জন্য দুটি গার্ভেজ ট্রাক থাকলেও তা ব্যবহৃত হয় মেয়রের ব্যাক্তিগত ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারী কাজে। ” এবিষয়ে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খানঁ জানান , মেয়র কারো কোন পরামর্শ গ্রহন করেননা , নিজের ইচ্ছেমত সব পরিচালনা করেন। গত বুধবার বিকালে সরেজমিন পরির্দশনে দেখা যায় ১নং ওয়ার্ডের গোলাপগঞ্জ কদতমলী খাদ্য গুদামের সীমানা প্রচীর ঘেষে কয়েকটি পরিত্যক্ত ডাস্টবিন পড়ে রয়েছে এছাড়া পৌরশহরের আর কোথাও কোন ডাস্টবিন দেখা যায়নি। গোলাপগঞ্জ এমসি একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান , স্কুল কলেজ ছুটির পর ফুটপাত দিয়ে প্রায় ১ হাজার ছাত্র- ছাত্রী হেটে হেটে বাড়ী ফেরে কিন্তু ফুটপাতের আশেপাশে ময়লা আবর্জনা ফেলায় দূর্গন্ধে চলাচল করতে বমি আসে তাই মুখে ওড়না বা রুমাল দিয়ে এসব এলকায় চলাচল করেন তারা। একই অবস্থা পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত গোলাপগঞ্জ উত্তরবাজার সুরমা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকা , গোলাপগঞ্জ কাচাঁবাজার সংলগ্ন সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকা , গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পর্শ্ববর্তী সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কেলাশটিলা গ্যাসকূপের মসজিদ সংলগ্ন এলাকা সহ ৫নং ওয়ার্ডের সিলেট জকিগঞ্জ সড়কের দাড়ীপাতন এলাকা। দাড়ীপাতন এলাকার রহমানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলকায় একটি জমিতে ময়লা – আবর্জনা ফেলে নীচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। এই জমি টিকরবাড়ী এলাকার জনৈক কাদির এর নিকট থেক ক্রয়সূত্রে পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু মালিক বলে জানাগেছে। এই এলাকায় একটি মাদ্রাসা সহ রয়েছে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্টান। চলতি বছরে ২২ এপ্রিল গোলাপগঞ্জ পৌরসভার অফিস পরিদর্শনে আসেন যুগ্ম সচিব মর্যাদার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা । পরিদর্শন করার পরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত প্রতিবেদনের ৫ম পৃষ্ঠার ১৯ ( খ) নং প্যারায় তিনি উল্লেখ করেন “ এ (গোলাপগঞ্জ ) পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন- ভাতার রেজিস্টার পরীক্ষান্তে দেখা যায়, পরীচ্ছন্নকর্মীদের বেতন দৈনিক ২৩০ , ২০০ এবং ১৮০ টাকা ভিন্ন ভিন্ন হারে প্রদান করা হচ্ছে। পরিচ্ছন্নকর্মীদের কোন হাজিরা খাতা নেই। হাজিরা খাতা না থাকার কারনে তাদের উপস্থিতি / অনুপস্থিতির বিষয়টি বুঝা গেলনা। পরিচ্ছনা কর্মীদের ভিন্ন ভিন্ন হারে বেতন প্রদানের বিধি সহ কারন জানানোর জন্য পৌরসভা সচিব’ কে অনুরোধ করা হলো।” এসব বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় একটি দৈনিককে মেয়র পাপলু বলেন বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলেই রাস্তার মেরামত শেষ হবে। এদিকে উল্লেখিত প্রতিবেদনের সার্বিক মন্তব্য অংশে ২০ (১ ) ও ( ৮) নং প্যারায় পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী যুগেশ্বর চ্যাটার্জীকে প্রশাসনিক, আর্থিক এবং অন্যান্য বিষয়ে অনভিজ্ঞ উল্লেখ করে তাকে অন্যত্র বদলি করে অভিলম্বে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীকে পদায়ন করা এবং ৩ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম গঠন করে পৌরসভার বিভিন্ন খাতে অনিয়ম চিহ্ণিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান পৌর পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও কিভাবে বর্তমান মেয়র পাপলু দ্বায়ীত্ব পালন করছেন তা স্পষ্ট নয় উল্লেখ করে জরুরী ভিত্তিতে পৌরসভা নির্বাচনের সুপারিশ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।