সিলেটে রাতের আধারে টেলিফোন লাইনের ক্যাবল চুরির হিড়িক (ভিডিও)

Sylhet BTCLসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেট নগরীতে টেলিফোন লাইনের ক্যাবল চুরির হিড়িক পড়েছে। গত এক মাসে প্রায় ১২শ মিটার ক্যাবল চুরি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার মতো হবে বলে জানিয়েছেন বিটিসিএল’র (বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস্ কোম্পানি লিমিটেড ) কর্মকর্তারা। এতে নগরীতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অন্তত সাড়ে পাঁচশ গ্রাহকদের টেলিফোন। যার কারনে দূর্ভোগ পুহাতে হচ্ছে গ্রাহকদেরকে। এ ঘটনায় থানায় একটি নয় চারটি মামলা করলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ বলছে, যারা টেলিফোনের লাইন সংযোগ দিচ্ছে, তারাই লাইন চুরি করছে।
বিটিসিএল সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫টি টেলিফোনসহ সিলেট নগরী ও নগরীর আশপাশে ৫৫০টি টেলিফোন বিকল রয়েছে। গত মে মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৪৫ দিনের ব্যবধানে জিন্দাবাজার ম্যানহোল থেকে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সামনের ম্যানহোল পর্যন্ত ৩শ মিটার দূরত্বের দুই বার মাটির নিচ থেকে ক্যাবল চুরি করা হয়। ওই ক্যাবলগুলো ১২শ পেয়ারের ছিল। একই এলাকায় ৯শ পেয়ার ক্যাবল লাগিয়ে গ্রাহকদেরকে সেবা দেয়া শুরু করে টেলিফোন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তৃতীয় বার ৯শ পেয়ারের ওই ক্যাবলও চুরি করা হয়। সর্বশেষ গত ২৩ জুন পাটানটুলার সাজিদালি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ৩শ মিটার দূরত্বের ৯শ পেয়ার ক্যাবল চুরি করা হয়। টানা চারবার মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে টেলিফোনের ক্যাবল চুরি হওয়ায় সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, চৌহাট্টা, হাওয়াপাড়া, তাতিপাড়া, মিরবক্সটুলা, কুমারপাড়া, কাজিটুলা, ঝর্ণারপাড়, সুবিদবাজার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মার্কেট আখালিয়া, টুকেরবাজারসহ নগরীর অধিকাংশ এলাকায় প্রায় সাড়ে ৫শ টেলিফোন লাইন বিকল রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোর কথা বিবেচনা করে বিকল্প ব্যবস্থায় ১শ টি টেলিফোনের লাইন সচল করা হলেও এখন নগরী ও নগরীর আশপাশে সাড়ে ৫শ টেলিফোন লাইন বিকল রয়েছে। টেলিফোনের ক্যাবল চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা কোতোয়ালি থানায় চারটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এদিকে, টেলিফোনের ক্যাবল চুরির ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশ ও টেলিফোন কর্তৃপক্ষের ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, টেলিফোনের ক্যাবল তাদের কাছেই মূল্যবান যারা রাতে কাজের নামে মাটির নিচ থেকে ক্যাবল চুরি করে। কিছুদিন আগে নগর পুলিশ রাতে কাজ করা অবস্থায় সন্দেহজনকভাবে কয়েকজনকে আটক করে।
তারা বিটিসিএল এর কোনো পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। তবে তাদেরকে বিটিসিএল সিলেট আঞ্চলিক অফিস কর্তৃপক্ষ ছাড়িয়ে নিয়ে যান। বিটিসিএল সিলেট আঞ্চলিক অফিসের সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ আহমদ চৌধুরী জানান, দেড় মাসের মধ্যে টানা চারবার ক্যাবল চুরি হয়। আমরা মামলাও করি। কিন্তু পুলিশ কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি। তিনি বলেন, সর্বশেষবার মামলা করতে গেলে কোতোয়ালি থানার ওসি মামলা নিতে চাননি। তিনি আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। আমাদেরকে সন্দেহ করে বলেন, আমরাই নাকি এসব ঘটনা ঘটাচ্ছি। পরে আমরা পুলিশ কমিশনারকে বিষয়টি অবহিত করি।
এসএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা তাদেরকে সন্দেহ করছি যারা রাতে টেলিফোনের লাইনে কাজ করেন। মাটির নিচে কিভাবে লাইন লাগাতে হয় আর কিভাবে লাইন কাটতে হয় তা বিটিসিএলের রাতের শ্রমিকদের চেয়ে আর কেউ ভালো জানার কথা নয়। ক্যাবল চুরির ঘটনায় তাদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে, আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
শাবির প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের টেলিফোনের লাইন বন্ধ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই শাবি ক্যাম্পাসের অনেকগুলো লাইন বিকল হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে বিটিসিএল আমাদের আম্বরখানা ও মদিনামার্কেট এলাকায় টেলিফোনের তার চুরির বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত এর সমাধান নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও এখনও তার কোনো সুরাহা হয়নি। ঈদের পরে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, ঢাকা অফিস থেকে নতুন তার কেনার বিল অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে, তবে কবে নাগাদ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। শাবি ক্যাম্পাসের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন বিকল থাকায় দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

https://www.youtube.com/watch?v=E9F-56WuLGU&feature=youtu.be