এই লজ্জা শুধু সিলেটবাসীর নয় পুরো দেশের!
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ‘হাসন রাজা একাডেমীর নাম পরিবর্তন লজ্জার এবং অপমানের। এই লজ্জা শুধু সিলেটবাসীর নয় পুরো দেশের। নাম পরিবর্তন করে দেশ খ্যাত মরমী সাহিত্যের এ প্রবাদ প্রতিম নাম হাসন রাজাকে নিগ্রীহিত করা হয়েছে। যা ইতিহাস বিকৃতির শামিল।’
হাসন রাজার নামে নির্মিত হাসন রাজা একাডেমীর নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধনে সিলেটবাসী এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেছেন। বুধবার বিকেল ৪টায় হাসন রাজা পরিষদ আয়োজিত সিলেট কন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রঙ্গনে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে সিলেটের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘বিশ্বের সংস্কৃতিমনা মানুষসহ বাংলাদেশের সর্বস্তরে পরিচিত সুনামগঞ্জের মরমীকবি হাসনরাজা একজন কৃতিপুরুষ। সুনামগঞ্জে হাসন রাজার মরমী সাহিত্য কীর্তি ও স্মৃতি রক্ষার্থে এ অঞ্চলের অন্যান্য লোক কবিদের অবদান তুলে ধরার লক্ষ্যে সরকার হাসন রাজা একাডেমী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন।’
‘হাসন রাজাকে সম্মান জানিয়ে সর্ব প্রথম একটি একাডেমী স্থাপনের বীজ বুনেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাসন রাজা একাডেমী তৈরীতে ১৯৭৫ সালে ২৫ হাজার টাকা অনুদান করেছিলেন তিনি। এর ফলশ্র“তিতে ২০০৪ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবনা আকারে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। সংশোধিত দ্বিতীয় প্রকল্প পত্রটি তৈরী হয় ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী হাসন রাজা একাডেমী নির্মাণের একটি প্রস্তাব একনেকে পেশ করলে তা অনুমোদিত হয়।’
বক্তারা বলেন, ‘হাসন রাজা একাডেমী নির্মানের জন্য ২০১১ সালে উক্ত প্রকল্পের কাজ সরকার হাতে নেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক কামাল লোহানীর অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজ শুরু হয়। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারীতে অনুষ্টিত হাসন রাজা লোক উৎসবে প্রধান অতিথির ভাষনে কামাল লোহানী হাসন রাজা একাডেমী নির্মান কাজ শুরু করার কথা হাজার হাজার জনসাধারনের সামনে ঘোষণাও দেন।’
‘হাসন রাজা এখাডেমী নামে একনেকের সভায় প্রকল্প অনুমোদন, অর্থ মন্ত্রনালায় থেকে অর্থ বরাদ্ধ, প্লেনিং কমিশনে প্লেন পাশ, জেলা পরিষদ থেকে হাসন রাজা একেিডমীর নামে ভূমি বরাদ্ধ এবং হাসন রাজা একাডেমীর নামেই কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়। দীর্ঘ ৭টি বছরে নির্মাণ কাজ শেষে হাসন রাজা একাডেমীর ভবন যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় তখন হাসন রাজা একাডেমী বদলে তা শিল্পকলা একাডেমী করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে একটি মহল।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘হাসন রাজা একাডেমী শেষ মুহূর্তে এসে নাম পরিবতর্ন হয়ে যাচ্ছে এমন খবরে সিলেটবাসী তথা সারা বাংলাদেশের মরমী সাহিত্য প্রেমীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এই পরিবর্তনকে বাংলার মরমী সাহিত্যেও প্রবাদ পুরুষ হাসন রাজাকে অপমানেরই শামিল বলে মনে করছেন অনেকে।’ তাই হাসন রাজা একাডেমীর নাম বহাল রেখে এর উদ্বোধন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান মানববন্ধনে উপস্থিত ব্যাক্তিরা।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত ছিলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতথ্য বিভাগের প্রধান মাজহারুল ইসলাম, কবি শুভেন্দু ইমাম, হাসন রাজা পরিষদের সেক্রেটারী সামারীণ দেওয়ান, প্রভাষক দেওয়ান মাহমুদ রাজা, হাসন রাজা পরিষদের নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম রোকন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সিলেটের সেক্রেটারী আব্দুল করিম কিম, সংস্কৃতি কমী ধ্রুব গৌতম, আবিদ ফয়সল , কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সিলেট আর্ট স্কুলের প্রধান নির্বাহী আব্দুল বাতিন, চৈতণ্য প্রকাশক কবি রাজিব চৌধুরী, বাউল কালা মিয়া প্রমুখ।