আত্মগোপনে থেকে অস্ত্র জমা দিলেন এমপি লিটন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সৌরভকে গুলি করার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। গুলির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা সুন্দরগঞ্জ। প্রতিবাদে রাজপথে মিছিল, বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে এলাকাবাসী। এ অবস্থায় সুন্দরগঞ্জে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। ঘটনার পর থেকে এমপি’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের বৃহৎ একটি অংশ। মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের আগ্নেয়াস্ত্র দুটি থানায় জমা দিয়েছেন তার স্ত্রী খুরশীদ জাহান। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে পিস্তল এবং শর্টগান সুন্দরগঞ্জ থানায় জামা দেয়া হয়। ওদিকে গতকাল বিকেলে শিশুর পিতা সাজু মিয়া বাদি হয়ে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
অপরদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জ মণ্ডলেরহাট নামক স্থানে জনসভার আয়োজন করে স্থানীয় গ্রামবাসী। তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করে বলেন, একজন সংসদ সদস্য সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে চোর-ডাকাতরা কি করবে। বক্তারা বলেন, জনসমক্ষে আসতে হবে এমপিকে । তিনি শুধু নিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করেননি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। আমরা তার বিচার দাবি করছি ।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) জিন্নাত আলী জানান, এমপি লিটনের সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের বাড়িতে র্যাব ও পুলিশ কয়েকবার গেলেও বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, শুনেছি এমপি ঢাকায় গেছেন। তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই মিলটন জানান, ঘটনার পর থেকে এমপি ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।
স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান, এমপি লিটন দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন অপকর্ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। লিটনের এমন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরাও ক্ষুদ্ধ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ বলেন, ঘটনাটি ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়। পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আহসানুল করিম চাঁদ বলেন, অন্যায়কারীকে শাস্তি পেতে হবে। কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বলেন, ঘটনাটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না। উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিষ্ণুরাম রায় জানান, ঈদের দু’দিন আগে ২২শে সেপ্টেম্বর ভোররাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে প্রবেশ করে ওয়ার্ডবয় মাহমুদুল হাসান মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এমপি। এ সময় মামুন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ায় প্রাণে রক্ষা পায়।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গোলাম কবির জানান, ওই সংসদ সদস্য নিজে তার নির্বাচনী এলাকার কোন উন্নয়ন কাজের তদারকি করেন না। সরকারের দেয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ নানা বরাদ্দ, সুযোগ-সুবিধা এবং সবরকম কাজের নিয়ন্ত্রণ করেন তার স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং চিহ্নিত কয়েকজন দালাল।
সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল্যাহ আল-মামুন মানবজনিমকে জানান, প্রায় ১০ বছর আগে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন পারিবারিকভাবে কত টাকা এবং কত বিঘা সম্পদের মালিক ছিল, আর আজকের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের অর্থ-সম্পদের হিসাব মেলাবে কে?
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভোরে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি নিয়ে নিজ বাড়ি বামনডাঙ্গা থেকে সুন্দরগঞ্জ আসেন। সারারাত সুন্দরগঞ্জে কাটিয়ে বামনডাঙ্গা যাওয়ার সময় ব্র্যাক মোড়ের পশ্চিম পাশের গোপালচরণ কালাইয়ের ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার পার্শ্বে হাঁড়িপাতিল ব্যবসায়ী সাজু মিয়ার ছেলে গোপালচরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভ ও তাজুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে গাড়িতে উঠতে বলেন। কিন্তু তারা ভয়ে গাড়িতে না উঠে দৌড়ে পালাবার চেষ্টা করলে এমপি লিটন তাদের লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। এতে সৌরভের দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সৌরভ বর্তমানে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫নং ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মানব জমিন