তাহিরপুরে ঠেকানো যাচ্ছে না সীমান্ত চোরাচালান
কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ও নদীতে ডুবে ৬জনের মৃত্যু
তাহিরপুর প্রতিনিধি: ঈদকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালানীরা। সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে কয়লা,চুনাপাথর,কাঠ,গাছ ও ঘোড়া। এতেই ক্ষান্ত নয় চোরাচালানীরা। সিন্ডিকেডের মাধ্যমে পাচাঁর করছে সর্বনাশা মাদক ইয়ারা,হেরুইন,যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট,মদ,গাঁজা ও অস্ত্র। জানাযায়,ইতিমধ্যে কয়লা চোরাচালান করতে গিয়ে লালঘাট সীমান্তের গুহায় চাপা পড়ে ১যুবক ও লাকমা সীমান্তে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বিএসফের তাড়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে আরো ২শ্রমিকের। চোরাচালান করতে গিয়ে বিএসএফের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল খেঠেছে অনেক নিরীহ মানুষ। তবে সম্প্রতি লাউড়েরগড় সীমান্ত থেকে ৮টি ঘোড়া,বড়ছড়া থেকে ইয়াবাসহ ১মাদক ব্যবসায়ী ও বুরুঙ্গাছড়া থেকে অস্ত্রসহ ১ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও বিজিবি।
এলাকাবাসী জানায়,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য সুনামগঞ্জ ৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে করছেন সভা-সমাবেশ। তিনি চোরাচালান প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখলেও শুধুমাত্র সীমান্তে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চোরাচালানীরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। বর্তমানে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন যাদুকাটা নদী দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে অবাধে আসছে কয়লা,মদ,বিড়ি ও গাছ। এছাড়া এই সীমান্তের বারেকটিলা,দশঘর,পুরান লাউড়,উত্তর মুকশেদপুর এলাকা দিয়ে ঘোড়া,মদ,গাজা,বিড়ি ও হেরুইন পাচাঁর করে বিন্নাকুলি ও কামড়াবন্দ গ্রামের চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে নিয়ে মুজদ করা হয়। পাচাঁরকৃত প্রতিটি ঘোড়া থেকে ৩হাজার টাকা,প্রতি গাছ থেকে ১হাজার টাকা,কয়লার বস্তা থেকে ১০০টাকা ও মদ,গাঁজা,বিড়ি,হেরুইন থেকে সপ্তাহিত ১০হাজার টাকা হারে বিজিবি ক্যাম্পের চাঁদা উত্তোলন করছে ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে লাউড়েরগড় গ্রামের নুরু মিয়া,নবীকুল,এজাদ মিয়া ও সাখাওয়াত হোসেন। অন্যদিকে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চানপুর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নয়াছড়া জিরো পয়েন্ট থেকে চোরাচালানী সম্্রাট মিয়া,আবুল কালাম,লাল মিয়া,নাজমুল ও আবু বক্করের নেতৃত্বে চুনাপাথার পাচাঁরের পর ট্রলিতে করে বারেকটিলার ছিলাবাজার সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর তীরে অবস্থিত উত্তর বড়দল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের চাচাত ভাই চোরাচালানী আব্দুল গফ্ফারের মিলে নিয়ে প্রথমে মজুত করা হয়। পরে সেই চুনাপাথর মেশিনে ভেঙ্গে নৌকা বোঝাই করে যাদুকাটা নদী দিয়ে পাচাঁর করা হচ্ছে। এছাড়াও এই সীমান্তের রাজাই এলাকা দিয়ে চোরাচালানী জম্মত আলীর নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর করা হচ্ছে। অন্যদিকে টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বুরুঙ্গাছড়া জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের বাড়ির পিছন থেকে চোরাচালানী আব্দুল হান্নান,কাসেম মিয়া,আলী রহমান,নজরুল মিয়া,রমিজ মিয়ার নেতৃত্বে চুনাপাথর পাচাঁর করে বড়ছড়া বারুদখানা সংলগ্ন নদীর ঘাটে নৌকা বোঝাই করাসহ টেকেরঘাট চুনাপাথর কোয়ারী থেকে রাতে আধাঁরে বারকি নৌকা দিয়ে চুনাপাথার পাচাঁর করা হচ্ছে। পরবর্তীতে পাচাঁরকৃত চুনাপাথর নৌকার যোগে আনোয়ারপুর,বারংকা,ফাজিলপুর,গাগড়া,বড়টেক,পাঠানপাড়া ও মিয়ারচর,আমরিয়া নামকস্থানে নিয়ে পাথর ভাঙ্গার মিলে মজুত রেখে জমজমাট হাট বসায় চোরাচালানীরা। আর লাকমা,লালঘাট, বাগলী সীমান্ত দিয়ে কাঠ পাচাঁর করার পর সেই কাঠ বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নতুনবাজার ও ডাম্পের বাজারে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার হাটবারে প্রকাশে বিক্রি করা হয়। এছাড়া বাঁশতলা,লালঘাট,লাকমা,টেকেরঘাট,বুরুঙ্গাছড়া,জঙ্গলবাড়ি, চাঁরাগাঁও দিয়ে কয়লা পাচাঁর করার পর ঠেলাগাড়িতে করে বড়ছড়া,বাগলী ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের নিয়ে মজুত করে বিক্রি করা হচ্ছে। চাঁরাগাঁও সীমান্তের লালঘাট এলাকা দিয়ে চোরাচালানী জানু মিয়া ও রহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর করে রাতে নৌকা যোগে বালিয়াঘাট ও চাঁরাগাঁও নিয়ে বিক্রি করা হয়। তাদের নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় চাপা পড়ে সম্প্রতি ১যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বালিয়াঘাট,টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা চোরাই গুহায় পড়ে এপর্যন্ত ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। চোরাই কয়লার ঘাট দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে একাধিক বার। বিএসএসের হাতে নির্যাতিত হয়ে জেল খেটেছে অনেক নিরীহ মানুষ। বর্তমানে লাকমা সীমান্ত দিয়ে চোরাচারানী কামরুল মিয়া,নুরজামাল,আলম মিয়ার নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর হচ্ছে। বিজিবি সোর্স পরিচয় দিয়ে মাদক মামলার আসামী চোরাচালানী আবু বক্কর চানপুর ক্যাম্পের নামে প্রতি ট্রলি চুনাপাথার থেকে ১০০টাকা,টেকেরঘাট ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডারের নামে ১০০টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে। এছাড়াও বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে লাকমা গ্রামের ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারি,দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া,লালঘাটের আবুল কালাম প্রতি কাট থেকে ১০০টাকা,প্রতিবস্তা কয়লা থেকে ১২০টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে। আর মাদক দ্রব্য থেকে আলোচনা সাপেক্ষে দৈনিক,সাপ্তাহিক ও মাসিক হারে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। আর সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা উত্তোলন করছে চোরাচালানী আজাদ ও সাজ্জাদ মিয়া। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা হওয়াসহ বড়ছড়া থেকে ইয়ারাসহ ১জন,বাদাঘাট থেকে গাঁজাসহ ১জন ও চাঁদাবাজির জন্য লাকমা থেকে ১জনসহ তাদের মোট ৩জন সহযোগীকে আটক করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এছাড়া চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সীমান্তে ২বার গণধৌলাই খেয়েছে কামড়াবন্দ গ্রামের দুই চিহ্নিত চোরাচালানী আজাদ ও সাজ্জাদ। এরপর সালিয়ে ১০হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া সহ লিখিত বনসই দিয়েছে।
এব্যাপারে বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী আছকর আলী,এরশাদ মিয়া,লাল মোহাম্মদ,সবুজ মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,সিও সীমান্তে এসে জিরো পয়েন্ট থেকে দেড়শত গজ দূরে থাকা নির্দেশ দেওয়ার পর বর্তমানে বড়ছড়া বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যদের উৎকোচ দিয়ে চোরাচারালানীরা বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে অবাধে চুনাপাথার চোরাচালান করছে। একই ভাবে চানপুর দিয়ে পাথর চোরাচালান করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ ৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য সীমান্তে গিয়ে এলাকার লোকজনকে নিয়ে মতবিনিময় ও সভা করাসহ চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমার পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।