জার্মানিমুখী অভিবাসী মিছিলে বাংলাদেশিরাও
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশায় যুদ্ধপীড়িত সিরীয়দের যে ঢল রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে খবর পেয়েছে অষ্ট্রিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। ইউরোপের দেশটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর রবিবার এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশির সংখ্যা কত, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। যুদ্ধের কারণে সিরিয়ার নাগরিকসহ মধ্যপ্রাচ্যের হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে ইউরোপে পাড়ি দিতে চাইছেন।
তিনি বলেন, এটা নতুন নয়। আট-নয় মাস ধরে আমরা অনানুষ্ঠানিক জানছি, প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ বাংলাদেশী আশ্রয় চাচ্ছেন অস্ট্রিয়ায়।
অস্ট্রিয়া থেকে জার্মানিতে যাচ্ছে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী মানুষ। এসব মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার। হাঙ্গেরি শুক্রবার তাদের যাত্রা শুরু করার অনুমতি দেয়ার পর তারা সেখানে যেতে শুরু করে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার সকালের মধ্যেই অস্ট্রিয়া হয়ে মিউনিখে পৌঁছেছে কয়েকটি ট্রেন। জার্মানির অন্য শহরগুলোতেও যাত্রা করেছে বহু শরণার্থী।
শনিবার অস্ট্রিয়া ও জার্মানি শরণার্থীদের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দেয়। এদিনই অস্ট্রিয়ায় ঢুকেছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। হাঙ্গেরি থেকে বাসে চেপে শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে অস্ট্রিয়া হয়ে জার্মানিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। হাঙ্গেরির অস্ট্রিয়া সীমান্ত থেকে ভিয়েনায় শত শত শরণার্থীকে নিয়ে যাচ্ছে আরও ট্রেন। শনিবার মিউনিখে অভিবাসী বোঝাই প্রথম ট্রেন পৌঁছানো মাত্রই স্বাগত জানায় জার্মান কর্মকর্তারা।
জার্মানির ট্রেনে ওঠার আগে ভিয়েনার রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন আনাউদ, সিরিয়ার রাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি। এ তরুণী বলেন, সবাই এখানে খুবই খুশি। এখন আর তারা ভয় পাচ্ছেন না। ভিয়েনাতে নারী, পুরুষ, শিশু সবাই তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে। তারা তাদের খাবার দিচ্ছে, পানি দিচ্ছে, কফি দিচ্ছে, ব্যাগ দিচ্ছে।
এদিকে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশায় সিরিয়ান শরণার্থীদের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশিদের সংখ্যা কত তা জানাতে পারেননি অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর।
রাষ্ট্রদূত জাফর বলেন, অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে যারা দোভাষী হিসেবে বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করছেন, তারা বাংলাদেশী পাওয়ার খবর আমাদের জানিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, আশ্রয়প্রত্যাশী আমাদের দেশের কারও বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না। তবে পরিস্থিতির ওপর চোখ রাখা হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
অস্ট্রিয়ান দোভাষীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবু জাফর বলেছেন, বাংলাদেশীরা আসছেন প্রধানত তুরস্ক ও লিবিয়া থেকে।
লিবিয়ায় যেসব বাংলাদেশী রয়েছেন, তাদের অনেকে ইউরোপে পাড়ি দিতে চাইছেন। এর মধ্যে গত মাসে ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকা ডুবে মারা যান ২৪ বাংলাদেশী। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, কেউ কেউ আবার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক হয়েও আসছে।
অভিবাসন নিয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, প্রতিটি ক্যাথলিক সম্প্রদায়েরই উচিত একটি করে অভিবাসন প্রত্যাশী পরিবারকে আশ্রয় দেয়া।
পুলিশ জানায়, অস্ট্রিয়ায় ৪৫০ শরণার্থী নিয়ে দুটি ট্রেন হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছে নিকেলসডর্ফ ছেড়ে রাজধানী ভিয়েনার উদ্দেশে যাত্রা করেছে।
অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অস্ট্রিয়া সীমান্ত পার হয়েছে ১০ হাজার মতো শরণার্থী। আরও শরণার্থীর জন্য সীমান্ত খুলে রাখা হয়েছে। মিউনিখে নেয়ার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা আরও জানায়, কাউকে আটকানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এদের প্রায় সবাই জার্মানিতে যেতে চাইছে।
এদিকে কত শরণার্থীকে জার্মানির আশ্রয় দেয়া উচিত তা নিয়ে জার্মানিতে বিতর্ক তীব্রতর হচ্ছে। দেশটির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল বলছেন, সংখ্যা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন। তবে দেশটির দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকরা আপত্তি করছেন। তারা বলছেন, চ্যান্সেলর ভুল বার্তা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, অভিবাসীদের আটকে রেখে সেখানেই আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার উদ্যোগ নিতে গিয়ে চাপে পড়া হাঙ্গেরি আপাতত তাদের সীমান্ত শিথিল করলেও তারা বলছে, সংসদ অনুমোদন করলে তারা সীমান্তে সৈন্য পাঠাবে।
১১৪ শরণার্থীকে উদ্ধার করল সাইপ্রাস : সাইপ্রাসের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের অদূরে ভূমধ্যসাগর থেকে শতাধিক সিরীয় শরণার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে।
দ্বীপ রাষ্ট্রটির যৌথ উদ্ধার সমন্বয়কারী কেন্দ্রের সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, উদ্ধারকৃত ১১৪ সিরীয় নাগরিকের মধ্যে ৫৪ নারী ও শিশু রয়েছে। এরা একটি ছোট মাছ ধরার নৌকায় করে সিরিয়া থেকে পালিয়ে এসেছে।
শনিবার রাতে তাদের নৌকাটি সাইপ্রাসের লারনাকা বন্দর থেকে ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে সমুদ্রে সংকটে পড়ে। সব যাত্রীকে নিরাপদে লারনাকা উপকূলে আনা হয়েছে।