এথেন্সে নয়া রাষ্ট্রদূত, দালাল-সিন্ডিকেটের পুনঃদখলমুক্ত হোক দূতাবাস
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : নিয়োগ পাবার দীর্ঘ ৬ মাস পর অবশেষে এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দিয়েছেন নয়া রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। ৩১ আগস্ট সোমবার গ্রীসের রাজধানীতে অফিস করেছেন প্রবল সংস্কৃতিমনা মেধাবী এই কূটনীতিক। দিল্লী, ইসলামাবাদ, টোকিও এবং ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই পেশাদার ডিপ্লোম্যাটকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে গ্রীসে পাঠাবার সিদ্ধান্ত হয় ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ৬ মাস বিলম্ব হবার সুযোগে এথেন্সের কুখ্যাত দালাল-সিন্ডিকেট চক্র পুনরায় দখলে নিয়ে নেয় দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ।
চলতি বছরের শুরু থেকেই রাষ্ট্রদূত না থাকার পরিণতিতে দায়িত্বে থাকা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স সহ দূতাবাসের দুর্নীতিবাজ কয়েকজনকে ম্যানেজ করে আগেকার সেই চিহ্নিত দালাল চক্র তাদের পুরনো স্টাইলে অপকর্মের অভয়ারন্যে পরিণত করে দূতাবাসকে। মুখচেনা ঐ দালালদেরকে দূতাবাস থেকে বিতাড়ন করতে গিয়েই গত বছর ভয়ানক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন ২০১৩-১৪ দায়িত্বপালনকারী সফল রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ। একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজীবনের সৎ এই মানুষটির বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিতভাবে নারী কেলেংকারীর মিথ্যা অভিযোগ এনে রাতকে করা হয় দিন আর দিনকে করা হয় রাত।
মূলতঃ ২০১৪ সাল ছিল গ্রীস তথা ইউরোপের প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য, একইসাথে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জন্য একটি কলংকের বছর। গ্রীসের কুলাঙ্গার কিছু দালালদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের পাতা ফাঁদে তখন পা দিতে হয় সেগুনবাগিচাকে। পাসপোর্ট পিসি-কেনাবেচা দুই নাম্বার এমনকি তিন নাম্বার সার্টিফিকেট বানিজ্যের মাধ্যমে ২০১১-১২ ভরা মৌসুমে দালালরা দূতাবাসকে ঘিরে লাখ লাখ ইউরোর যে রমরমা বানিজ্য গড়ে তুলেছিল কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে, তার ছন্দপতন ঘটান অকুতোভয় কূটনীতিক গোলাম মোহাম্মদ। যে কোন মূল্যে তাঁকে সরাতে তাই মরনকামড় দেয় দালাল-সিন্ডিকেট। হোম-মেইড ভূয়া অডিও ক্লিপ তৈরী করে ঢাকায় পানি ঘোলা করার পাশাপাশি জনৈক বাংলাদেশী মহিলাকে দিয়ে তথাকথিত যৌন নিপিড়নের বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়।
প্রভাবশালী দালালচক্র অর্থ ও উপঢৌকনের মাধ্যমে আগে থেকেই হাত করে রাখে ঢাকার কয়েকজন ব্যক্তিবিশেষকে। এরই মধ্যে ঢাকা থেকে এথেন্সে পাঠানো হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাদেরকেও অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে নেয় এথেন্সের দালাল-সিন্ডিকেট। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশের খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় যেখানে তার সৎ-নির্দোষ কর্মকর্তার পাশে থাকেনি, সেক্ষেত্রে যা হবার তাই হয় গত বছরের শেষার্ধে। একাত্তরের রণাঙ্গণের বিজয়ী বীর গোলাম মোহাম্মদ ‘চাপিয়ে দেয়া’ ফ্রেব্রিকেটেড কলংক মাথায় নিয়ে বিদায় নেন এথেন্স থেকে। বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নেক্কারজনক আনাড়িপনায় সত্যিকারের কলংক মাখা হয়ে যায় লাল-সবুজ পতাকায়।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদের দুর্ভাগ্যজনক প্রস্থানের পর দালাল-সিন্ডিকেট কর্তৃক পুনরায় দখলকৃত বাংলাদেশ দূতাবাসেই এখন থেকে শোভা বর্ধন করবেন নয়া রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তাঁর হাতেই থাকবে স্টিয়ারিং। অর্থনৈতিক ধ্বংসযজ্ঞে ভয়াবহভাবে নিপতিত রাষ্ট্র গ্রীসের খেটে খাওয়া মেহনতী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুখ-দুঃখের কতটা সাথী হবেন নতুন এই অভিভাবক, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তিনি কি পারবেন দূতাবাসের সকল সার্ভিসকে শতভাগ দালালমুক্ত করতে ? বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার কলংক আর জেলা-থানার ইজম-আঞ্চলিকতার বিষবাষ্প থেকে তিনি কতটা মুক্ত থাকবেন সক্রেটিসের দেশে ? গ্রীস-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন তাঁর মেধাকে কিভাবে কতটা কাজে লাগান, সেটাও বলে দেবে সময়।