জাপা চেয়ারম্যান কাজী জাফর আর নেই
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান, প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজেউন)। বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৭টায় গুলশানের নিজ বাসভবনে (রোড-৬৮, বাসা-২) হৃদরোগে আক্রান্ত হন কাজী জাফর। এরপর দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে আনা হলে কর্ত্যবরত চিকিৎসক সোয়া ৭টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী মমতাজ বেগম, তিন মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ, কাজী সোনিয়া আহমেদ ও কাজী রুনা আহমেদসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, কর্মী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুর খবর শুনে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে আসেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
কাজী জাফর আহমেদের নামাজে জানাজা শুক্রবার (২৮ আগস্ট) বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়ও তার আরেকটি জানাজা হতে পারে। কাজী জাফরের ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা গণমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছেন। দাফনের বিষয়টি স্ত্রী ও মেয়েদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিবৃতিতে তারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। বিবৃতিতে তারা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একইসঙ্গে দেশবাসীর কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেন।
১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লার বিখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী জাফর আহমদ। মেধাবী ছাত্র হিসেবে কাজী জাফর আহমদ খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকাররি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (ইতিহাস) পাস করেন।
কাজী জাফর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ এবং এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করা সত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ছাত্র জীবন শেষে কাজী জাফর আহমদ শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।
১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান।
এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী পরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাজী জাফর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬-১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৬-১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার কুমিল্লা -১২ (চৌদ্দগ্রাম) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে টানাপোড়েনের মধ্যে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর দীর্ঘ তিন দশকের সঙ্গী কাজী জাফরকে বহিষ্কার করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
এরপর দলের একাংশকে নিয়ে তিনি জাতীয় পার্টি নামেই নতুন দল গঠন করেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে কাজী জাফর দলটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন। নতুন দল নিয়ে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে যোগ দেন কাজী জাফর।