ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে প্রীতির নতুন ‘বোমা’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নিজের বুকে নিজেই তির মারলেন আইপিএল ‘গ্ল্যামার রাণী’ প্রীতি জিনতা। সেই তিরের বিষ ছড়িয়ে পড়েছে আইপিএল ফিক্সিং-এর ওপর।ক্রিকেট ভালোবেসে আইপিএল ভুবনে এসেছিলেন তিনি। কিনেছিলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের দলটিকে।কিন্তু জুয়া-চুরি আর দুর্নীতি গ্রাস করে ফেলেছে খেলাটির মূল সৌন্দর্য। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়েই বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা দ্বারস্থ হয়েছেন আইপিএলের শীর্ষ কর্তাদের। তাঁদের সামনে বলে এসেছেন ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে তাঁর মনের মধ্যে পুঞ্জীভূত সন্দেহের কথা।
এমনিতেই আইপিএলের স্পট ফিক্সিং নিয়ে জল ঘোলা হয়নি কম। আর সেই ফিক্সিংয়ে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে বসলো প্রীতি। তাও আবার নিজের দলের দিকেই সন্দেহের তির ছুঁড়লেন। আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সহ মালিক বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইকে জানিয়েছেন তার শঙ্কার কথা। বলেছেন, তার দলের বেশ কয়েকজন ম্যাচ ছেড়ে দেয়ার মতো সন্দেহজনক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকতে পারে।
প্রীতির দাবি, ভারতীয় বোর্ডের দুর্নীতি দমন দলও ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। আইপিএলে নিজ দলের কোনো কোনো ম্যাচের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে মনে হয়েছে। এমনকি সন্দেহের খেলোয়াড়কেও তিনি সেই সময় বাদ দিয়েছিলেন। তুলে দিয়েছেন নিলামেও।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রীতি হাজির ছিলেন ৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত আইপিএল ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। সেখানেই তিনি নিজের শঙ্কার কথা জানান। প্রমাণ না থাকায় এই বিষয় নিয়ে এর আগে বিসিসিআইকে তিনি কিছু জানাতে পারেননি বলে বৈঠকে দাবি করেছিলেন তিনি।
ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজিব শুক্লা, বিসিসিআই সচিব অনুরাগ ঠাকুর, বিসিসিআই কোষাধ্যক্ষ অনিরুধ চৌধুরী ও ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। এই গ্রুপটি বিসিসিআই গড়েছে ২১ জুলাই। কিন্তু ঝামেলা হলো এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় রাগান্বিত হয়েছেন প্রীতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে তিনি এ খবর প্রত্যাখ্যান করে লিখেছেন, “ধাক্কা খেলাম এই বেঠিক ও প্রচণ্ড দায়িত্বহীন ও বিদ্বেষপূর্ণ রিপোর্টে।”
২০১২ সালের আইপিএলের ম্যাচ ফিক্সিং এর প্রমাণ মেলেছিলো একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল। সেই সময় একটি স্ট্রিং অপারেশনে নাকি পাওয়া গিয়েছে আইপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অকাট্য প্রমাণ। সেই ভিডিওতে পাঁচজন ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটারকে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গিয়েছে। খেলোয়াড়রা হলেন টিপি সুধীন্দ্র (ডেকান চার্জার্স), মনিষ মিশু (পুনে ওয়ারিয়র্স), শাহলাভ শ্রীবাচ্চব (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব), অমিত যাদব (কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) ও বেলি। এরা পঞ্চম আইপিএলে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের হয়ে খেলছেন। দলের অধিনায়ক এমনকি মালিকরাও যে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত তাও উঠে এসেছে তাদের আলোচনায়। তারা বলছে, চলতি আইপিএলে ম্যাচ গড়পেটার সব প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। আর এর পেছনে জড়িত থাকা নিয়ে চ্যানেলটি বন্দুক তাক করেছে খেলোয়াড়, সংগঠক, ফ্রাঞ্চাইজি দলগুলোর মালিক ও সর্বোপরি ভারতীয় ক্রিকেটের দিকে। সংবাদভিত্তিক বেসরকারি চ্যানেলটি বলেছিল, তারা এ নিয়ে তীক্ষ্ণ অভিযান চালিয়েছে, যেখানে তাদের লাগানো গোপন ক্যামেরায় অনেক খেলোয়াড়কেই নিলামে প্রাপ্ত দামের চেয়ে বেশি অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করতে দেখা গেছে টেলিভিশন ফুটেজে। এছাড়া আরো বিস্ময়কর তথ্য হলো, শুধু যে আইপিএলে স্পট ফিক্সিং হচ্ছে তা নয় বরং এটি এখন ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে প্রথম শ্রেণীর ম্যাচগুলোতেও। আর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মেয়েরা। চ্যানেলটি জানায়, আইপিএলে ম্যাচ গড়পেটার পেছনে জড়িত রয়েছেন একজন ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার এবং একজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। যিনি কিনা তার দলে অধিনায়কের ভূমিকা পালন করেন।
সম্প্রতি আইপিএল ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রমাণ মেলায় দুই বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছে আইপিএলের সেরা দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপার কিংস ও রাজস্থান রয়্যালস। নির্বাসিত এই দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি ছাড়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে এগিয়ে নেওয়া যায় তাই ভাবছেন আইপিএলের কর্তা ব্যাক্তিরা।দ্বিধায় থাকা ব্যাপারটা ফয়সালা করতেই এই মাসের ২৯ তারিখ গভর্নিং কাউন্সিল বৈঠকে বসবেন।
এরই মধ্যে দুটো পথ নিয়েই সৌরভ গাঙ্গুলিসহ ওয়ার্কিং গ্রুপের অন্য সদস্যরা কথা বলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাব ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স প্রতিনিধিদের সঙ্গে। বৈঠকে পাঞ্জাবের কর্ণধার নেস ওয়াদিয়া ও প্রীতি জিনতা বিদেশী দল এনে দু’বছর আইপিএল চালানোর পক্ষে আপত্তি তুললেন।ওয়াদিয়া বলেন, ‘‘বিদেশী দল খেললে আইপিএলের জনপ্রিয়তায় ঘাটতি পড়বে। তাই আমরা যে এই প্রস্তাবের পক্ষে নেই।’’ ওয়াদিয়ার এমন কথায় সায় দিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স প্রতিনিধি নিখিল মেসওয়ানি।
তবে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানায় দুই দলকে রাখা যায় কিনা, তা নিয়েই বেশি ভাবছেন কর্তারা। বৈঠকের পর আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লার কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত মিললো- ‘‘দুই দলকে বাদ দেওয়া নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি। কারণ, তা করতে গেলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া কমিশনতো তেমন সুপারিশ করেও নি। সব ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই কথা হয়েছে। সবাই আট দল নিয়ে আইপিএলের পক্ষে।
এরই মধ্যে প্রীতি জিনতার এমন ঘটনা বোর্ডের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভাবার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রীতি জিনতার দলটি এর আগে ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছিলো একবার। ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে রানার আপ হয়েছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ।