রাজন হত্যা : বরখাস্ত দুই পুলিশ সদস্যই মামলার বাদী ও সাক্ষী!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ নগরীর কুমরাগাও এলাকায় কিশোর শেখ সামিউল আলম রাজনকে (১৪) হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শংকা। সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বাদী ও সাক্ষী দেখানো হয়েছে দুই বরখাস্ত পুলিশ সদস্যকে। আর বাদী হতে সরকারের কাছে আকুতি জানানো শিশুটির বাবাকে রাখা হয়েছে সাক্ষীদের একজন হিসেবে।
হত্যাকান্ডের পর মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলামের নির্বিঘ্নে বিদেশ পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পরোক্ষ সহযোগীতার অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এ দুজনের মধ্যে জালালাবাদ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) আলমগীর হোসেনকে করা হয়েছে মামলার সাক্ষী ও উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলামকে বাদী। মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ওই দুই পুলিশকে অভিযোগপত্রে বাদী ও সাক্ষী হিসেবে রাখার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন, ‘সবই বিধি অনুযায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো অসততা নেই।’
এ অবস্থায় মামলার ভবিষ্যৎ ও ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাওয়া নিয়ে উৎকণ্ঠিত শেখ মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গাফিলতিতে অভিযুক্ত দুই পুলিশই বাদী-সাক্ষী। মনে হচ্ছে, তাঁরাই এ মামলার চালিকাশক্তি।’
মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, রাজন হত্যার ঘটনায় (গত ৮ জুলাই) ১৬ জুলাই মামলার তদন্তভার নেয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্ত শেষে গত রোববার সন্ধ্যায় আদালতে দাখিল করা হয় অভিযোগপত্র। এতে পালিয়ে সৌদি আরব গিয়ে ধরা পড়া কামরুল ইসলামসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কামরুলসহ তিনজনকে দেখানো হয়েছে পলাতক ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ১০ জনকে। সাক্ষী করা হয়েছে ৩৮ জনকে। এঁদেরই একজন বরখাস্ত পরিদর্শক আলমগীর। প্রায় এক সপ্তাহ পর্যালোচনা শেষে ২৪ আগস্ট অভিযোগপত্রের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
পুলিশ তাঁকে বাদী না করার বিষয়ে রাজনের বাবা বলেন, হত্যাকান্ডের দিন রাত ১১টার দিকে তিনি জালালাবাদ থানায় লিখিত এজাহার দাখিল করেছিলেন। কিন্তু এর আগেই এসআই আমিনুল রাজনকে ‘অজ্ঞাত পুরুষ’ ও আসামিদের ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে উল্লেখ করে মামলা করেন। আর থানার কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা পরের দিনের (৯ জুলাই) তারিখ দেখিয়ে তাঁর এজাহারটি গ্রহণ করেন। ওই সময় তাঁকে (রাজনের বাবা) বলা হয়েছিল, একই ঘটনায় দুটি মামলা হয় না। তাই এজাহার গ্রহণ করে পরবর্তী সময়ে আদালতের মাধ্যমে এটি মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আজিজুর রহমান বলেন, কিন্তু এরপর আর তাঁর এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রাজন হত্যা মামলা ও ডিবির তদন্তকাজের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. রহমত উল্লাহর কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তবে বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম অভিযোগকারী ব্যক্তিকেই আইনানুযায়ী মামলার বাদী রাখার বিধান রয়েছে। অভিযোগপত্রে এর কোনো অন্যথা করা হয়নি। কোনো পুলিশ সদস্যকে বাঁচানোর জন্য এমনটা করা হয়নি। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা বিভাগীয় অপরাধ করেছেন, তাই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে যারা (হত্যাকারীরা) ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তাদের ফৌজদারি আইনে বিচার হবে।’
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেছেন, অভিযোগপত্রে সামিউলের বাবাকে আর বাদী রাখার সুযোগ নেই। বুধবার তিনি বলেন, ‘সামিউলের বাবাকে বাদী করতে চাইলে তদন্তকারীদের উচিত ছিল, এসআই আমিনুলের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দিয়ে সামিউলের বাবার এজাহার গ্রহণ করা এবং তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া। তাঁরা এ পিটিশনকে নিছক পিটিশন হিসেবে রেখে দিয়েছে। তবে সামিউলের বাবা মামলার সাক্ষী হিসেবে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিতে পারবেন।’
বরখাস্ত হওয়া পুলিশকে সাক্ষী রাখা প্রসঙ্গে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটি দুর্বলতা। তবে যেহেতু পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি চালাচ্ছে, আর তিনি (বরখাস্ত পরিদর্শক) প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন, সে হিসেবে তাঁকে সাক্ষী রাখতেই হয়েছে। এসআই আমিনুলের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়ে গেলে এঁদের রাখার আর দরকার পড়ত না।’