ব্লগার হত্যাকান্ড নিয়ে ‘অস্পষ্ট’ অবস্থানে আওয়ামী লীগ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশে এবছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চারজন ব্লগারকে হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে । এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দলের নেতারা বিভিন্ন রকমের বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ হত্যাকারীদের বিচারের কথা বললেও, অনেকে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ব্লগারদেরকেও হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসেবে দাবি করলেও এবিষয়ে দলটির অবস্থান পরিস্কার নয়, বরং তারা দ্বিমুখী নীতির মাধ্যমে উভয়পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা করছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। ব্লগারদের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অবস্থান তুলে ধরলেও, যখন ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলামকে কটাক্ষ করার অভিযোগ আসছে – তখন দলটির অবস্থান আর পরিস্কার থাকছে না।
যদিও ব্লগার নীলাদ্রি চ্যাটার্জিকে হত্যার ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেছেন, ব্লগাররা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে লেখালেখি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নীলাদ্রি ব্লগ লিখতেন ‘নিলয় নীল’ নামে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তাঁর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় কয়েকদিন আগে একটি বিদেশী সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে কেউ ধর্মবিরোধী মনে করুক,এটা তারা চাননা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম এম আকাশ মনে করেন, “আওয়ামী লীগ দুই কুল রক্ষার চেষ্টা করছে। একদিকে দলটির ধর্ম নিরেপেক্ষ রাজনীতি। অন্যদিকে ভোটের রাজনীতি থেকে তারা সতর্কভাবে হাটতে চাইছে। সেকারণে তারা ধর্মকে কটাক্ষ করার অভিযোগ মেনে নিয়ে ব্লগারদের সতর্ক করছে।”
ব্লগারদের যারা ইসলামকে কটাক্ষ করে লিখবে, তাদের ব্যাপারে মৃত্যুদন্ডের বিধান চেয়ে আওয়ামী ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠনের কর্মসূচি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। সংগঠনটি নিজেদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত বলে দাবি করেছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা এই সংগঠনের ব্যাপারে দলের অনুমোদন না থাকার কথা বলছেন।
বিশ্লেষকরা এটাও মনে করেন, ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন এবং দল থেকে বহিস্কার হয়েছেন।তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগ দ্বৈত রাজনীতি করেনা।
তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটাই আমাদের বক্তব্য , আমরা ধর্ম নিয়ে কাউকে রাজনীতি করতে দিতে চাইনা।এবং ধর্মের বিরুদ্ধে আমরা কিছু বলিনা।আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির অবস্থান থেকেই এগুচ্ছি।”
বিশ্লেষকদের অনেকে উল্লেখ করেছেন, হত্যাকান্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে ধর্মকে ঘিরে যে ফাঁদ পাতা হচ্ছে. তাতে আওয়ামী লীগ পা দিচ্ছে।কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা এই বক্তব্য মানতে রাজি নন। তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা