মাদকমুক্ত সমাজ চাই
জাহাঙ্গীর হোসাইন চৌধুরী : বিশ্বে যে কয়টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিদ্যমান তার অন্যতম সমস্যা হচ্ছে মাদক সমস্যা। জাতীসংঘের অগ্রাধিকার তালিকায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারকে অন্যতম সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশও এই ভয়াবহ সমস্যার অন্তর্গত। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হলেও মাদকের অপব্যবহার মুক্ত নয়। ভৌগলিক অবস্হানগত কারনে মাদক ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশকে নিরাপদ ট্রানজিট রোড হিসাবে ব্যবহার করছে, প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেশের বর্ডার দিয়ে অবৈধ মাদক প্রবেশ করছে যার কিছু অংশ বিজিবি’র হাতে আটকা পড়ছে কিছু অংশ পাচার হচ্ছে অন্যান্ন দেশে আর কিছু অংশ চলে যাচ্ছে আমাদের দেশের তরুন ও যুব সমাজের কাছে। এতে করে বাংলাদেশে দিন দিন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশে মাদক সমস্যা এখনও পাশ্চাত্যের মতো
ভয়াবহ না হলেও যে হারে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার
বাড়ছে তাতে পাশ্চাত্যকেও চাড়িয়ে যাওয়ার আশংখাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবেনা। কারণ একটি
দেশের মেরুদন্ড হচ্ছে তরুন ও যুবসমাজ, আর এই ভয়াবহ মরণ নেশার নির্মমতার প্রধান শিকার হচ্ছে এই তরুন ও যুবসমাজ। এক জরিপে দেখা গেছে মাদকাসক্তদের শতকরা ৮০ ভাগ তরুন ও যুবক। ফলে মাদকের কারনে আমাদের দেশের তরুন ও যুবসমাজ আজ মারাত্তক বিপর্যয়ের সম্মূখীন, মাদক সেবনের ফলে তরুন ও যুবসমাজ জীবনীশক্তি, সৃজনশীলতা, নৈতিকতা ও মেধা হারিয়ে তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত। ফলে
এদের অধিকাংশই জড়িয়ে পড়ছে নানান অসামাজিক কর্মকান্ডে, এদেশের শহরে জনপদে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন ও সন্ত্রাসের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাদকের অপব্যবহার। মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারের ফলে যেমন চুরি, চিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন ও সন্ত্রাস বেড়ে চলেছে এতে আইন সৃংখলারও চরম অবনতি হচ্ছে।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজের জীবনের পাশাপাশি পরিবার পরিজনের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আর্থিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে আসক্ত ব্যক্তির পরিবার, নিজের জীবনকেও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে জটিল রোগে। আমাদের দেশ ও সমাজকে মাদকের ভয়াবহ মরণ ছুবল থেকে রক্ষা করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন আইন সৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনির কঠোর পদক্ষেপ, যাতে করে মাদক পাচারকারীদের নির্মূল করা যায়। আর আমাদের সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের উচিৎ আইন সৃংখলা রক্ষাকারী বাহীনিকে সহায়তা করা, আমাদের তরুন ও যুবসমাজের কাছে মাদকদ্রব্য যাতে সহজদ্রব্য ও সহজলব্যতা না হয় সে জন্য মাদক পাচার রোধে অবশ্যই সবাইকে একযুগে কাজ করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন
মাদকের বিরোদ্ধে গনসচেতনতা তৈরী করা। শহরের পাড়া মহল্লা, গ্রামে গঞ্জে ও স্কুল কলেজে মাদক বিরোধী প্রচারনা চালাতে হবে একযুগে সকলে মিলে, মাদকের ভয়াবহতা ও কুফল সম্পর্কে সঠিক ধারণা সকলের দ্বারে দ্বারে পৌছে দিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরোদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলতে হবে। মাদকের প্রতি কৌতুহলী হয়ে কেউ যাতে মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর ইতিমধ্যে যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে তাদেরকে সঠিক চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের মাধ্যমে সুস্হ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি পাগল নয় খারাপ নয় কিন্তু সে অসুস্হ, আপনার আমার সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবই একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সুস্হ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করতে পারে। আমরা যদি আমাদের তরুন ও যুবসমাজকে মাদকের ভয়াবহ মরণ ছুবল থেকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাওয়া থেকে ফেরানো কোন ভাবেই সম্ভব হবেনা। লেখকঃ মাদকবিরোধী সংগঠক ও সমাজকর্মী।