রাজন চোর নয়, সে ভ্যানগাড়িতে উঠে খেলছিল : আদালতে আয়াজ
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ‘রাজনকে রশি দিয়ে খুঁটির সঙ্গে বাঁধতে সহযোগিতা করি আমি। আর কামরুলসহ ওরা সবাই নির্যাতন চালায়। কিছুক্ষণ নির্যাতনের পর সে মারা যায়। পরে কামরুলের ভাই মুহিত লাশ গুম করতে নিয়ে যায়।’
শিশু রাজন হত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়াজ আলী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন।
আয়াজ আলীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, শিশু রাজন চোর ছিল না। সে ভ্যানগাড়িতে উঠে খেলছিল। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন শিশুও খেলা করছিল। চৌকিদার ময়না প্রথমে তাকে ‘চোর’ বলে ধরে এনে বেঁধে রাখেন। এ সময় আয়াজ আলীও বাঁধতে সাহায্য করেন।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে স্থান পরিবর্তন করা হয়। সে স্থানেও রাজনকে তিনি খুঁটির সঙ্গে বাধতে সাহায্য করেন বলে জবানবন্দিতে জানান আয়াজ।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বেলা আড়াইটায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আয়াজকে মহানগর মুখ্য হাকিম প্রথম আমলী আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক শাহেদুল করিম বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, মঙ্গলবার তিনদিনের রিমান্ড শেষে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আয়াজ আলীকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
এর আগে শনিবার ভোরে সিলেট সদর উপজেলার কুমারগাঁও শেখপাড়া এলাকা থেকে আয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। আয়াজ সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার জাহাঙ্গীরগাঁও এলাকার মোস্তফা আলীর ছেলে। তিনি সিলেট শেখপাড়ায় বসবাস করতেন।
এদিকে এ হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে থাকা অপর আসামি বাদলকে আদালতে হাজির করা হলে তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন একই আদালতের বিচারক শাহেদুল করিম।
গত বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন স্থানীয় জনতা। বাদল শেখপাড়া এলাকার সুলতান আহমদের ছেলে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই চুরির অভিযোগে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ গুম করার চেষ্টাকালে মুহিতকে ধরে পুলিশে দেন স্থানীয়রা। ওই নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রাজন খুনের মামলার চার আসামির মধ্যে মুহিতসহ অন্যদের জনগণই ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশের সহায়তায় সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়া আসামি কামরুলকেও প্রবাসীদের সহায়তায় দূতাবাস কর্মকর্তারা আটক করে।
এ মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।