রোহিঙ্গা ঠেকাতে ইসির বিশেষ নজরদারি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আসন্ন ভোটার তালিকা হালনাগাদে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে এবার বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪৬ উপজেলায় বিশেষ নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে এসব এলাকায় ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বিশেষ ফরম তৈরিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ২৫ জুলাই ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু হওয়ার আগেই এসব এলাকার জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। গত রোববার কমিশন বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, প্রতিবছর ভোটার তালিকা হালনাগাদে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলা এবং কক্সবাজার জেলার ১৪ উপজেলায় বিশেষ ফরম সরবরাহ করা হলেও এবার তা বাড়িয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪৬ উপজেলায় তা দেওয়া হবে।
এসব উপজেলায় বসবাস করা নাগরিকদের এই বিশেষ ফরম পূরণ করেই ভোটার হতে হবে। এ ছাড়া ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার হওয়া বন্ধেও সংশ্লিষ্ট সব সীমান্তবর্তী এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বিশেষ নজরদারি।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা জানান, হালনাগাদ কার্যক্রম চলাকালে রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিকদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে এবার বৃহত্তর চট্টগ্রামের মোট ৪৬টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় ভোটারদের যাচাইয়ে বিশেষ ফরম ব্যবহার করা হবে।
প্রকৃত ভোটার শনাক্ত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করবে। ইসির তদারকির পাশাপাশি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হবে।
স্পর্শকাতর এই ৪৬ উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা আগে থেকেই বিশেষ এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেগুলো হলো- কক্সবাজার সদর, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী, বান্দরবান সদর, আলিকদম, লামা, নাইক্ষংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও কাপ্তাই উপজেলা।
নতুন করে আরো ৩২ উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, সীতাকুণ্ড, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, রাউজান, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ, হাটহাজারী ও মিরসরাই; খাগড়াছড়ির সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা; বান্দরবানের রুমা, থানছি ও রোয়াংছড়ি এবং রাঙ্গামাটির সদর, জুরেইছড়ি, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, লঙগদু, নানিয়ারচর, বরকল ও রাজস্থলী।
বিশেষ নজরদারির আওতায় এসব উপজেলায় তথ্য সংগ্রহে বিশেষ ফরমে ভোটারদের আদিনিবাস, পিতা, পিতামহের ঠিকানা, সম্পত্তি ও নিকটাত্মীয়দের পরিচয়সহ অন্তত ২২ ধরনের তথ্য দিতে হবে। তথ্য সংগ্রহের পর বিশেষ কমিটি এসব ফরম যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণীত হয়। প্রতিবেশী দেশ থেকে রোহিঙ্গা ও বিভিন্ন বিদ্রোহী সংগঠনের সদস্যদের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে- সন্দেহজনক এমন এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও সহায়তা চেয়েছে ইসি।
এদিকে ৭২ লাখের বেশি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহের টার্গেট নিয়ে আগামী ২৫ জুলাই থেকে শুরু হচ্ছে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। নির্বাচন কমিশনের নিয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারযোগ্য এবং ভোটারযোগ্য নয় (১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি) এসব নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করবেন।
২০০১ সালের ১ জানুয়ারি এবং তার আগে যাদের জন্ম তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অর্থাৎ এবার ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হচ্ছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
প্রথম ধাপে ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট ১৮৯ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ থেকে ২০ আগস্ট ১৮৪ উপজেলায় এবং তৃতীয় ধাপে ৭ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ১৪১ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে তিন ধাপের এ কাজ সম্পন্ন হবে। তথ্য সংগ্রহের পর তথ্যদাতাদের ইসির নির্ধারিত তথ্যকেন্দ্রে গিয়ে ছবি তুলে ভোটার হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির উপসচিব আব্দুল অদুদ জানান, কক্সবাজারের সব উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকার কাজে বিশেষ ফরম ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য তিন জেলার কয়েকটি উপজেলাতেও রয়েছে এ ব্যবস্থা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা বসতি শনাক্ত হওয়ায় বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বেশ কিছু বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।