ফেসবুকে এবার সৌম্য, লিটনকে কটূক্তি!
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের অফিশিয়াল পেজে জাতীয় দলের দুই ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী। গতকাল শুক্রবার ইফতারের আগে সতীর্থদের নিয়ে মুশফিকের পোস্ট করা একটি ছবিতে বেশ কিছু কটূক্তি করা হয়। এতে মর্মাহত হয়ে কিছু ফ্যানকে ব্যান (নিষিদ্ধ) করেন মুশফিক। অবিবেচক মন্তব্যকারীদের সতর্কও করে দিয়েছেন তিনি।
গতকাল রাজধানীর বনানীতে সাকিব আল হাসানের রেস্তোরাঁ ‘সাকিবস ডাইন’-এ ইফতার করেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ছয় খেলোয়াড়রা। সেখানে মুশফিকের সঙ্গে অংশ নেন তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসান। গতকাল সন্ধ্যায়ই ইফতার আয়োজনের ছবিটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন মুশফিক। ওই পোস্টেই ক্রিকেটার সৌম্য ও লিটনকে নিয়ে কটূক্তি ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে কিছু ব্যক্তি।
বাহার উদ্দিন, আবু বকর সুমন, প্রিন্স রুবেল, অগোছালো মিরাজ, মো. নাইম আবসার উদ্দিনসহ বেশ কিছু ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ‘হিন্দু’ ধর্মাবলম্বী হয়ে ইফতার করার জন্য সৌম্য ও লিটনকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়। এঁদের কেউ কেউ সৌম্য, লিটনকে ইফতার করানোয় মুশফিক, সাকিব-তামিমদের সমালোচনা করেন।
এমন বিরূপ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়ে গতকাল রাতেই ৩০ জনের মতো ফ্যানকে ‘ব্যান’ করে দেন মুশফিক এবং এই সম্পর্কিত একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটিতে তিনি লিখেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য দেখতে পেয়ে সত্যি খুব বিস্মিত। আজ ৩০ জন ফ্যানকে ব্যান করেছি এবং এটি খুব দুঃখজনক। দয়া করে পরিচ্ছন্ন মন্তব্য করার চেষ্টা করুন।’
এই স্ট্যাটাসটি পোস্ট করার পর জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেনের মতো অধিনায়ক মুশফিকের সমর্থনে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর ভক্তরা। অনেকে কটূক্তিকারীদের ‘মানসিকভাবে বিকৃত ও অসুস্থ’ সম্বোধন করে তাদের বিচার দাবি করেছেন। ক্রিকেটার লিটন ও সৌম্যকে বাংলাদেশের অহংকার সম্বোধন করে এসব কটূক্তিকারীর মানসিকভাবে অসুস্থ বলে সম্বোধন করেছেন ব্যবহারকারীরা। ফেসবুকে ‘অবোধদের’ কটূক্তির জন্য প্রিয় ক্রিকেটারদের কাছে ক্রিকেটপ্রেমীদের হয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন কেউ কেউ।
মোস্তাফিজুর রহমান তানিম নামের একজন লিখেছেন, ‘ইফতারের সৌন্দর্য তো এটাই, সবাই একসঙ্গে, যেখানে ধর্ম রোজা রাখা না রাখা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
রাকিব খান শোভন লিখেছেন, ‘ছবিটা দেখে যত ভালো লাগল, তার থেকে বেশি ভালো লাগল কমেন্টগুলো পড়ে। যারাই লিটন ও সৌম্যের ইফতারে অংশগ্রহণ নিয়ে উল্টাপাল্টা বকেছে, তাদেরকে সবাই মিলে সমুচিত জবাব দেওয়া হচ্ছে। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ যে অসুস্থ মানসিকতার লোকজনদের একসঙ্গে প্রতিহত করা হচ্ছে। একটা বাজে মন্তব্যের বিরুদ্ধে চৌদ্দজন প্রতিবাদ করছেন। এ রকম হলে ওই অপরিণত মস্তিষ্কের ফেসবুকারদের অচিরেই হটানো সম্ভব হবে।’
রামিসা আনজুম রুশমি লিখেছেন, ‘যখন তোমরা কোনো ম্যাচ হেরে যাও, কিছু মানুষ তবুও তোমাদের সাপোর্ট করে। কিছু আছে সামান্য ক্যাচ মিস করলেও গালি দেয়, এই গালি দেওয়া মানুষগুলা হচ্ছে নেগেটিভ পিপল, যারা পৃথিবীর সব ভালো জিনিসে কদর্যতা খুঁজে পায়। আর না পেলে নিজেরাই সেটাকে কদর্য করে, এই মানুষগুলোকে জাস্ট বাতিলের খাতায় ফেলে দাও। পৃথিবী সুন্দর, এসব ফালতুদের জন্য পৃথিবী আটকাবে না।’
এ বি এস রুমন লিখেছেন, ‘সৌম্য হোক বা লিটন, হিন্দু-বৌদ্ধ হোক বা খ্রিস্টান; তাঁদের প্রথম পরিচয় মানুষ। সম্ভবত এই দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলেও মানুষ ১৬ হাজারের মতো আছে! ইফতার পার্টি হোক আর পূজা পার্টি ওরা আমাদের, আমাদের অহংকার!’
মাত্র কয়েকদিন আগেই অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের ফেসবুক পেজে তাঁর বোনকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার প্রতিবাদে কটূক্তিকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। প্রয়োজনে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে এ ধরনের ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
মুশফিকুর রহিম তখন লিখেছিলেন, ‘প্রত্যেক মানুষই কঠোর চেষ্টা করেন, যেন নিজের জাতিকে নিয়ে গর্ববোধ করা যায় এমন কিছু করতে। তাই সম্মান পাওয়াটা তাদের প্রাপ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার বা কোনো বিদেশি সেলিব্রিটিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত।’
নিজের ফেসবুক পেজ থেকে বাজে মন্তব্যকারীদের বাদ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘এখানে বাজে ভাষা ব্যবহার করলে তাঁকে স্রেফ ‘ব্যান’ করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোনো কিছু পোস্ট করার আগে নিজের চিন্তা-ভাবনা পরিষ্কার করুন।’
ওই সময় টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফির ফেসবুক পেজ বাংলাদেশে প্রদর্শন বন্ধ হয়।