রাজশাহীর আম চাষিদের মাথায় হাত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাজশাহীতে আমচাষিদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। গত বছরের তুলনায় আমের ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি দামও কমে যাওয়ায় আম চাষিদের মধ্যে এই হতাশা বিরাজ করছে। এবারের আম চাষে লোকসানের আশঙ্কা করছে তারা।
এর জন্য জেলা প্রশাসনের আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছেন চাষিরা। এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের চাষিরা আম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।
সরেজমিনে আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে থাকায় এ বছর প্রচুর পরিমাণ গাছে মুকুল আসে। সেইসঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে গাছের পরিচর্যা করায় গাছে আশানুরূপ আমের ফলন হয়। তবে গত মৌসুমের মতো আম চাষে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে জেলা প্রশাসন কর্তৃক কঠোর অবস্থানের ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
কারণ এ বছর তীব্র দাবদাহ ও গরমের কারণে সময়ের আগে গাছেই আম পাকতে শুরু করে। কিন্তু, জেলা প্রশাসন থেকে আম চাষিদের ৫ জুনের আগে সব উপজেলায় আম গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে প্রশাসন কর্তৃক জারি করা সময়ের আগেই গাছে গাছে আম পাকতে শুরু করে।
কিন্তু, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ঘোষণার ফলে এ বছর গাছেই আম পেকে ঝরে পড়ে। আর ৫ জুনের পর সব আম চাষি এক সঙ্গে গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারজাত করায় বাজারে আমের দাম কমে যায়। এর ফলে আম চাষি ও বিক্রেতাদের লাভের জায়গায় ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে।
তবে জেলা প্রশাসন ও কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষের মধ্যে আমে ফরমালিন আতঙ্ক রয়েছে। এতেই বেশি ক্ষতি হয়েছে চাষিদের। নিষেধাজ্ঞার জন্য নয়।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আম চাষি বাবর আলী জানান, এবারের গরমে তাপমাত্রা বেশি থাকায় সব ধরনের আম সময়ের আগেই পেকে গেছে। কিন্তু, বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ থাকার কারণে তা বাজারে তোলা যায়নি। এ কারণে অনেক আম পেকে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এক সঙ্গে সব আম চাষি বাজারে আম তোলায় দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আমের মোকামে আমের সরবরাহ বেড়ে চললেও পাইকারি ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা কম আসার কারণে বিক্রি হচ্ছে কম। আশানুরূপ আম বিক্রি করতে না পেরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের রানীহাটির আমচাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু কম দাম পাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সোমবার বিকালে নগরীর সাহেব বাজার ও লক্ষীপুরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে আম বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর হিমসাগর আম মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫শ থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা করে। যা এ বছর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকায়।
গত বছর প্রতি মণ গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। এ বছর ১ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত বছর ল্যাংড়া আম প্রতি মণে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা, এ বছর দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শ টাকা থেকে ১ হাজার ৩শ টাকা।
আশ্বিনা গত বছর ১ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ বছর দাম কমে ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ৫শ টাকা, ফজলি গত বছর ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা।
গত মৌসুমে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক আম পেড়ে তাতে কেমিকেল ও ফরমালিন দিতে শুরু করে। আর খবরটি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে আম পরীক্ষা করে ধ্বংস করে স্থানীয় প্রশাসন।
এর ফলে এ বছর রাজশাহীর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘কেমিকেল দিয়ে ফল পাকানো রোধে জেলা পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়। আর এ বছর যেন আমচাষিরা এ ধরনের কাজ না করতে পারেন। সে কারণেই ৫ জুন পর্যন্ত আমপাড়া ও বাজারে বিক্রি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো স্থানীয় প্রশাসন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলার কৃষি অধিদপ্তদরের উপ-পরিচালক হজরত আলী বলেন, গতবছর ক্ষতিকারক কেমিকেলের সাহায্য কাঁচা আম পাকিয়ে তাতে ফরমালিন মিশিয়ে বাজারজাত করা হয়েছিলো। তবে সে ক্ষতির পরিমাণও ১০ শতাংশের বেশি নয়।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, আম আবহাওয়ার কারণে আগে বা পরে পাকে। কিন্তু এভাবে প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় চাষিরা পাকা আমও গাছ থেকে পাড়তে পারেনি।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমে রাসায়নিক মিশ্রণ ঠেকাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তবে এ জন্য যে, চাষিরা দাম না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এটা ঠিক নয়। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।