পরেশ বড়ুয়ার দেহরক্ষী হয়ে কাজ করছে দুই বাংলাদেশী জঙ্গি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ভারতের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)’র প্রধান পরেশ বড়ুয়া তার দেহরক্ষী হিসেবে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি কাজ করছেন বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস। এই দুজন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাত-উল জিহাদ-আল-ইসলামীর (হুজি)’র সদস্য। তাদের নাম আলমগীর হোসেন ও গোলাম নবী।
সংবাদ মাধ্যমটি শুক্রবার প্রকাশিত তাদের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করে পরেশ বড়ুয়া তার নিজ দলের ‘ক্যাডারদের’ বিশ্বাস করতে পারছেন না বলে বাংলাদেস দুই দেহরক্ষী নিয়োগ দিয়েছেন।
ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উলফা এ বছরের শুরুর দিকে এনএসসিএন-কে এবং ভারতের অন্যান্য উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে নিয়ে একটি ফ্রন্ট গড়ে তোলে, যারা মনিপুরে ১৮ সেনাকে হত্যাসহ বেশ কয়েক দফা হামলা চালিয়েছে।
তাদের এ ফ্রন্টের বিষয়টি জানার পর পরেশ বড়ুয়াকে ধরতে তৎপরতা আরও জোরদার করেছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। পাকিস্তানি ও চীনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে ‘যোগাযোগ রেখে চলা’ পরেশ বড়ুয়াকে ‘জীবিত অথবা মৃত’ চায় নয়া দিল্লি।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকা পরেশ নিজের দেহরক্ষী হিসেবে দুই বাংলাদেশিকে ব্যবহার করছেন, যারা ২৪ ঘণ্টা তার সুরক্ষায় কাজ করেন। এমনকি তার খাবারও রান্না করে দেন তারা, যাতে বিষ প্রয়োগের ঝুঁকি এড়ানো যায়।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, বর্তমান পরেশ বড়ুয়া নেতৃত্বাধীন উলফা-ইন্ডিপেনডেন্টের দেড়শ’রও কম যোদ্ধা রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রের তথ্য। ২০১০ সালে পরেশ বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর মিয়ানমারের সাগাইং বিভাগে এনএসসিএন-কে’র সঙ্গে মিশে তাদের ঘাঁটিতে অবস্থান করছে তারা।
‘উলফার বিরুদ্ধে’ কাজ করা এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ায় গত বছর পরেশ বড়ুয়ার অন্যতম সহযোগী পার্থ প্রতীম গগৈ ও তার অনুসারীদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠীর সদস্য কমতে থাকে।
“এরপর থেকে বড়ুয়া তার নিজের গ্রুপের ছেলেদের নিয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছেন। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি দুই বাংলাদেশির উপর আস্থা রাখছেন,” এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করেছে লিখেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
পত্রিকাটির দাবি, পরেশের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন আলমগীর হোসেন ও তার আত্মীয় মো. গোলাম নবী। তারা দুজনই নোয়াখালীর করাতখিল গ্রামের বাসিন্দা। পাসপোস্ট অনুযায়ী দুজনেরই বয়স ২৯ বছর। তাদের পাসপোর্ট নম্বর হল- এএ৮৩৯২২৬৪ এবং এএ১৪৬৩৪৪৮।
আসামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু আলমগীর ও নবীই চীন-মিয়ানমার সীমান্তের রুইলি ঘাঁটিতে পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে থাকেন। তারা তার খাবারও রান্না করে দেন।
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে মিশর দূতাবাসের কাছে থাকার সময় পরেশ বড়ুয়া ওই দুজনকে দলে ভেড়ান (ভাড়া করেন) বলে আসামের সেই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বৃহস্পতিবার কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান প্রশিক্ষক নুরুল হক ওরফে নাইমকে গ্রেপ্তার করার পর বাংলাদেশি ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার আরও তথ্য সামনে এসেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এনআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, ন্যাশনালিস্ট সোস্যালিস্ট অফ নাগাল্যান্ডের (খাপলাং) একটি ঘাঁটিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাইম। খাপলাংয়ের সঙ্গেও উলফার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
মিয়ানমারভিত্তিক এনএসসিএন এবং বাংলাদেশি উগ্রপন্থিদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধ হিসেবে উলফা কাজ করছে বলে ধারণা এনআইএ কর্মকর্তাদের