গোয়াইনঘাটে পাউবোর বাঁধে ধস, উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী
গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতাঃ সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলংয়ের আসামপাড়া গ্রামের ডাউকি নদীর তীরবর্তী সড়কের বাঁধ ধ্বসে গেছে। সেই সাথে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন রয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসি। বাঁধটি নির্মাণে শুরু থেকেই অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এনিয়ে চরম অসন্তোসও প্রকাশ করেছেন তারা। সম্প্রতি গোয়াইনঘাটের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সালাহ উদ্দিন পরিদর্শন করে বাঁধটির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। জানা যায়, বিগত ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এই বাঁধটি নির্মানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক ২৩ লাখ ব্যায় নির্ধারণ করা হয়।
কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী লোকাল সয়েল (স্থানীয় মাটি) দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে এই বাঁধটি নির্মাণ করতে ব্যবহার করা হয়েছে ৪০ শতাংশ মাটি এবং ৬০ শতাংশ বালু। তৎকালীন সময়ে বাঁধটির স্থায়ীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসি। বাঁধ নির্মাণে বেশীর ভাগ বালু ব্যাবহার করায় বছর না ঘুরতেই বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। এরপর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে বাঁধটির অনুকুলে যে বরাদ্ধ দেয়া হয় তা থেকে দায়সাড়া ভাবে মেরামত কাজ সম্পন্ন করা হয় বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসি। পুনরায় বাঁধটির সংস্কার কাজের জন্য চলতি অর্থ বছরে (২০১৪-১৫) প্রায় দশ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয় বলে জানা যায়। কিন্তু বাঁধের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামকা ওয়াস্তে দায়সারা গোছের মেরামত করে চলে যায়। মেরামতের এক মাস পার না হতেই বাঁধটি পুনরায় ধ্বসে গিয়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে যেেকান সময় বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসি।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহিম খান জানান, বাঁধ নির্মাণে প্রায় ৬০ শতাংশ বালু ব্যাবহার করা হয়েছে। তাই তৎকালীন সময়েই বাঁধটি প্রাক্কলন অনুযায়ী পূর্ণ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে একটি অভিযোগ পত্রও প্রেরন করা হয়েছিলো। যার অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিলেটের জেলা প্রশাসক, গোয়াইনঘাটের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বর্তমানে বাঁধটির যে অবস্থা তা যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পাওে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার খায়রুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড যেভাবে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছে শুরুতেই এ নিয়ে ধ্বসে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলাম। বাঁধটি নির্মাণের পর তিন বছরে প্রায় তিনবার ধ্বসে যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়সারা ভাবে বাঁধের মেরামত করে চলে যায়। বাঁধটি এমনিতেই ধ্বসে গেছে এর উপড় গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনের কারণে বর্তমানে বাঁধটিতে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।
এখন শুধু বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার পালা। আর এই বাঁধটি যদি ভেঙ্গে যায় পাহাড়ী ঢলের পানি এখান দিয়ে প্রবেশ করে নষ্ট হয়ে যাবে ফসলী জমি। পাশাপাশি যাতায়তের ভোগান্তীতে পড়বে অত্র এলাকার প্রায় কয়েক হাজার মানুষ।
পূর্ব জাফলং ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল হক ভূইয়া বাবুল জানান, বাঁধটি নির্মাণে শুরু থেকেই অনিয়ম হয়েছিলো। কাজের প্রাক্কলন অনুযায়ী মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেক্ষেত্রে ৬০ শতাংশই বালু ব্যাবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই বাঁধটি ধ্বসে যায়। বর্তমানে বাঁধটি ধ্বসে গিয়ে বড় ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে যেকোন সময় বাঁধটি ভেঙ্গে যেতে পারে। আর গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে বাঁধের অপর পার্শ্বে অবস্থিত তিন চারটি গ্রামের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী সহ সাধারণ লোকজনের যাতায়তের ক্ষেত্রে পোহাতে হবে চরম ভোগান্তি। সেই সাথে পাহাড়ী ঢলের স্রোতের তোড়ে পানি ও বালু প্রবেশ করে বালুর স্তর পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে প্রায় সহস্রাধিক একর ধানি জমি। তাই তিনি বাঁধটি সংস্কারের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন জানান বাঁধ পরিদর্শন শেষে এর সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর সাথে ফোনে কথা বলেছি। তিনি এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে বাঁধটি সংস্কারে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এব্যাপারে মোঠোফোনে জানতে চাইলে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার (এসও) জহির আহমেদ বলেন, সিলেট অফিসে এসে তথ্য নিয়ে যান। মোবাইলে এব্যাপারে কিছুই বলতে চাই না।