সেনা পরিবারের ৪ সদস্যসহ ৫ জন নিহত : বাড়িতে শোকের মাতম
নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের দেবপাড়া ইউপির সদরঘাট গ্রামে কাছে গতকাল সোমবার ভোররাতে ট্রাক-প্রাইভেট কার সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই জাতিসংঘ মিশন ফেরত সেনা সদস্য আবদুল কাদিরসহ একই পরিবারে চারজন ও গাড়ি চালক নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল হামিদ (৭০), তার স্ত্রী কুলসুম বেগম (৫৫), ছেলে সেনা সদস্য আব্দুল কাদির (৩৫), মেয়ে শারমিন আক্তার (১৪) ও জৈন্তাপুর উপজেলার ঘিলাতলি এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে প্রাইভেটকার চালক শাহ আলম (৩২)। নিহত কাদিরের স্ত্রী লাভলি বেগম ও ২ বছরের শিশু লামিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. নুরুন্নবী সরকার জানান, নিহতরা সবাই প্রাইভেট কারের যাত্রী ছিলেন। পাথর বোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো ট-১১-১২৯৪) সাথে প্রাইভেট কারের (সিলেট ক-১১-০৩৪৫) সংঘর্ষে কারটি দুমড়ে-মুচড়েগেছে। স্থানীয় লোকজন ও হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে থানা নিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে থানায় এসে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করেন। ট্রাক ও কার রেকার দিয়ে শেরপুর হাইওয়ে থানায় নেয়া হয়। তবে ট্রাক চালক পালিয়ে গেছে।
হবিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার আফসার উদ্দিন জানান, ঘুমের ক্লান্তি থেকে চালকের অসাবধানতার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
গতকাল সোমবার সকালে মর্মান্তিক সড়ক দুঘর্টনায় একই পরিবারে ৪ সদস্য নিহত হওয়ার খবর বাড়িতে পৌছলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় পরিবেশ ভারি হয়ে আসে। তাদের বুক ফাটা আর্তনাদে উপস্থিত সমবেত লোকজনও অশ্র“সিক্ত হয়ে পড়েন। সড়ক দূর্ঘটনায় সেনা সদস্যসহ একই পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার খবরে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলংয়ের মোহাম্মদপুর এলাকায় নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। নিহত সেনা সদস্য আব্দুল কাদিরের নিকত্মীয় ও স্বজনরা বিলাপ করছেন। কিছুতেই যেনো থামছে না তাদের বুক ফাটা আর্তনাদ। পবিবারের নিহত সদস্যদের নানা স্মুতি মনে হলেই কেদে ওঠেন নিকটাত্মীয়রা।
জানাযায় সেনা সদস্য আব্দুল কাদিরের বাবা আব্দুল হামিদ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি ছোট ছেলে আব্দুল আজিজকে নিয়ে জাফলংয়ে ষ্টোন ক্রাশার মিলের ব্যবসা করছেন। পিতার পথ অনুসরণ করে প্রায় একযুগ আগে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সদস্য হিসেবে যোগদান করেছিলেন আব্দুল কাদির।
বছর দেড়েক আগে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকার দেশ মালিতে গিয়েছিলেন কাদির। মিশন শেষে মাস খানেক আগে দেশে ফিরেন তিনি। ছুটি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বাবা মা ছোট বোন ও স্ত্রী সন্তানসহ কুমিল্লায় আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যান কাদির।
আত্মীয় বাড়ি বেড়ানো শেষে রোববার রাতে জাফলংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেন তারা। পথিমধ্যে ভোর ৫টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ দেবপাড়া এলাকায় ঢাকা অভিমুখি পাথর বোঝাই একটি ট্রাকের নং (ঝিনাইদহ-ট-১১-১২৯৪ ) সাথে তাদের বহনকারী প্রাইভেট কার (সিলেট-খ-১১-০৩৪৫) টিকে সজোরে মুখোমুখি ধাক্কা লাগলে প্রাইভেট কারটি দুমড়ে মুছড়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই সেনা সদস্য আব্দুল কাদির, তার বাবা অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল হামিদ, মা কুলসুমা বেগম, ছোট বোন শারমিন আক্তার ও প্রাইভেটে কার চালক শাহ আলম মারা যান। দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন নিহত সেনা সদস্য কাদিরের স্ত্রী লাভলী বেগম ও একমাত্র শিশু কন্যা নুসরাত জাহান লামিয়া। তারা দুজনই হবিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।