মুক্তিযুদ্ধের আবেগী-ভূয়া ইতিহাস তৈরী করে যেভাবে ধরা খেলেন মন্ত্রী মহসিন আলী
বিভিন্ন সভা সমাবেশে প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মহসিন আলীকে নানা আলোচনা-সমালোচনা সেই মন্ত্রী হবার পর থেকেই। কখনো স্কুলে কোমলমতী শিশুদের সামনে মঞ্চে বসেই সিগারেট খেয়ে আবার কখনোবা প্রকাশ্যে জনসভায় সিগারেট খেয়ে খবরের শিরোনাম হন এই মন্ত্রী। তবে এবার মহসিন আলীর নিজের বিড়ি-সিগারেট খাওয়াকে বৈধ করতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবেগপ্রবণ কাহিনী বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করলেন। তবে তার সেই গল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা।
আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক আলাপচারিতায় ‘পুয়ার লাগি’ সিগারেট খাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই মন্ত্রী বলেন, তার বড় ছেলে ও তিনি নাকি “এক সঙ্গে” মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ‘যুদ্ধের শেষদিকে পাঞ্জাবি সেনারা তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পাঞ্জাবিরা আমিসহ আমার সঙ্গে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানের জন্য ছেলেকে নির্যাতন করে। কিন্তু নির্যাতনের পরও ছেলে মুখ খোলেনি। ’ এই বীরত্বের জন্য নিজের ছেলেকে ‘বাপের বেটা’ আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘হিদিন যদি নির্যাতনের ডরে পুয়ায় আমিসহ আমার সঙ্গে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কইলাইতো তা অইলে আমরা সব খতম অই যাইতাম।
তিনি বলেন, নাম না কওয়ার অপরাধে পুয়ারে পাঞ্জাবিরা মারি লাইছে। যদি নাম কইতো তা অইলে আমিসহ ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধারে মারি লাইত পাঞ্জাবিরা। নিজে মরিয়া আমরারে বাঁচাইয়া দিছে। এর বাদে পুয়ার লাগি টেনশন অইতে লাগল। আর টেনশন কমাইবার লাগিয়া সিগারেট খাইতে শুরু যে করলাম, তা ওখনও আছে।
তার এই বক্তব্যের পরপরই কোনো আগপিছ না ভেবে অথবা সত্যমিথ্যা যাচাই না করেই যথারীতি ক্ষমতাসীন দলের ধামাধরা কিছু মিডিয়া এবং ব্লগার কোমর বেঁধে নেমে পরে এই গল্প প্রচার করে জনসম্মুখে তার এই বিড়ি-সিগারেট খাবার বৈধতা দানে। সেই সাথে প্রগতশীলের ধ্বজাধারী বেশ কিছু ব্লগারও ফেসবুক সহ অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ায় তার এই বক্তব্য প্রচারে কোমড় বেঁধে নেমে পরে।
এবার আমরা দেখে নিই কিছু প্রকৃত সত্য:
প্রথমে জানতে চেষ্টা করব ১৯৭১ সালে মন্ত্রী মহসিন আলীর বয়স কত ছিলো ? সংসদ ভবনের ওয়েবসাইটে এমপিদের তালিকায় মহসিন আলীর জন্মদিন লেখা রয়েছে ১২-১২-১৯৪৮।
এবার আমরা দেখবো মহসিন আলীর মন্ত্রনালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট। যেখানে মহসিন আলীর জন্ম ১২-১২-১৯৪৮ ই লেখা আছে
তাহলে উপরোক্ত ২ সূত্রমতে মহসিন আলীর জন্ম তারিখ ১২-১২-১৯৪৮। আর সেই হিসাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ব শুরুকালীন মন্ত্রী মহসিন আলীর বয়স ছিলো ২২ বছর ৩ মাস। মন্ত্রী মহোদয় ও তথাকথিত প্রগতিশীল মিডিয়া-ব্লগারদের কথা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের যুদ্ধে অংশ নিয়ে মন্ত্রীর ছেলে পাকিস্তানিদের হাতে মারা গিয়েছে।
তাহলে প্রশ্ন উঠে ১৯৭১ সালে ২২ বছর বয়সী মন্ত্রী বিয়ে করলেন কবে আর কবেইবা সন্তান জন্ম দিলেন? আবার সেই সন্তান পাকিস্তানিদের কাছে মহসিন আলীর সহ ২০০ মুক্তিযুদ্বার অবস্থানের খবর না বলার কারণে কিভাবে হত্যা করা হয় ??
পাঠকদের কাছেই প্রশ্ন – মহান মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে এই কথিত প্রগতিশীলদের ব্যাবসা আর কতদিন চলবে? মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অপকর্মকে হালাল করতে আর কতদিন আমাদের এমন হাস্যকর গল্প শুনতে হবে?