মায়ের আশা : মো: শামীম মিয়া
গ্রাম আমদির পাড়া। চারদিক সবুজে ঘেরা, আমাদের পাড়া। মাঠে, মাঠে, রাখালের বাঁশি বাজানো সুর, চলে যায় গ্রাম পেড়িয়ে বহুদুর। গাছে, গাছে, হরেক রকম ফুল, ফল,পাখির ডাক। রাতে জোনাকী পোকার মিটমিট আলো,আহা খুব সুন্দর লাগে দেখতে ভালো। এই গ্রামকে কেন্দ্র করে, আছে একটা বটগাছ। বটগাছটার বয়স প্রায়, একশত বছর হবে। এই বটগাছটার চারদিক দিয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ। বটগাছের দক্ষিনে যমুনা নদী, এবং পশ্চিমে বাঙ্গালী নদী। বটগাছের আশে পাশে বেশ কয়টা দোকান আছে। দক্ষিনে জুমারবাড়ী বাজার, উত্তরে সাঘাটা থানা, কয়েক কিলো দুরে গাইবান্ধা জেলা। বটগাছের নিচে বসে অনেক শ্রমজীবি লোকজন বিশ্রাম নেয়। বটগাছটা থাকার কারনে ভ্যান চালক ভাইয়েরা ও গ্রামের লোকেরা এর নাম দিয়েছে বটতলী। বটতলী নামেই এই জায়গাটা বর্তমান পরিচিত। এই বটগাছের ইতিহাস বলা বাহুল্য।
বটগাছ থেকে পশ্চিমে যাদুদের বাড়ী। যাদু ছোট্ট ছেলে তার বয়স মাত্র সাত বছর। জন্মের পর থেকে সে তার বাবাকে দেখিনী। যাদুর যখন বয়স তার মা সুমাইয়ার পেটে পাঁচ মাস, তখন বাবা এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। যাদুদের বাড়ী আগে ছিলো যমুনা নদীর তীরে। তাদের বাড়ী নদী ভাঙ্গনের সময় ভেসে চলে যায়, তারা প্রানে বেচে গেলেও ফিরে পায়না তাদের ঘর বাড়ী। তারা বড় অসহায় হয়ে যায়। আমাদের গ্রামে আসে। মড়লের কাছে যাদুর মা হাত জোর করে আশ্রয় চায়। মড়ল আশ্রয় দেয় তাদের। অনেক কষ্টে আশ্রয় পায়, কিন্তু খাবার পায় কোথায়। যাদুর বয়স তখন মাত্র দেড় বছর। শিশু যাদু আর কী করে। যাদুর মা মড়লের বাড়িতে কাজ করা শুরু করে। প্রতিদিন হাফ কেজি করে চাল পায়, আর খায় মড়লের বাড়িতেই তিন বেলা। সুমাইয়া প্রতিদিন যে হাফ কেজি চাল পেতো তা জমাতো। তার মনে অনেক আশা যাদু একদিন অনেক বড় হবে, পড়াশুনা করে। রোজ নামাজের পর যাদুর মা সুমাইয়া আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে মুনাজাতে বলতো, আল্লাহ্ তুমি যাদুকে বাচিয়ে রাখো। আমার আশা স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। যে স্বপ্ন দেখেছি তা যেন সত্যি হয়।
সাত বছর পরঃ
যাদু বড় হয়। সুমাইয়া জমানো চাল দিয়ে কয়েক শতক জমি কেনে। কারণ মড়ল আর এই সুন্দর পৃথিবীতে নাই। মড়ল মারা যাওয়ার পর তার ছেলেরা সুমাইয়াকে আর ভালোবাসে না। ছোট্ট একটা খড়ের ঘর আছে সুমাইয়ার। সেখানে সুখেই আছে মা ছেলে মিলে। যাদু রোজ সকালে মোক্তবে যায়। স্কুলে আগামী বার র্ভতি হয়েছে। সুন্দর ফুটফুটে যাদুকে সবাই ভালো বাসে। আদর করে ইচ্ছা করেই অন্য অন্য মানুষ যাদুকে দেখলেই চুমা খেতো। চুমা দিয়ে প্রশ্ন করে তোমার নাম কী ? তুমি কার ছেলে, কোন গ্রামে থাকো তুমি। যাদু সব বলতে পারে। সবাই দোয়া করে যাদু যেন অনেক বড় হয়। কারণ ওর মা ওর জন্য অনেক কষ্ট করেছে, করছে। যাদু সৎ মিথ্যা কথা বলে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। গ্রামের সবার সাথে মিলে মিশে থাকে। যাদু সকালে মোক্তব পড়া শেষ করে স্কুলে যায় প্রতিদিন।
হঠাৎ সুমাইয়া একদিন অসুস্থ হয়ে যায়। তবুও সে অন্যেদের বাড়িতে কাজ করতো। যাদু সকালে স্কুলে যায়। পড়াশুনার দিকে ওর মনোযোগ বেশি। কারণ মা রোজ রাতে বলতো বাবারে আমি তোর জন্যই বেচে আছি। তোকে অনেক বড় হতে হবে যে। যাদু মার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু শুনতো। মার চোখে যখন পানি দেখতো, তখন মার চোখ মুছে দিয়ে বলতো, মা গো তুমি শুধু দোয়া করো। আমি তোমার আশা স্বপ্ন পূরণ করবোই। প্রতিদিনের মতো আজও সে মায়ের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো। মার শরীর টা ভালো না মাথা ব্যথা করছে। মা যাদুকে এতো ভালো বাসে তা বলা বহুল্য। যাদুর ঘুম ভাঙ্গবে বলে মা আর যাদুকে বিছানায় শুয়ালো না। কতই না কষ্ট সহয্য করলো মা। আর কতো? ফোজরের আযান দিচ্ছে ,মার মাথা ব্যথা যেন আরো বেড়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। হঠাৎ চোখের পানি ছিটকে যায় যাদুর মুখে। যাদু জাগনা হয়ে বললো, মা ওমা তুমি ঘুমাওনী ? মা বললো বাবা আমি এখানেই ঘুমাইছি। তুই ওঠ বাবা নামাজ পড়তে যাবি যে। যাদু তৈরী নামাজের জন্য কিন্তু সে একা কিভাবে যাবে মসজিদে। মার সাথেই ঘরে নামাজ পড়লো। মা প্রতিদিনের মতো নামাজের পর কুরআন পড়লেন আজও। আর যাদু মার আচল ধরে বসে থেকে শুনলো।
আজ মোক্তব বন্ধ হুজুর অসুস্থ। স্কুলের পড়া শেষ করে যাদু গোছল করে প্রতিদিনের মতো আজও স্কুলে গেলো। ঘুম পাচ্ছে মার। শুইলো কিন্তু ঘুম তো ধরছেনা। কারন আজ দুপুরে কি খাবে, চিন্তায় পরে যায় সুমাইয়া। পরে ভাবে আবুলের বাবার কাছে থেকে এক শত টাকা ধার নিবো ধার। দুই দিন দিনের মধ্যে টাকা ফিরত দিয়ে দিবো। আবুলের বাবা খুব ভালো আগে থেকেই বিপদে আপদে সাহায্য করে যাদুদের। শুধু যাদুদের না গ্রামের কারো বিপদ দেখলে তিনি যেন ফেরেস্তার মত হাজির হন। তাকে সবাই ভালোবাসে বা সম্মান করে। গ্রামের সবাই আবুলের বাবা আব্বাসকে চাচা বলে ডাকতো।
এই ভাবে কেটে যায় আরো নয়টি মাস। নয় মাস পর।
ফুটফুটে যাদুকে সবাই ভালো বাসে। যাদু ভালো ছাত্র, সে দেখতেও খুব সুন্দর। স্কুলের স্যার ম্যাডামও যাদুকে খুব ভালোবাসে। কারন যাদু যেন যাদু না এক যাদু কর। স্কুলের সব স্যার ম্যাডারা মনে করেন, যাদুই হবে এবার সেরা ছাত্র। সামানে পাশ পরিক্ষা এর আগে যতো পরিক্ষা আছে, সব গুলোতে সবার চাইতে বেশি নাম্বার পেয়েছে এই ছোট্ট যাদুই। এবং প্রথম স্থান পেয়ে আছে বর্তমানে এই যাদু। গ্রামে হৈ পড়ে যায়। সবার মনে প্রশ্ন কী ভাবে এই যাদু প্রথমে স্থান পেলো। তার মা তো পড়া শুনা কিছুই জানেনা। যাদুর গায়ে নাই ভালো এক সেট জামা ভাবতেই অবাক সবাই।
যাদুর সাথে পড়তো পাশের বাড়ীর এক মেয়ে নাম তার চাঁদনী। চাঁদনীরা বেশ বড় লোক। চাদনী সেতো চাঁদের মতোই। দামী দামী জামা কাপড় পরে সে স্কুলে আসতো।
একদিন চাদনী যাদুকে বললো আচ্ছা যাদু তুমি রোজ স্কুলে ছেড়া জামা পরে আসো কেন ? তোমার বাবা মা কী তোমাকে ভালোবাসেনা। যাদু দেখো আমার বাবা আমার জন্য আজই নতুন কাপড় এনেছে। যাদু বাবার কথা শুনে একটা নিঃস্বাস ফেলে বললো, চাদনী আমার বাবা নাই। আমি যখন খুব ছোট্ট তখন আমার বাবা মারা গেছে। মা আমাকে এই দেখো নতুন কাপড় এনে দিয়েছে। আবুলের পুরাতন কাপড় হলে কী হবে এগুলোই আমার কাছে নতুন। জানো চাদনী আমার মা খুব ভালো। যদি এই সুন্দর পৃথিবীতে মার কোন প্রতিযোগিতা হতো তাহলে আমার মাই প্রথম হতো। আমার মাকে আমি হাজারও সালাম জানাই। ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছে তখন এক শিক্ষক এবং বললো কী যাদুকর কী বলা হচ্ছে পুট পুট করে। যাই করো, এক রোল করতেই হবে সামানে পরিক্ষা মনোযোগ সহকারে পড় কেমন ? যাদু মাথা নাড়িয়ে বললো ঠিক আছে স্যার। স্কুলের বড় ছোট ছাত্র/ছাত্রীরা তাকে অথাৎ যাদুকে ভালো বাসে। স্কুলে কাস এর সময় স্যার বলে দিলেন দুইদিনের মধ্যে পরিক্ষার ফি দিতে হবে বিশ টাকা। যাদুর মুখ যেন শুকে গেলো কারণ আজ সকালে মার কাছ থেকে এক টাকা চাইছিলো সে, মা জননী দিতে পারিনী। এতো টাকা মা কী ভাবে দিবে ভাবছে যাদু। কাস আজ প্রতিদিনের মতো সব গুলোই হলো। স্কুল ছুটি যাদু বাড়িতে আসলো, কিন্তু আজ যেন মুখে তার কোন কথা নাই। মা বুঝতে পারলো আসলে যাদুর মন খারাপ। মা বুঝার কারন, যাদু স্কুলে যাওয়ার সময় এবং এসে মাকে সালাম দিতো। আজ সালাম দেইনী মাকে যাদু। মা জননী এই সালামের উত্তর দেওয়ার জন্য অন্যর বাড়ির কাজ ফেলে আসতেন এবং যাদু না আসা পযন্ত দরজায় দাড়িয়ে থাকতেন। মা তাড়াহুড়া করে ঘরে ঢুকলো এবং বললো আব্বা তোমার কী হয়েছে। যাদুর মুখে কোন কথা নাই। আরেক বার বললো মা যাদুকে, বাবা তোমার কী হয়েছে। যাদু সব শেষে বললো, মা আগামীকাল পরিক্ষার ফি দিতে হবে। আমাকে তুমি এক টাকা দিতে পারলে না বিশ টাকা কী ভাবে দিবে বলো। মা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে যাদুর দিকে এবং ভাবছেন এই ছোট্ট শিশু কী ভাবে এই সব বুঝে। মা বললো বাবা তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো কেন ? তা ছাড়া আমি তো জানি তোমার পরিক্ষার কথা। তাই ঐ যে মেলা থেকে তুমি যে ব্যাংক টা এনেছিলে মাটির তাতে তো জমানো আছে হয়তো বিশ টাকারও বেশি। মা যাদুর মুখে হাসি দেখার জন্য তখনী ব্যাংটা এনে ভাঙ্গলো তাতে প্রায় একশত টাকার মতো হবে। যাদুর মনে হাসি এলো আবার মাকে প্রশ্ন করলো মা তুমি এতা টাকা জমালে কী ভাবে ? তোমার পড়নে তো ছেড়া শাড়ী তুমি কেন তোমার জন্য শাড়ী কেননী। মা তখন বলে, বাবারে পড়াশুনা করে তুই একদিন অনেক বড় হবি টাকা রোজগাড় করবী তখনী তোর কাছ থেকে আমি শাড়ী কিনে নিবো দিবিনা বাবা ? যাদু মাকে একটা চুমা দিয়ে বললো, তুমি সত্যি আমার লক্ষি মা। পরেদিন পরিক্ষার ফি দিয়ে এলো যাদু। যাদরু সঙ্গে আব্বাসও গিয়েছিলো। আজ কাস হয়নী কাল পরিক্ষা তাই আগেই ছুটি দিয়েছে স্কুল।
বিকালে: যাদু বিকাল ছাড়া খেলতো না। সেরা খেলোয়ার ছিলো যাদু। তাই বিকাল হলেই তার বন্ধুরা আসতো যাদুর বাড়ীতে ছুটে। যাদুর কাছে। আজও এসেছে আবুল সহ অনেকে। আবুল যাদু যাদু বলে ডাকছে চিৎকার দিয়ে। যাদু ঘর থেকে বাহিড়ে এসে বললো চিল্লাস না মা ঘুমাইছে। আবুল আমি তো খেলতে যাবোনা আজ, আগামীকাল পরিক্ষা আর তোরা খেলার জন্য চিল্লাসচ্ছিস তোদেরও তো পরিক্ষা যা পড়তে বস। আবুল রাগ করে বললো থাক আর যেন খেলতে আসিসনা, আমাদের সাথে গেলাম। যাদু বললো যা যা আমাকে যাওয়া লাগবে না তোরাই নিয়ে যাবি আমাকে। এই কথা বলে যাদু আবার পড়তে বসলো এক টানা রাত নয়টা পযন্ত পড়লো যাদু। মা আজ কোথাও যায়নী কাজ করার জন্য। কারণ যাদুর পরিক্ষা। মার মনেই ছিলো না ঘরে আবার চাল নাই। রাত নয়টা বাজে কেউ তো এখন চালও ধার দিবেনা। আবার মা চিন্তা করছে আমি যদি কারো বাড়ীতে কাজ করতাম তাহলে তো হাফ কেজি চাল পেতাম। মা এখনো নামাজ পড়িনী, নামাজ পড়তে গেলেন। অমনী যাদু এসে দেখে পাতিলে ভাত নাই। ঘরে চালও নাই। মা সেদিন তাকে একশত টাকা ধরেই দিয়েছিলো। যাদু মনে মনে বললো পরিক্ষার ফি আর কলম কিনে বেচেছে ৭০টাকা তা মাকে দিবে কাল চাল আনবে। নামাজ পড়া মার শেষ হলে মাকে ৭০ টাকা দেয় যাদু এবং বললো সকালে চাল আনতে। রাতে অনাহারে থাকলো মা আর যাদু।
আজ পরিক্ষা খাওয়া দাওয়া করে মায়ের পায়ে সালাম করে গেলো পরিক্ষা দিতে। এই ভাবে কষ্টের পর কষ্ট করে পরিক্ষা দিলো যাদু।
একমাস পর :
তার এক মাস পর রেজাল্ট দিবে তার আজ শেষ দিন। আগামী কাল রেজাল্ট দিবে সব অভিভাবকের মুখে একই কথা। যাদুর মা রোজ সকালে নামাজের পর কুরআন পড়ার শেষে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে র্প্রাথনা করে। মুনাজাতে অনেক কাদেন যাদুর জন্য। আল্লাহ্ তাআলা সত্যি মহান তিনি যাদুর মার মুনাজাত কবুল করেন, তাই ,তো যাদুর রোল এক শুধু নয় গোল্ডেন না সবার সেরা এই স্কুলের সেরা যাদু। গ্রামে হৈ, হৈ, উঠেছে কী করে গেলো এই যাদু। আবুলের বাবা আব্বাস যেন আরো বেশি খুশি। কারন এই স্কুলের সভাপতি নতুন র্নিবাচিত হয়েছেন তিনি। তিনি হাজারও অভিভাবকের মধ্যে মাইকে বললেন, সবাইকে সালাম দিয়ে, আজ আমি বেশি খুশি যে তা বলা বাহুল্য। কারণ আজ আপনারা তো বুঝতেই পারছেন আমার প্রথম সভাপতির দিন। প্রথম দিনেই পেলাম একটা সোনার টুকরা ছেলে যাদুকে। সেরা ছাত্র হিসাবে। যাদুর মা তখনো আবুলদের বাড়ীতে কাজ করছেন। আবুলের বাবা আব্বাস বললো প্রিয় অভিভাবকগণ আপনারা জানেন না আবুলের মা এখনো আমার বাসাতে কাজ করছে। একমাত্র যাদুর পড়াশুনা করার জন্য। যাদু তো যাদুকরই আজ সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সেরার আসনে। আব্বাস চোখ মুছে বললো যাদুর মা যাদুর জন্যই এই সব করছে, তবুও যেন তার ছেলে ভালো ভাবে পড়াশুনা করে। আমাদের সমাজে এমন কয়টা আছে যাদুর মা সুমাইয়ার মতো আছে। আজ দেখা যায় বাবা বাড়ীতে বসে বসে শুধু খায় আর ঘুমায়, অবুঝ শিশুর টাকা খেয়ে। শিশুকে লেলিয়ে দিয়েছে কাজে। আমরা একান্ত ভাবে যাদুর জন্য দোয়া করি, আল্লাহ্ তাআলা যাদুর মার আশা যেন পুরোন করে । এবং ওর মার জন্যও। যাদুর মা এক ছেলের কাছ থেকে শুনেছে যাদুর রেজাল্টের কথা। তাই তিনি তাড়াহুড়া করে আসচ্ছে স্কুলের দিকে। রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দেয়। অমনী তিনি ওখানে অজ্ঞান অবস্থায় পরে যান। লোকজন আসার আগেই তার শরীর থেকে অনেক রক্ত পরে যায়। তার শরীর থেকে। ধরাধরি করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই খবর টা আগে পায় আবুলের বাবা অথাৎ স্কুলের সভাপতি। তিনি যাদুকে আড়ালে ডেকে বললো, তোমাকে এক্ষুনী হাসপাতালে যেতে হবে। যাদু চমকে উঠে বললো কেন ? সভাপতি বললো তোমার মা অসুস্থ তাই। যাদুর মাথার মধ্যে যেন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। কিছুক্ষন পর বললো হ্যা চলুন। কাদতে শুরু করলো যাদু ।
সান্তনা দিচ্ছে সভাপতি। এবং বলছে বাবা যাদু তোমার মার কিছুই হবে না।
যাদু মানছে না শুধু আল্লাহ্ কে ডাকছে বার-বার। আর কাদছে। যাদুর মা চোখে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। তার অবস্থা খুব খারাপ এই কথা আব্বাসকে বললো এক ডাক্তার। ডাক্তার সভাপতিকে আড়ালে ডেকে বললেন, ভাই রোগী আপনার কে হন ? আব্বাস বললো প্রতিবেশি। ডাক্তার বললো আসলে রোগী বাচবে তবে। সভাপতি বললো তবে কী? ডাক্তার বললো রোগীর দুইটা চোখ নষ্ট হয়েছে। এই কথা শুনে আব্বাসের মাথার মধ্যে যেন, বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। সভাপতির মাথা যেন ঘুরতে লাগলো। সভাপতি ডাক্তার কে এতো অনুরোধ করলো শুধু পা ধরা বাদে। ভাই আপনী একটু চেষ্টা করেন। খুব গরিব এরা এই দেখুন এই ছেলেটা তার সন্তান আজই স্কুলে সেরা ছাত্র হিসেবে র্নিবাচিত হয়েছে। ডাক্তার বললো আমরা তো পারবোই না, পৃথিবীর কেউ পারবেনা তার চোখ ভালো করতে আল্লাহ্ ছাড়া। তাছাড়া তিনি বেশি দিন আর বাচবেন না। সভাপতিকে লাষ্ট ওয়ালিং দিয়ে দিলো ডাক্তার। সভাপতি ছাড়া কেউ নাই যাদুদের এই বিপদে। সভাপতির চোখে পানি কারণ যাদুর মার মতো সৎ একজন র্পদা নীসি মহিলা আর সাড়া গ্রামেও নাই। তাছাড়া যাদুর অবস্থা কী হবে। ডাক্তার আর আব্বাস এলো যাদুর কাছে। ডাক্তার যাদুকে দেখে ভেজা চোখটা মুছে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো কারণ তার একটাও সন্তান নাই। প্রায় দশ বছর ধরে বিয়ে করেছে। তারপর মাথায় হাত বুলে চলে গেলো তার রুমে। যাদু আব্বাস কে বললো, চাচা মা কোথায় ? আমি মাকে দেখতে চাই। মাকে এখন সালাম দেওয়ার সময় হয়েছে। আমি মাকে সালাম দিবো। সভাপতি বললো ভিজা গলায় কিছুক্ষন পর যাদু একটু অপেক্ষা করো। যাদু যেন মানছেই না। যাদুর একটাই কথা আমি মাকে দেখবো। সভাপতি অবশেষে যাদুকে নিয়ে গেলো ওর মার কাছে। মার এমন মরমান্তিক অবস্থা দেখে ডুকরে কেদে উঠলো যাদু। মা জননী দুটো হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, বাবারে আয় আমার বুকে। যাদু মার কোলে মাথা রেখে বললো, মা গো কেন এমন হলো। আসলে মা আমার কপালটাই খারাপ। মা বললো নারে বাবা আল্লাহ্ যা করে ভালোই তো করে,তাছাড়া আমার কপালে লেখা ছিলো যা তাই হলো। মা ও যাদু জানে না তার দুটো চোখ নষ্ট হয়েছে।
আব্বাস এর বাড়ি থেকে বার বার বাড়ি থেকে ফোন আসচ্ছে। আবুলও জানেনা যাদুর মার এই অবস্থার কথা। আবুলই ফোন দিচ্ছে বাড়ি থেকে বার বার। কারন বাবা আব্বাস সকালে না খেয়ে বেড় হয়েছে, সারা দিন কিছু খাইনী এখন বাজে রাত এগারোটা। আবুল মনে করলো যাদুর মা আজ তাদের বাড়ি আসিনী। আবুলের মা নাই আবুলের যখন পাঁচ বছর বয়স তখন তিনি মারা জান।
এক সময় সভাপতি ফোন রিছিফ করে বাহিরে এসে আবুলকে সব খুলে বললো। আবুল চমকে উঠলো মার চোখ দুটো নষ্টর কথা শুনে। আবুল যেন আগেই ফোনটি কেটে দিলো। আবুলকে যাদুর মা খুব ভালো বাসতো। মায়ের মতো আদর করতো। আবুলের চোখ যেন পানিতে ভরে গেলো মুহুতেই। মনে পরে যায় ওর মার কথা। পাঁচ বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার মুখ খানা। মার আদর পাইনী আবুল তেমন। যা পেয়েছে যাদুর মার কাছে। আবুল ওর মার ছবির সামানে গিয়ে কাদচ্ছে আর বলচ্ছে, মাগো আমাকে ছেড়ে তুমি কেন গেলে পরোপারে। যে আমাকে তোমার আদর দেয় দিয়ে ছিলো সেও তো আজ মৃত্যুর পথে। তুমি দোয়া করো মা, যাদুর মা যেন ভালো হয়। এই কথা বলতেই বাবা আব্বাস এসে ডাকছে বাবা আবুল দরজা খোল। আবুল চোখ দুটো মুছে দরজা খুলে দিলো এবং দেখলো বাবার সঙ্গে যাদুও এসেছে।যাদুকে দেখে আবুলের চোখে যেন পানি এসে যায়। যাদুরও চোখে পানি। আবুল যাদুর চোখ দুটো মুছে দিয়ে বললো যাদু আর কাদিসনা-রে ভাই। দেখিস তোর মা সত্যি ভালো হয়ে যাবে। বাবা আব্বাস আবুলের মুখে এমন কথা শুনে মনে মনে ভাবছে আবুল সত্যি আমার আর্দশই বড় হচ্ছে। বাবা জানে আমি না আসা পযন্ত আবুল খাবেনা। তাই বাবা আবুল আর যাদুকে হাত মুখ ধুয়ে আসতে বললো। যাদু আর আবুল ঘরে না আসতেই ফোন এলো হাসপাতাল থেকে যাদুর মা খুব অসুস্থ। শুধু যাদুকে ডাকছে। আপনি পেলে এক্ষুনী আসেন। আব্বাস আগেই এই কথা বললো না যাদুকে। খাওয়া দাওয়া শেষে বললো, যাদু এক্ষনী যেতে হবে হাসপালে। আবুলকে সভাপতি বললো আবুল তুমি কী বাড়ীতে থাকবে ? আবুল বললো বাবা, আমার একা একা ভয় লাগছে। আমিও যাবো তোমাদের সাথে।
যাদু মনে মনে ভাবছে আমি তো মার সাথে কথা বলেই এলাম। আবুলের বাবাকে এই প্রশ্ন করলে তিনি বলেন আমি জানিনা। কেন ডাকছেন ডাক্তার। আবুল, যাদু ও সভাপতি এলো হাসপাতালে। মার অবস্থা খারাপ যাদু কাদছে। মা বললো বাবারে আয় আমার বুকে। বাবা শেষ বারের মত আয়। যাদু বললো মা গো এমন করে বলো না। তুমি বললে লাক্ষ বার তোমার কাছে আসবো আমি। মাগো তোমার কিছু হবে না দেখো আমি আছি, আবুল আছে, চাচা আছে। মা বললো বাবারে আমি তো আর দেখতে পারবো না। আমার দুই চোখই নষ্ট হয়েছে। যাদু মায়ের বুক থেকে সরে এলো বললো না না মা তা হতে পারেনা, তোমার কিছুই হবে না হয়নী। আবুল কাদছে ওদের দৃশ্য দেখে আব্বাসও। মা সুমাইয়া বললো বাবারে আয় আমার বুকে। আমি তোকে আজ শেষ আদর টুকু করি। যাদু আবারও এলো মার বুকে। মা বললো বাবারে আমাকে ক্ষমা করে দেস, আমাাকে দুরে চলে যেতে হচ্ছে। আমি তোকে শেষ দেখাটা দেখতে পেলামনা বাবা।
আরো বললো বাবা যমুনা নদীর তীরে আমার আতœীয়রা আছে সেখানে চলে যাস, যদি আমাদের গ্রামে থাই না হয়। আব্বাস বললো যাদুর মা তুমি থামো তো। মা বললো ভাই আপনী আমার অনেক উপকার করেছেন। সত্যি আপনী মহান। আবুল বললো চাচী, আমি মা হারা আপনি কোথাও যেতে পারেন না। মা আবুলকে কাছে আসতে বললো এবং আবুলের কপালে একটা চুমা দিয়ে বললো, বাবারে যাদুকে দেখে রেখো। মা বললো, যাদু তুই একদিন অনেক বড় হবি। পড়া শুনা ছাড়িসনা বাবা কষ্টের ফল আল্লাহ্ তোকে একদিন দেবেন। তোর উপড় অনেক ঝড়ঝাপটা আসতে পারে। আব্বাস ভাই আপনার হাতে আমার বুকের ধন কে দিয়ে গেলাম।
এই কথাই শেষ কথা হয় যাদুর মার দুনিয়া থেকে চলে যায় মা সুমাইয়া। যাদু আবুল চিৎকার দিয়ে কেদে উঠলো। এবং যাদু ঐখানেই অজ্ঞান অবস্থায় মাটিতে পরে যায়। ডাক্তারা যাদুরকে সুস্থ করলো। এক দেড় ঘন্টা পর।
এদিকে গ্রামে হৈ পরে যায় যাদুর মা আর নেই এই পৃথিবীতে।
পরের দিন সকাল দশটায় মাটি হয় সুমাইয়ার কেনা জমিতে। যাদু শুধু কাদছে। আসলে মার বেদনার কথা তারাই জানে যাদের মা এই দুনিয়াতে নাই। যাদুর মাকে কবর দেওয়ার পর গ্রামের ময়মুরুব্বিরা বসে যাদুর জন্য। যাদু কোথায় যাবে বা কী করবে এখন। প্রথমেই সভাপতি আব্বাস বললো, যাদু আমার বাড়িতে থাকবে। আমার ছেলের মতো ও বড় হবে। আমি যাদুর দায়িত্ব নিলাম আজ থেকে। গ্রামের সহস সরল মানুষ গুলো সহজেই খুশি হয়ে গেলো। কারন, আব্বাসের মত ভালো মানুষ আর গ্রামে দ্বিতীয় নাই একটা।
যাদু সারাটা দিন কিছু মুখে দেই নি। মায়ের ছবি যেন ওর সামানে শুধু ভাসচ্ছে। মাঝে মাঝে মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠছে যাদু। আসে পাশে থাকা বেশ কয়জন মার বয়সের মহিলা এসে যাদুকে বললো, বাবা রে সবাইকে তো একদিন চলে যেতে হবে। যাদু শুধু ওনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যাদুর মনে যে কতো বেদনা তা যেন কেউ বুঝেনা।
সন্ধ্যা লেগে গেলো আবুল যাদুর জন্য ভাত নিয়ে এলো প্লেটে। যাদুকে আবুল সাথে করে আগেই এনেছে তাদের বাড়িতে। আবুল বললো, যাদু ভাই মা হারার কতো বেদনা তা আমি বুঝি। আর কেদে লাভ কী বল ? এখন আল্লাহ্ তাআলার কাছে দোয়া কর, মাকে যেন জান্নাত দেন। যাদুকে আবুল তুলে খাওয়ালো নিজের হাতে। আবুল যাদুর কয়েক মাস বড়। যাদুকে বললো আবুল আজ থেকে আমরা দুই ভাই। আমি তোর বড় ভাই। এখন মার স্বপ্ন তোকে পূরণ করতেই হবে। চল ঘুমাবী। যাদু শান্তনা পেয়ে একটু শান্তই হলো।
পরের দিন সকালে স্কুলে এলো তারা দুজন। সব ছাত্র/ছাত্রী ঘিরে নিয়েছে যাদুকে। এসব আবুল দেখে সবাইকে যেতে বললো, কারন কে কোন কথা বলচ্ছে তা ঠিক নাই এতে ওর মার কথা বেশি মনে পড়বে। স্কুল করলো ভালোই কিন্তু স্কুল ছুটির পর যাদুর মনে পরে যায় মার কথা। কারন স্কুল থেকে এসেই মাকে সালাম দিতো যাদু। মাকে ভুলতে পৃথিবীর কোন সন্তান পারেনা পারবেনা। মিনতির খেলা মানতে হবে।
যাদু আর আবুল মিলেমিশে রান্না বান্না করে সবাই খায়। আব্বাস অথাৎ আবুলের বাবা যাদুকে খুব ভালো বাসে। যাদুর জীবন আবার যেন নতুন করে শুরু হলো। এই ভাবে চলে যায় আরো একটি বছর। গ্রামের ময়মুরুব্বিরা ও বেশ খুশি। তারা আব্বাস কে বললো একটা বিয়ে করার জন্য। আব্বাস রাজি না, কিন্তু রাজিনা হয়ে উপাই নাই। ওরা তো ব্যস্থ পড়াশুনা নিয়ে। অবশেষে বিয়ে করলো পাশের গ্রামের ডায়নাকে।
ডায়না স্বামীর ঘরে পাঁচ বছর ঘর সংসার করে। তার একটা মেয়ে সন্তানো আছে। ডায়না শিক্ষিত হলেও ওর মনটা পাথরে যেন গড়া। বড় লোকের মেয়ে সে, বড় লোক ভাব আজও যেন তার জায়নী। ডায়নার মেয়ে বিন্দু যাদুর চাইতে এক বছরের ছোট্ট। ডায়না আব্বাস এর ঘরে এলো মানে সুখের আয়নাটা ভাঙ্গলো। ডায়না আগেই জানতো যাদু এ বাড়ির ছেলে না। যাদু তো এবার পঞ্চম শ্রেণীতে। আর বিন্দু র্৪থ শ্রেনীতে। তবে বিন্দু তার মার মতো না। আব্বাস ডায়নাকে ঘরে এনেই পরিচয় করে দেয় যাদু আর আবুলের সাথে। ডায়না প্রথম কয় মাস ভালো ভাবেই দেখলেও পরে যাদুকে আর দেখতে পায়না। তার সাথে আবুলকেও।
সেদিন আব্বাস বাড়িতে নাই।কয়দিনের জন্য ঢাকাতে এসেছে। প্রায় দশদিন থাকতে হবে ঢাকায় আব্বাসকে। ডায়না মনে করে এই সুযোগে যাদুকে তাড়াতে হবে। ডায়নার মতে, যাদু থাকার কারণে বিন্দুকে আব্বাস কম ভালো বাসে। তাই ঠিক করে যাদুর উপর আমি র্নিযাতন শুরু করবো আর যাদু এখান থেকে চলে যাবে। ঠিক তাই করলো।
সেদিন রাতে খাবার বসে ডায়না বললো যাদু আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করবো তুমি তার উত্তর দিবে। আবুল খাওয়া বাদে এই কথা শুনে থমকে দাড়ায়। ডায়না বলে যাদু তুমি আব্বাসের কে ? তুমি এখানে খেয়ে বড় হচ্ছ, এতে আমাদের লাভ কী। যাদু উত্তর দেওয়ার আগে আবুল বললো, যাদু আমার ভাই। আমি যাদুর ভাই। আর ছেলে বাবার এখানে খাবেনা তো কই খাবে। ডায়না রাগী গলায় বললো আবুল তুমি চুপ করো। আমি কথা বলছি। আবুল মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। কিছুক্ষন পর ডায়না বললো আজ থেকে এখানে খেতে গেলে বা থাকতে হলে কাজ করতে হবে। নইলে বাড়ী থেকে বেড় করে দিবো তোমায়। এই কথা শুনে বিন্দু বললো মা তুমি এসব কী বলো বাবা শুনলে মনে খুব দুঃখ পাবে। আবুল রাগে আগুন। যাদুর চোখের পানি দিয়ে বুক টা ভিজে গেলো। ভাত প্লেটে রেখেই চলে গেলো যাদুর রুমে যাদু। বালিসে মুখ খানা দিয়ে কাদতে লাগলো যাদু।
এদিকে আবুল বললো আমি তোমাকে মা বলে ডাকি তাই কিছু বলতে পারলাম না। তবে বাবাকে বলবোই। বিন্দু অবাক হয়ে গেলো মার এই নিষ্টুর আচারণ দেখে। আবুল কথা না বাড়িয়ে চলে এলো যাদুর কাছে। এসে বললো যাদু ভাই আমার তুই কিছু মনে করিসনা। বাবা এলে এর বিচার হবে নইলে আমি থাকবো না এই বাড়িতে। চলে যাবো এই গ্রাম ছেড়ে ওজানা কোন জায়গায়। যাদু এই কথা শুনে বললো ভাইরে মাতো সত্যি কথায় বলেছে। আমি তো পারি বাড়ির কোন কাজ র্কম করতে। আসলে আমার দোষ। এই বুদ্ধি আমার মাথায় আগে আসিনী।
কেটে যায় প্রথম দিন।
পরের দিন সকালে যাদু ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলো আবুল মনে করলো যাদুর মন খারাপ তাই আজ স্কুলে যাবেনা যাদু। আবুল স্কুলে একাই গেলো। যাদু ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে বইয়ের ব্যাগটা গুছে নিচ্ছে, এমন সময় ডায়না এসে বললো যাদু আজ রহমান আসিনী গরু গুলোকে খাবার দে আর পানি খাওয়া। যাদু মার মুখের দিকে মায়াবী চোখে তাকালো কিন্তু কোন লাভ হলো না। ডায়না বললো যদি গরু গুলোকে খাবার না দেস, তাহলে তোরও খাওয়া হবে না। যাদু বইয়ের ব্যাগটা রেখে চলে গেলো গরুকে খাবার দেওয়ার জন্য। গরুকে খাবার দিলো এবং পানি দেওয়ার জন্য গেলে যাদুকে গরু লাথি দেয়। ওমনী সে বারি খায় অন্য একটা বেড়ার সাথে। টিনের সাথে লেগে যাদুর অনেক খানি হাত কেটে য়ায়। রক্ত পড়তে থাকে। চিৎকার দেয় যাদু। ডায়না এলেও যাদুকে আগে গালি দেয়। বলে তিন বেলা খেয়ে খেয়ে মানুষ তো হসনী হয়েছিস একটা গাদা। বিন্দু দৌড়ে এসে যাদুর হাতটা বেধে দেয়, ওর কাপড় ছিড়ে। এতে বিন্দুকেও গালি দেয় তার মা ডায়না। যাদু গিয়ে তার ঘরে বালিসে মুখ রেখে কাদতে লাগলো। মা ডায়না এসে বললো এই কথা যদি আবুল শোনে বা জানে তাহলে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। আর আজ থেকে তোর স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বাড়ির চাকর চাকরাণী সবাইকে বিদায় করে দিবো। এর মধ্যে এলো মড়লের তিন নম্বর ছেলে সানী। সানীর সাথে ডায়নার আগে থেকেই পরিচয় আছে। এবং সানী জানে ডায়না কেমন। এদিকে সানী আবার আব্বাসের শত্রু। স্কুলের সভাপতি পদে সানীও দাড়াইয়া ছিলো। কিন্তু সে তো র্নিবাচিত হতে পারিনী। সানী দ্বারা এমন কোন অপর্কম কাজ নাই তা সে করতে পারেনা। সানী এসে বললো ভাবী আপনী কেমন আছেন ? ডায়না বললো ভাই আপনী আসেন আসেন ভাই বসেন। আর আমি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। সানী বললো আব্বাস কোথাই। ডায়না বললো ঢাকা গেছে আসবে কয়দিন পর।
ডায়নাকে সানী বললো ভাবী এক গ্লাস পানি খেতাম। ডায়না বললো শুধু পানি খাবেন ? সানী বললো আজ পানি খেয়ে যাই আরেকদিন না হয় অন্যকিছু খাবো ডায়না বললো ঠিক আছে। ডায়না ঐখান থেকেই জোরে কন্ঠস্বরে বললো, যাদু এক গ্লাস পানি আনতো। যাদু শুনে ভাবলো তুমি থেকে তুই হয়ে গেলাম। যাই পানিটা দিয়ে আসি। গিয়ে দেখলো সানী, সানীকে দেখে যাদুর হাত পা কাপতে লাগলো। অমনী হাত থেকে পানির গ্লাসটা পরে যায় মাটিতে । আর ডায়না যাদুকে একটা চর মারলো বললো ছোট লোকের বাচ্চা দেখিস না মেহমান এসেছে। যাদু গালে হাত দিয়ে চলে যায় তার রুমে। কাদা ছাড়া ওর আর কিছু করার নাই।
এদিকে সানী বললো ভাবী ওতো এই গ্রামের সেরা ছাত্র ওর গায়ে হাত দিয়েছেন। যদি গ্রামের লোকজন দেখে ফেলে তাহলে কিন্তু খবর খারাপ হবে। ডায়না বললো সেই তালা আমি ওকে দিয়েছি। সানী কানটা একটু আগিয়ে বললো ভাবী কি তালা দিয়েছেন গো ? ডায়না বললো ওকে বলেছি ও যদি এই কথা গুলো আবুলকে বলে তাহলে ওকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। সানী চোখ বড় বড় করে নাচাচ্ছে। সব খুলে বললো সানীকে ডায়না। সানী মনে মনে বললো হ্যা এবার পাইছি আব্বাসকে টেনে নিচে নামানোর পথ। সানী বললো ভাবী শোনেন যাদুকে এই কথা বলে হালাতে পারবেন না। ও জীবন দিবে তবুও আবুলকে বলবে এসব কথা। ডায়না বললো তাহলে কী করা যায় বলুন তো ভাই? সানী বললো ডায়নার কানের কাছে মুখ দিয়ে। ওকে বলতে হবে, এভাবে যদি তুই মানে ওর সাথে যে সব র্নিযাতন সেগুলো করেন তা আবুলকে বলে, তাহলে আবুলের ভাতে বিষ মেশিয়ে দিবেন। আবুল মারা যাবে। ডায়না বললো তাতে ওর লাভ কী ? সানী বললো ভাবী যাদুর জীবন ওর মা আর এই আবুল। মা নেই মারা গেছে আর বাকি আছে আবুল। আবুলকে তো ও হারাতে পারেনা। তাই বলবেও না। এই কথা বলে সানী বললো ভাবী আজ তাহলে আসি কাল আবার আসবো এই খবর শুনতে। ডায়না বললো ঠিক আছে। সানী চলে গেলো। ডায়না যাদুর রুমে গিয়ে বললো এই শোন যাদু আসার আগে তুই আজ ঘর বাড়ি ঝাড়– দিবি। ডায়না যাদুর মাথার চুল ধরে বললো, শোন এই কথা যদি আবুল শোনে আমি তোর উপড় র্নিযাতন করি, তাহলে আমি তোকে না, আবুলকেই মেরে ফেলবো ভাতে বিষ দিয়ে। যাদুর মাথার মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। হঠাৎ পায়ে পরে যায় যাদু ডায়নার। বললো মাগো ওকথা আর বলো না তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। ডায়না বললো আর একটা কথা শুনতে হবে তোকে। যাদু বললো কী বলো, আমি আমার ভাইয়ের জন্য সব করতে পারি। ডায়না বললো তাহলে শোন তোকে এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে। এমন এক জায়গায় যাবি সেখানে কেউ তোকে পাবেনা। যাদুর দু চোখ যেন সাগরের ঠেউ হয়ে গেলো মুহুতেই। চোখের পানি দিয়ে বুক টা ভিজে গেছে। কিছুক্ষন পর ডায়না বললো, এই কী হলো আবুলের জীবন বাচাবী নে তুই যাবি। যাদু ডায়নার মুখের দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বললো, এসব কেন হচ্ছে আমি তো বুঝতে পারছিনা। ডায়না বললো তোর কারণে আমার মেয়ে আব্বাসের তেমন ভালোবাসা পায়না। যাদু বললো কে বলেছে ? এটা তোমার মিথ্যা কথা। আসলে বাবা এই গ্রামের সব ছেলে/মেয়ে কে এক চোখে দেখেন। আবুল কেউ। ডায়না বললো কথা বাড়াসনা আবুল আসবে এখন। কাল সূর্য উঠার আগে চলে যাবি তুই। আর যদি থাকিস বিকালে আবুলের লাশ দেখবী তুই। আমি গেলাম যা যা বললাম তা কর। যাদু মাথা নিচু করে থাকলো ডায়না চলে যাওয়ার পর যাদু ভার আকুল মনে মনোবল নিয়ে বললো মা তো এমন ছিলোনা। এইসব কেন হচ্ছে। আমি যদি সত্যি এখানে থাকি তাহলে আবুলকে মেরে ফেলবে। আমি এখন কী করবো। যাদু মনে মনে বললো মা যে কাজ গুলো করতে বললো তা এখন করি। নইলে সমস্যা হবে। যাদু কাজ করছে এর মধ্যে এসে যায় আবুল। আবুল দৌড়ে যায় যাদুর কাছে বই না রেখেই। যাদু আবুলকে দেখে কাপা গলায় বললো, ভাই আমি মানে এমনীতেই এইসব করছি। আবুলের হঠাৎ চোখ যায় যাদুর হাতের দিকে। আবুল কৌতুহল হয়ে বললো কিরে তোর হাতে এটা কিসের কাপড় বাধা। এবারও কী বলবী এমনী বাধেছিস। যাদু কাপা গলায় বললো ভাই বিশ্বাস কর। আমার কোন দোষ নাই ওরা আজ কাজ করতে আসিনী তো তাই গরু গুলোকে খাবার দিতে গেলে। আমাকে লাথি দেয়। আর অমনী আমি পরে যাই তাই এখানে কেটে যায়। আবুল যেন সহজ ভাবে বুঝে নেয়। কিন্তু যাদুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আবুল এবং বললো ভাই তোর কি হয়েছে বলতো ? তুই আজ এমন করছিস কেন ? যাদু আবারও কাপা গলায় বললো, ভাই আমি কী তোকে মিথ্যা কথা বলতে পারি বল ? আবুল জানে যাদু আমাকে মিথ্যা কথা বলবে না। তাই বললো ঠিক আছে যাদু আসলে তোর কিছু হলে আমার কলিজায় লাগেরে। আমি তোকে খুব ভালো বাসি। যাদু বললো আমি ও। আবুল বললো ভাই আজ কিন্তু পেছন পাড়া যাবো ছকিনা আপার বিয়ে। নাচ গান হবে তা দেখতে। যাদু বললো আমি তো যেতে পারবোনা। আবুল থমকে দ্বারায় কেন যেতে পারবীনা। না তোকে যেতেই হবে। যাদু ভাবছে, ওর যাওয়ার কথা সূর্য উঠার আগে যেতে হবে। আবার ভাবছে যাওয়ার কালে ওর শেষ কথা টা শুনতেই হবে। যাদু বললো যেতে পারি তবে একটা র্শত আছে। আবুল বললো কী র্শত বল ? যাদু বললো আমি কিন্তু সে বাড়িতে থাকতে পারবো না। বা আমি দশটার মধ্যে চলে আসবো। আবুল বললো দেখা যাক। আমিও থাকবো না। যাদু বললো তোকে থাকতেই হবে। কারন বাবা থাকলে তিনি থাকতেন সেখানে। আবুল বললো ঠিক আছে। দেখা যাক।
রাতে খাওয়া দাওয়া করেই যাবে তারা ঠিক করলো। মা ডায়নাকে, আবুল বললো মা বিন্দুকে নিয়ে যাই। ডায়না ভাবলো বিন্দুকেও পাঠাতে হবে নইলে সানী ভাই আসবে আমাদের কথা বলার সমস্যা হবে। ডায়না বললো ঠিক আছে বিন্দু যাবে তবে রাতেই আসবে। এই কথা বলে বললো এসো খেয়ে যাও। ওরা সবাই এক সাথে খেতে বসেছে। ভাত খাচ্ছে এমন সময় ডায়না হাত থেকে একটা মুড়ানো কাগজ বেড় করে দেখালো যাদুকে হাতের ইশারাই। যাদু সত্যি চমকেই উঠেছে। মনে করলো ভাতে বুঝি বিষ মিশানো হয়েছে। যাদু হাতের ইশারাই বললো না না আমি যাবো। যাদুর চোখ দুটো পানিতে ভরে যায়। হঠাৎ আবুলের চোখ পরে যাদুর চোখে। আবুল ভাত খাওয়া বন্ধ করে বললো কিরে ভাই কি হয়েছে তোর। যাদু মিথ্যা বললো, মার কথা মনে পড়েছে। তাই।এই কথা বলে টেবিলে ভাত রেখে উঠে যায় যাদু , ওর সাথে আবুলও। যাদু ওর ঘরে গিয়ে বললো আবুল ভাই তুই খালিনা কেন ? আবুল বললো তুই খালিনা যে তাই। যাদু বললো ভাই আমি যদি কোনদিন না থাকি তাহলে। এই কথা বলতেই আবুল যাদুর মুখে হাত দিয়ে বললো ভাই এমন করে আর বলবিনা কোন দিন কথা দি। যাদু বললো ঠিক আছে। আবুল বললো ঠিক আছে জানি তোর মনটা খারাপ তাই আমিও যাবোনা ছকিনা আপাদের বাড়িতে। রাতে আর যাওয়া হলো না আবুল, যাদু ও বিন্দুর। যাদু পড়ছে আবুল ও পড়তে বসেছিলো রাত দশটা পযন্ত পড়ে ঘুমে যায়। যাদু বার বার দেখছে আবুল ঘুমাইছে না কী। যাদু তার শেষ চিঠি টা লেখছে । যা রেখে সে চলে যাবে। যাদু বললো মনে মনে এটা লেখা কি ঠিক হবে। পরে মনে করলো তা হলে ওর চিন্তা ভাবনা কিছু হলেও কমবে আমার জন্য। চিঠি লেখা শুরু করলো যাদু।
প্রিয়,আমার প্রানের বন্ধু ভাই,
বাবাকে আমার সালাম দেস। আমাকে ক্ষমা করে দেস ভাই আমি চলে গেলাম। আমি আমার নিজের ইচ্ছাই চলে যাচ্ছি। আমি চলে যেতে নাহি চাই তবু চলে যেতে হয়। আমার মনে অনেক আশা ছিলো দুজনে এক সাথে থেকে বড় হবো আমি আমার মায়ের আশা পুরন করবো। তুই তোর বাবার আশা পূরণ করবি। আমার কপালে তা আর সইলো না ভাই। আমি সত্যি তোকে খুব ভালো বাসি। যাবার কালে আমি তোকে কিছু দিতে পারলাম না। দিয়ে গেলাম শুধু আমার দোয়া। আমি শুনে ছিলাম ইতিম ছেলে মেয়েদের দোয়া আল্লাহ্ তাআলা নাকি কুবুল করেন অন্য অন্য দোয়ার চাইতে। যাদু লেখছে আর চোখের পানি পরে যাচ্ছে খাতাতে। যাদু একটু লেখে আর আবুলের দিকে তাকায়। যাদু লেখলো ভাই বাবার প্রতি খেয়াল রাখিস আমি তো চলে যাচ্ছি।আমাকে নিয়ে চিন্তা করিসনা। আমি আল্লাহ্ তাআলার রহমতে ভালোই থাকবো। আমার সাথে তোদের দোয়া আছে। আমার মার দোয়া আছে আল্লাহ্ আমার একটা ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ্। আমি আসবো আবার ফিরে যেদিন আমাকে মা আনতে যাবে। বন্ধু আজ আর নারে আল্লাহ্ হাফেজ।
ইতি
আমি তোর ভাই তোর বন্ধু
(যাদু)
সারা রাত যেন কাদতে থাকে যাদু। তার একটাই প্রশ্ন কেন এমন হলো ? ভোরের আযান দিবে দিবে ভাব এমন সময় ঘর থেকে বেড় হয়ে যায় যাদু। যাবার কালে যাদু আবুলের মাথায় হাত বুলিয়ে যায়। আঙ্গিনায় গিয়ে একটু দাড়িয়ে বাড়িটা এক নজর শেষ দেখা দেখে নিলো। দু”ফোটা চোখের পানি মাটিতে পরে যায়। যাদু চলে যায় তার আসল বাড়িতে। বাড়ির সামানে গেলে যেন মার ছবিটা বার বার ভেসে উঠে ওর মনে। বাড়ির চার পাশটা ভালো করে দেখে চলে যায় গ্রাম ছেড়ে।
এদিকে মা ডায়না স্বপ্ন দেখলো যাদুকে নিয়ে। ডায়নার মত এক নারী এসে ওকে বলচ্ছে এই ডায়না তুই একি করলি। যাদু এই ঘরের লক্ষি। যাদুকে ফিরা। যাদু চলে যাচ্ছে। যাদুর মা নাই বাবা নাই তুই কিভাবে একটা ইতিম ছেলেকে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলি। যাদু থাকলে তোদের ভালো তোর মেয়ের ভালো, পড়াশুনা সব তো যাদুই তোর মেয়েকে শিখায়। যাদু থাকলে তোর মেয়ের ভবিষৎ ভালো হবে। এসব বাদই দি। আজ যদি তোর মেয়ের অবস্থা এমন হয় তাহলে কী করবী বল? তুই যদি আজই মারা যাস তাহলে তোর মেয়েরও অবস্থা তো এমন হবে। যা তুই যাদুকে যেতে দেস না । এই জমি জমা তো ওদেরই আব্বাস তো সেই লোক না। এই কথা বলতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ডায়নার আর চিৎকার দিয়ে উঠে যাদু যাসনারে যাসনা। দৌড়ে আসে যাদুর রুমে এসে দেখলো যাদু নাই। চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো ডায়না। ঘুম ভেঙ্গে গেলো বিন্দু ও আবুলের। দৌড়ে যায় তারা মার কাছে গিলে আবুল বললো কী হয়েছে মা। তুমি এমন করছো কেন। ডায়না বললো একী করলাম বাবারে আমি, যাদু চলে যাচ্ছে। ওকে ফিরা। আবুল বললো, যাদু চলে যাচ্ছে মানে। আবুল ওর ঘরে গিয়ে দেখলো যাদু নাই টেবিলে রাখা সেই চিঠি। আবুল চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়লো এবং শেষে চোখে ছলছল পানি নিয়ে বললো, মা যাদু কোনদিকে গেছে। ডায়না বললো জানিনা ওকে ফিরা বাবা। আবুল বললো মা যদি না পাই যাদুকে তাহলে তোমার বিচার করবে আমার বাবা আর গ্রাম বাসি। আবুল তখনী বেড়িয়ে পরে যাদুর খোজে।
এদিকে যাদু মার কথা রাখার জন্য এলো যমুনা নদীর ধারে। সে দেখলো নদীর চারপাশ ধু ধু করছে। একটা বাড়ি ঘরও নাই। সে মনে করলো হয়তো নদী ভাঙ্গনে সব তছনছ হয়ে গেছে। সে কিছুক্ষন চার দিক তাকিয়ে দেখলো। এবার কোথায় যাবে যাদু। ভাবছে যাদু। এমন সময় একটা একটা লোক ঐপার দিয়ে যাচ্ছে লোকটিকে যাদু ডাকলে লোকটি আসে। এসে যাদুকে দেখে চমকে উঠলো কারণ এতো সুন্দুর ছেলে আবার এতো সকালে। ভাবছে লোকটা এমন সময় বললো, বাবা তুমি। যাদু বললো চাচা আমাকে চেনেন নাকী ? লোকটা বললো না মানে তুমি এতো সকালে হাতে ব্যাগ নিয়ে। যাদু বললো সে অনেক কথা। যাদু বললো চাচা এখানে কি ঘর বাড়ী ছিলো না। লোক টা বললো আসলে আমিও এখানে থাকিনা আজ এসেছি দেখতে জমিজমা গুলো। যাদু বললো আচ্ছা ঠিক আছে চাচা। তবে আমি ঢাকায় কোন নৌকা ধরে যাবো বলতে পারেন। চাচা বললো যেতে হবে ফুলছড়ি ঘাটে তারপর গুটাল, ইসলামপুর দিয়ে ঢাকা। যাদু হাটতে লাগলো ফুলছড়ি ঘাটের দিকে। হাটেতে হাটতে প্রায় দুই ঘন্টার মতো লাগলো।
ফুলছড়ি এসে ঘাটের এক মাঝিকে বললো ভাই নৌকা কখন ছারবে বলতে পারেন কী ? লোকটা বললো আর মাত্র আধা ঘন্টার মতো লাগবে। যাদুর খুব ক্ষুধা পেয়েছে। কিন্তু কাছে যে টাকা আছে তা দিয়ে তো যাওয়ায় হয় কীনা সন্ধেহ আছে। কিছু খেলো না। যাদু পেটে পাথর বেধে রইলো আধা ঘন্টার মতো। যাদু আবারও ঐ লোকটা কে বললো ভাই আর কতো ক্ষন লাগবে নৌকা ছাড়ার। লোকটা বললো এক্ষুনী ছারবো ভাই রে। হঠাৎ মেশিনটা চালু হয়ে গেলো। চললো গুটাল দিয়ে ইসলামপুর হয়ে ঢাকা।
যাদু নৌকায় মার ছবিটা বেড় করে মায়াবি মনমরা হয়ে তাকিয়ে আছে ছবির দিকে। তখন দুর দুরান্ত থেকে একাটা গানের কন্ঠ মাইকে ভেসে আসে গানটি হলোঃ
মাগো তুমি কোথায় আছো
কান্না কী শুনতে পাও
শেষ বারের মত এসে তুমি
আমায় দেখে যাও———–(২)
পথে আমি মাগো পথই আমার ঘর
আমি শিশু পাইনা খুজে মা
করেনা কেউ আদর
মাগো কান্না কী শুনতে পাও
এসো মা আমাকে দেখে যাও—————————————————————-।
যাদু শুধু ভাবছে ওর মায়ের কথা। মার সাথে কাটানোর সময় গুলো এবং আবুলের সাথে কাটানো দিন গুলোর কথা। হঠাৎ ডুকরে কেদে উঠলো যাদু। নৌকার ভদ্র লোকেরা বললো বাবা তুমি কাদছো কেন। যাদুর মুখে কোন কথা নাই। এক মুরুব্বি বললো বাবা তোমার নাম কী। যাদু চোখ দুটো মুছে বললো আমার নাম যাদু। আমি আমদির পাড়া গ্রামের সুমাইয়া বেগমের সন্তান। ঐ লোকটা বললো হ্যা বাবা আমি চিনেছি। আমি একদিন বিপদে পরেছিলাম তোমার মা আমাকে একশত টাকা দিয়ে উপকার করেছিলো। তো বাবা তোমার মা কেমন আছে ? যাদু অবাক চোখে মুরুব্বি রহমতের দিকে তাকিয়ে দুচোখে পানি নিয়ে বললো, চাচা মা আর এই দুনিয়াতে নাই। রহমত বললো তাই নাকী লোকটা খুব খুব ভালো লোক ছিলো। চোখ দুটো মুছে বললো বাবা যাদু তুমি কোথায় যাবে এখন। যাদু বললো চাচা যানিনা আমি কোথায় যাবো। রহমতের অনেক টাকা আছে ঢাকায় বাড়ি আছে আছে গাড়ী। যাদুর সাথে চাচা গল্প করতে করতে এলো গুটাল ঘাটে। যাদু বললো সে মা মারা যাওয়ার পর কী কী ঘটনা ঘটেছিলো। বা কি ভাবে এলো এখানে তা সব খুলে বললো। রহমত চাচা শুনে চোখ দুটো মুছে বললো মানুষ এতো নিষ্টুর হয় কীভাবে। তুই তো শিশু তোর উপর এতো র্নিযাতন। দেখ যাদু তুই গ্রামের মাতব্বরদের কিন্তু বলতে পারতি এই সব কথা। যাদু বললো চাচা মাতব্বরদের কে বললে সভাপতি চাচার ক্ষতি হতো তাই তো বলিনী। রহমত বললো যাদু তোকে আমার বাড়ীতে নিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে কিন্তু তোর চাচী টা ডায়নার চাইতে কঠিন। যাদু বললো তাতে কী হয়েছে। আমি একটা কাজ পেলেই চলে যাবো। মায়ের আশা আমাকে পুরন করতেই হবে। নইলে মায়ের আত্তা কষ্ট পাবে। আমি আমার জীবন দিয়ে মাযের আশা পূরণ করবো। আমাকে শুধু একটু থাই দেন। রহমত প্রথমে রাজি না হলেও পরে বললো ঠিক আছে। চললো ঢাকার দিকে তারা।
এদিকে আবুল সেই সকালে বেড় হয়েছে যাদুর খোজে। এখনো পাইনী। পাবেই বা কোথাই। সে তো ঢাকা ছোয়া ছোয়া। আবুল রাগে আগুন হয়ে বাড়িতে গেলো। ডায়না আবুল কে দেখে দৌড়ে এলো। এসে বললো বাবা যাদু কোথায় ? আবুল প্রথমে জব না দিয়ে চুপ করে রইলো। আরেক বার বললে আবুল বললো সুখের ঘরে রে আগুন লেগে দিয়ে আগুন নিভাতে এসেছো আবার। ডায়না চোখের পানি মুছে বললো বাবারে আমাকে মাফ করে দে। আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। বাবা আমি জানি যে ভুল আমি করেছি তার ক্ষমা হয়না। বাবারে আমাকে বাচা নইলে তোকে আরেক মায়ের লাশ কাদে নিতে হবে। আবুল বললো না না মা তুমি কেন মরবে। আসলে মা যাদুকে আমি খুব ভালো বাসি তো তাই। এই কথা বলে চলে গেলো আবুল ওর রুমে। ডায়না বিন্দুর বুকে মাথা রেখে বললো মা-রে একি হয়ে গেলো। প্রায় আধা ঘন্টা পর ঢাকা থেকে ফোন করলো আব্বাস। বিন্দু এসে দেখলো তার বাবা ফোন দিয়েছে। বিন্দু প্রথমে এসে ফোন হাতে নিয়ে আবুলের কাছে গেলো। আবুল বললো মার কাছে নিয়ে যাও। বিন্দু দৌড়ে আসে মার কাছে। মা বলে আমি তাকে কী বলবো যদি যাদুর কথা জিজ্ঞাস করে ? বার বার ফোন বাজছে মাও বললো আবুলকে দিতে। অবশেষে বিন্দু ফোন ধরলো সালাম দিয়ে বললো, বাবা আপনী কেমন আছেন ? আব্বাস বললো মা গো আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো গো ? বিন্দু বললো আমিও ভালো আছি। তবে বাবা,এই কথাতেই থেমে যায় বিন্দু। আব্বাস বললো মা কি হয়েছে খুলে বলো তো। আব্বাস কে বিন্দু সব খুলে বললো। আব্বাস বললো মা তুমি তোমার মাকে দাও তো। ডায়নাকে ফোন দিলেই কেঁদে ফেলে ডায়না। ডায়না শিকার করে সব কিছু। আব্বাস বুঝতে পারে কার বুদ্বি শুনে ডায়না যাদুকে তাড়াইছে। আব্বাস বললো আবুল কে ফোন টা দিতে। আবুল ও কথা বললো। আব্বাস বললো বাবা আবুল আমি শুনলাম তুমি নাকী কিছুই খাওনী এখনো। তুমি খেয়ে নাও। আমি তো আসছি কাল। আসলে বাবা দশদিন পর যাওয়ার কথা থাকলেও আমার কাজ শেষ কালকেই আসছি তার পর আমরা দুজন যাদুকে খুজবো। আবুল কে আরো বুঝালো আব্বাস। আবুল বললো ঠিক আছে। আবুল ভাত খেলেও খাওয়ার সময় ওর চোখের পানি দিয়ে বুকটা ভিজে যায়।
এদিকে যাদুরা এসে যায় ঢাকায় রহমত চাচার বাড়িতে। কিন্তু চাচার স্ত্রী মজিলা খুব কঠিন লোক তার বড় দুই ছেলে বিলেতে পড়াশুনা করে। আর ছোট্ট ছেলেটা পড়া করে কাস ফাইবে। যাদুও তো কাস ফাইবে। রহমত চাচার ছোট্ট ছেলের নাম রকি। যাদুকে দেখে মজিলা বললো এই ছেলে টা তুমি কোথা থেকে নিয়ে এলে। রহমত বললো আসলে যাদু একটা বিপদে পরেছে তাই ও কয়দিন এখানে থাকবে। মজিলা বললো তো আমার কী ? ওকে কিছু টাকা দিয়ে বাড়ী থেকে চলে যেতে বলো। আমি বাজে রাস্তার কোন ছেলেকে আমার বাড়ীতে আশ্রয় দিতে পারবোনা। রহমত বললো দেখ জমিলা ও খুব ভালো ওতো সেই ধরনের ছেলেইনা। জানোনা ওর মা একদিন আমাকে একশত টাকা দিয়ে উপকার করেছিলো। জমিলার কথা যাদু সব শুনছে। যাদু ভাবলো সে এখনী চলে যাবে কিন্তু এতো রাতে কোথায় যাবে। রকি যাদুকে তার বন্ধু বানায়। যাদুর কাছ থেকে সব শোনে। রাতে খেতে দিলো যাদুকে তবে ঘুমাতে দিলো মেজেতে। যাদু রাতে শুয়ে কাঁদছে মনে মনে কিন্তু চোখের পানি পড়ছে অঝড়ে। ভাবছে আমার কপালে এসব কেন। যাদু আজ নামাজ পড়তে পারিনী। যাদু চোখের পানি মুছে ঘুমাতে চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম তো ধরছে না। মনে পরছে আবুলের কথা বাবা আব্বাসের কথা। মনে পরে মার কথা। মার কথাতে সে আরো কষ্ট পেলো কেননা মা থাকা কালে তার এতো কষ্ট হয়নী। এই সব ভাবছে যাদু। তখন ঠিক এগারোটা বাজে। এর মধ্যে আসে রকি এসে বলে ভাই আমিও তোমার সাথে মাটিতে ঘুমাবো। যাদু বললো না ভাই চাচী দেখলে তোমাকে বকবে। রকি বললো মা আমাকে ডাকার আগেই আমি চলে যাবো। যাদু বললো ঠিক আছে। রকি আর যাদু শুইলো মেজেতে। রকি আবার শুনলো যাদু আসলে কেমন ছাত্র ছিলো। রকি বললো ভাই আমাদের স্কুলে কয়দিন পর এক জাতীয় পত্রিকার পক্ষ থেকে ববিতার প্রতিযোগীতা আছে আমি তো কবিতা জানিনা। তুমি যদি একটা কবিতা লেখে দিতে তাহলে। আমি ঐ কবিতা আবৃতি করতাম। যার কবিতা ভালো হবে বা যে পুরস্কার পাবে তার লেখা পত্রিকায় ছাপানো হবে। যাদু বললো ঠিক আছে ভাই দিবো তবে আমিই তো চলে যাবো হয় তো রাত ফুরে গেলেই। রকি বললো কোথায় যাবে ঢাকা শহর এখন বড় কঠিক শহর হয়েছে কোথাও থাই পাবেনা। জানি হয়তো মা তোমাকে কিছু বলেছে। ভাই তুমি কীছু মনে করবে না তো। আমি বলি তুমি এখানে থেকে যাও কয়দিন। আমার বাসা থেকে তোমার পড়াশুনা হবেনা জানি। আমাদের অনেক টাকা আছে কিন্তু আমার মা টা ভালো না ভাই। তুমি এখানে থেকে যাও। মা যা করতে বলে সেটাই করবে তুমি। এতে যে তোমার পড়াশুনা নষ্ট হবে তা না। তুমি আমার বই নিয়েই পড়বে বৃত্তি পরিক্ষার তো এখনো অনেক সময় আছে। এর মধ্যে কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুমি কী বলো? যাদু মনে মনে বললো আসলেই তো ঠিক। যাদু বললো রকি আমাকে তো রাতে থাকার জন্য জায়গা দিয়েছে। আমি তো আর জোর করে থাকতে পারবো না। রকি বললো আমি আর বাবা তোমার থাকার ব্যবস্থা করবো, যে ভাবেই হক। যাদু বললো ঠিক আছে।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জমিলা এলো যাদুকে দেখার জন্য। জমিলা রাতেও জেগে ছিলো কারন যাদু যদি কিছু চুরি করে পালিয়ে যায়। এসে দেখলো এখনো ঘুমিয়ে আছে যাদু। এসে যাদুকে বললো জমিলা এই এখনো ঘুম থেকে উঠনী কেন ? উঠো এখনী চলে যাও। যাদু ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ব্যাগ গুচ্ছাছে। এমন সময় রহমান বললো বাবারে আমাকে ক্ষমা করে দেস, আমার জন্য তোকে অনেক অপমান সইতে হয়েছে। যাদু বললো না না চাচা আপনার কী দোষ, আসলে আমার কপাল টাই খারাপ। আমি আপনাকে ভালো বাসি। এর মধ্যে এসে জমিলা বললো এখনো যাওনী তুমি। যাদু তাকিয়ে আছে মায়াবী চোখে যাদু কিছুক্ষন পর বললো চাচী আমি কিছু বলতে চাই। মন খারাপ করবেন না তো ? আসলে চাচী আমার কপালই খারাপ এই কথা বললে আবার গুনা হবে। না বলে পারিনা দেখেন চাচী আমার বয়স দশ বছর আমি কেন এখানে ? আমার তো থাকার কথা স্কুলে আমি যেতে পারিনা কেন? ঘুরছি মানুষের দোয়ারে দোয়ারে বলতে পারেন কেন ? আমার উপর কেন এতো র্নিযাতন ? আমার কী নাই আমাকে আপনারা কেন ঘৃনা/অবহেলা করেন। আমার মা নাই বাবা নাই আমি ইতিম। মা মারা যাবার কালে আমাকে বলেছে বাবারে আমি চলে যাচ্ছি তো কী হয়েছে তোর মা আছে বাংলাতে লাক্ষ লাক্ষ। এই বাংলাদেশে ষোলো কোটি মা বাবা ভাই বোন আছে। আমি যাদু একা আমার থাই কেন হয়না বাংলাদেশে। বলতে পারেন চাচী আপনী তো শিক্ষিত আপনী সব বুঝেন। আমি কী দোষ করেছিলাম আমাকে বাড়ী থেকে বেড় করে দিলো। শুধু তিন বেলা তিন মুঠ ভাত এর জন্য পড়েছিলাম সেখানে। এলাম এখানে, এখান থেকেও চলে যাবো। চাচী আমি তো যাচ্ছিই তবে যাবার কালে বলে যাই আমার জায়গায় যদি আপনার ছেলে রকি হতো ? চাচী কথা দিলাম একদিন আমার জন্য শুধু আপনী না সারা বাংলা একদিন র্গব করবে। দোয়া করবেন আল্লাহ্ হাফেজ। সেইখানেও যাদুর থাই মিললো না। আবারও চললো রাস্তার পর রাস্তা পারি দিয়ে। যাদু হাটছে আর বলছে হায়রে সোনার বাংলা রাস্তায় এতো সোনার বাংলা গড়ার হাতিয়ারী শিশু গুলো অনাহারে পরে আছে গাছ তলে কেউ দেখেনা। যাদু তখন ঢাকা মহাখালী ফাইওভার ব্রীজ এর উপরে। চার দিক তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে যাদু বললো হাইরে ঢাকা, তুমি যে সুন্দর তা খোলা কিন্তু তোমার ভিতরের মানুষের চোখ সত্যি ঢাকা। শুনেছিলাম তোমার বুকে উড়ে শুধু টাকা। তাই তো ইতিম পথের শিশুদের মানুষ দেখেও দেখেনা। নাই মানবতা নাই টাকা ছাড়া মানুষের ভালোবাসা। আমি ভেবে ছিলাম ঢাকায় এলে থাকবো মানুষের মাঝে ঢাকা। আমি যদি জানতাম ঢাকায় থাকবে ওরা যাদের আছে টাকা আর ইতিম গুলোর হবে এই পথই রাস্তানা। তাহলে আমি গ্রামেই থাকিতাম ঢাকায় আসতামনা। এই কথা গুলো যাদু মনে মনে বলচ্ছে আর এদিক ওদিক দেখে দেখে সামানে এগোচ্ছে।
এদিকে গ্রামে হৈ পরে যায় যাদু নাই। গ্রামের হাজারও মানুষ আপচস করছে আর বলছে আমাদের গ্রাম থেকে সোনা চলে যেতে পারেনা। আমরা সভাপতিকে ধরবো আমরা যাদুকে চাই। এদিকে সানী হৈ দিয়েছে যাদুকে খুন করা হয়েছে। গ্রামে মানুষ আরো খেপে যায়, অবশেষে সভাপতির বাড়ি ঘিরাও করে গ্রামবাসি।
আবুল বাড়ি নাই সেই ফোজরের নামাজ পরে যাদুর খোজে বেড়িয়েছে। বাড়ী আসার আগে শুনেছে গ্রাম বাসি বাড়ী ঘেরাও করেছে। তাই বাবা আব্বাসের কাছে ফোন দিলো আবুল। আবুল বললো, সব খুলে বাড়ী ঘেরার কথা। আব্বাস বললো ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি। আর বাবা আবুল আমি আসছি আগামী কাল। আবুল বললো ঠিক আছে বাবা। তবে যাদুর খোজ করেন ঢাকাও তো যেতে পারে। আব্বাস বললো ঠিক আছে আমি এখন মহাখালীতে। আমার কাজ প্রায় শেষের দিকে। আবুল বললো ঠিক আছে বাবা আল্লাহ্ হাফেজ।
আবাস বড় চিন্তায় পরে গেলো কি করা যায়। তাই গ্রামের চেয়ারম্যান এর কাছে ফোন দিলো আবাস। তাকে বললো এদিকে সামাল দিতে আমি আসছি আগামীকাল। চেয়ারম্যান বললো ঠিক আছে ভাই তাহলে আমি দেখছি এদিকে আপনী আসেন। রেখে দিলো ফোন আব্বাস তার এক সহযোগীকে সব খুলে বললো। তিনি বললেন, ঠিক আছে ভাই আমরা বিকালে ছেলেটার খোজে বেড় হবো।
এদিকে গ্রাম বাসি চেয়ারম্যান এর কথা শুনে থেমে যায়।
এদিকে যাদু ঢাকার মহাখালী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটু আশ্রয় এর জন্য। কিন্তু যাদুর কপালে থাই যোগার আগে দেখলো রাস্তার ধারে একটা ইতিম ছেলের কান্ড। ছেলেটা রাস্তা দিয়ে যাও একটা মাইক্রো গাড়ীর সামানে দাড়ালো। এবং গাড়ীটা থেমে গেলো। ছেলেটার একটু দুরে দাড়িয়ে গেলো যাদু। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে বড় লোকটা। এবং তখনী একটা সিগারেট ধরালো। তার দাম না হলেও হবে বিশ টাকা। ছেলেটা বললো, স্যার আমাকে পাঁচ টা টাকা দেন আমি সারাদিন কিছু খাইনী। লোকটা বললো ধুর বেটা সরে যা আমার কাছ থেকে, টাকা নেই যা। যাদুর শরীর যেন শিহরে উঠলো একী বলে হায়। পাঁচ টাকা মাত্র। এর মধ্যেই দুই তিন টান সিগারেট খেয়ে ফেলে দিয়ে চলে গেলো লোকটা। যাদু দৌড়ে এলো ছেলেটার কাছে। যাদু বললো, ভাই তোমার নাম কী ছেলেটা চোখের পানি মুছে বললো, আমার নাম নয়ন। যাদু বললো ভাই তুমি কী করো বা কোথায় তোমার বাড়ী, আর তুমি এখানে এলেই বা কি করে? ছেলেটা বললো ভাই সবিই কপাল। আমি কিছুই করিনা সারাদিন পথে পথে রাত হলেই গাছ তলে। আমার কোন ঘর বাড়ি নাই। বাবা নাই, নাই মা জননী আমি ইতিম। তবে আমি হিন্দু। যাদু বললো, ভাই ঐ লোকটার কাছে তুমি কী চেয়েছিলে। ছেলেটা বললো ভাই সারাদিন কিছুই খাইনী। তার কাছ থেকে মাত্র পাঁচ টাকা চেয়েছিলাম খাবো বলে, কিন্তু দিলো না দুরদুর করে তাড়িয়ে দিলো আমাকে, একটা টাকাও দিলো না। যাদু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝেনিলো সত্যি ছেলেটা কিছু খাইনী এখনো। যাদুও তো কিছু খাইনী সারাদিন। যাদু মনে মনে ভাবলো আমার কাছে আছে মাত্র বিশ টাকা তা থেকে দশ টাকা দিয়ে দুজনে কিছু খাই। যাদু ছেলেটার সাথে এক দোকানে গেলো কিন্তু ছেলেটা বললো, ভাই তুমি আনো আমি যাবোনা। যাদু বললো কেন। কিন্তু ছেলেটা বললো খাবার আনো খেতে খেতে সব বলিবো। যাদু দশ টাকা দিয়ে শদাই নিয়ে এলো ছেলেটার কাছে। ছেলেটা বললো, ভাই তুমি কে বা আমাকেই কেনই বা এসব এনে দিলে। যাদু বললো নয়ন ভাই আমি যাদু তোমার মত একজন যা যা বর। যাদু আর নয়ন এক গাছ তলে বসে আছে। যাদু বললো, ভাই তুমি এখানে এলে কী করে বা তোমার বাড়ী কোথায় ছিলো আগে। নয়ন বললো ভাই যানিনা, আমার ধর্ম কী তবে আমার জীবন টা একটা গল্পের মত। এখানে ঐখানে শুধু আমি। ভাই আমার বাবা-মা নাই আমি বড় একা। দিনে রাস্তায় আর রাতে গাছ তলে এই ভাবে আমার জীবনের কয়টা বছর কেটে গেলো। যাদু বললো, বুঝলাম না, তোমার কথা কিছু। নয়ন বললো, হ্যা আমি তোমার মুখ দেখে বলতে পারছি তোমার মনে অনেক দুঃখ আছে। আমার পড়াশুনা নাই বেশি আমি পথের ছেলে। আমার জীবন কাহিনী শুনতে চাও। যাদু বললো হ্যা। নয়ন বললো তাহলে শোনো ঃ আমি শুনেছি আমার বাবার কাছে থেকে আমার নিজের বাবা না পালিতো বাবা। আমি যখন শিশু তখন আমার মাতাল বাবা আমাকে পায় রাস্তার এক গাছতলায়। গভীর রাতে আমি কাদছি। বাবা মাতাল অবস্থায় আমাকে নিয়ে যায় তার বাসায়। তিনি অবশ্য ছিলেন না তেমন কোন বড় লোক। আমাকে পেয়ে তিনি তার জীবনের কিছু দুঃখ হলেও ভুলে যায়। মত খাওয়া প্রায় বাদ দেয়। আমার বয়স যখন ছয় তিনি দুনিয়া থেকে চলে যান পরপারে। আমার কপালে তখন নেমে আসে চরম দুঃখ। যে দুঃখ আমি হয়তো শিশু কালে পাইনী। আমি এভাবে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। তখন আমাকে এক মহিলা এসে নিয়ে যায় তার বাড়ি সেখানেও রইতে পারলাম না। মহিলাটার কোন সন্তান ছিলোনা। আমি তাকে মা বলেই ডাকতাম, তিনি খুব ভালো ছিলেন। কিন্তু তার শ্বাশুরীর র্নিযাতনের কারণে আমি সেখানেও থাকতে পারলাম না। মা নিজেই মাকে চলে আসতে বলে তার বাড়ি থেকে। আমি চলে আসি। তখন থেকেই এই ভাবেই ঘুরি রাস্তায়। দেখা আমার বন্ধুর সাথে। যাদু বললো আগের বন্ধু ? নয়ন বললো না এখানেই আমরা বন্ধু হই। ওছিলো খুব চালাক, ওর বুদ্ধি ছিলো খুব বেশি। ওর সাথে আমি থাকতে পারি মাত্র পাঁচ মাস। তখন খাবারের কোন চিন্তাই ছিলো না। কারন সে একটা দলের হয়ে কাজ করতো। যাদু বললো কি কাজ করতো তোমার বন্ধু ? নয়ন বললো, আমার মতই ওর জীবন কাহিনী আমি ওকে খুব ভালো বাসি। ওর নাম জীবন। ওর মনে স্বপ্ন ছিলো একদিন সে বড় কিছু হবে। কিন্তু আমাদের সমাজ তা হতে দেইনি এই ছোট্ট ছেলেটাকে। বানাইয়েছে বড় সন্ত্রাস। আমি আর জীবন একদিন খাবারের খোজে ঘুরে বেড়াচ্ছি এই ডাচবিন থেকে ঐ ডাচবিনে। তখন একটা মাইক্্েরা করে এক ভদ্র লোক আসে। আমাদের ডাকলো আমি আর জীবন এলাম, তার কাছে। আমাদের তিনি বললেন, তোমাদের পেট ভরে খাওয়াবো, তোমাদেরকে অনেক টাকা দিবো। তোমরা যদি আমার একটা কাজ করে দাও। জীবন বললো, কী কাজ স্যার ? তখন তিনি বললেন, একটা ব্যাগ দিবো সেইটা তোমরা আগামীকাল স্কুল মাঠে মিটিং চলা কালে রাখে আসবে। আসলে ব্যাগে ছিলো বোমা। জীবন বুঝতে পারে যে আমাকে দিয়ে দুই নম্বর কাজ করে নিবে। তাই সে কয়টা টাকার জন্য আমাকে রেখে যায় যদি ধরা পরে সে একাই পরবে। আমাকে ও খুব ভালো বাসতো। ও সেদিন কাজে যাবার সময় আমাকে বলে গিয়েছিলো, আমি ফিরে এলে তোকে একটা স্কুলে র্ভতি করে দিবো। আরো বলে, আমি যদি না আসি ফিরে তুই এখানে থাকবীনা। মহাখালী যাবী তাই এলাম। কিন্তু সেই যে গেলো আর ফিরে এলো না। যাদু বললো আগে কোথায় ছিলে ? নয়ন বললো গাজীপুরে। যাদু বললো আসলে আমি তো এর আগে ঢাকায় আসিনী তাই চিনিওনা। তারপর=নয়ন বললো আমি এখানে এসে মানুষের লাথি গুরি খেয়ে এখানে এভাবে আছি। তবে তোমার নাম কী ? যাদুকে প্রশ্ন করলো নয়ন। যাদু বললো এক বার তো বললাম ঠিক আছে আবার বলি, আমার নাম যাদু। নয়ন বললো তোমার বাসা কোথায় বা তুমি এখানে এলে কিভাবে বা কেন। যাদু বললো শুতে চাও ? তাহলে শোনো। যাদু ওর জীবনের সব ঘটনা গুলো বললো। নয়ন চোখের পানি ফেলে বললো ভাই তুমি তাও তোমার মায়ের আদর পেয়েছো। আমি বিশ্বাস করো এক মিনিটের জন্যও মায়ের আদর পাইনী। তবে ভাই তোমার এখানে আশাটা ঠিক হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। তুমি তো সেরা ছাত্র। তোমার বন্ধুকে বাচাতে তোমার জীবন নষ্ট। যাদু বললো হ্যা। এই বন্ধুর জন্যই আমি এতো দুর এসেছি নইলে আমার জীবন আরো আগে নষ্ট হয়ে যেতো। যাদু বললো, আমার একটা কাজের দরকার কী করা যায়। নয়ন বললো কী কাজ করবে কেউ তো কোন কাজ দিবেনা আমাদের। যাদু বললো, দিবে বাংলাবাদেশে কী সব বড়লোকরা এক। চলো দেখি কী করা যায় তুমি যাবে আমার সাথে ? নয়ন বললো হ্যা যাবো। বিকাল দুইটা বেজে গেলো। নয়নের পড়নে যা ছিলো তাই নিয়ে চললো কাজের খোজে। আবারও মহাখালী ফাইওভার এর উপর দিয়ে। আব্বাস ও খোজ করছে, যাদুকে খুজচ্ছে। নয়ন বললো,ভাই তুমি কাজ করতে পারবে তো। যাদু বললো পারবোনা কেন ? আমাদের কে তো কাজ করেই খেতে হবে। নয়ন বললো এই ঢাকা শহরে এক বেলা ভাত জুটলে দুই বেলাই ঐ সব বড় লোকদের লাথি গুড়ি জুটে । কাজ পাবো বলে তো আমার মনে হয়না। যাদু বললো, তা হলে কী করবে। চুরি ডাকাতি। নয়ন বললো, তা নয় আমি জানিনা কী করবো। চলো আল্লাহ্র নাম নিয়ে। ফাইওভার ব্রিজ এর মাঝখানে ওরা এমন সময় নয়ন বললো, বন্ধু যাদু ঐ দিকে তাকাও দেখো কুকুরকে মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছে একজন বাঙ্গালী। আর আমরা অনাহারে পথে পথে ঘুরি। নয়ন বললো, আমার পালিত বাবা একদিন বলেছিলো আমরা নাকি সোনার বাংলা গড়ার হাতিয়ারী। যাদু বললো, সত্যি তো বলেছে তোমার বাবা। নয়ন বললো, তো আমরা কেন ক্ষুধার জ্বালায় মরি। জানোনা আমাদের পাশের বস্তিতে এক শিশু কয়দিন অনাহারে থাকার পর এই দুনিয়া থেকে চলে যায়। যাদু বললো বলো কী ? নয়ন বললো, আমরা পথের শিশু হতে পারি তবে মিথ্যা কথা বলিনা। আমাদের সোনার বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ নাই। যদি তাই হতো তাহলে বাংলার শিশুদের বদলে বিদেশি কুকুরদের মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াতো না। যাদু বললো, দেখো বাংলাদেশ থেকে শিশু র্শ্রম শিশুদের ক্ষুধা একদিন মুক্ত হবে ইনশাআল্লা। এই কথা গুলো বলছে আর এগছে ওরা দুজন। এমন সময় আব্বাস এসে হাজির যাদুদের সামানে। যাদুর মাথার মধ্যে যেন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগলো। আব্বাস কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো। যাদুরে এই যাদু তুই পারলী আমাকে ছেড়ে আসতে। নয়ন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। যাদুর মুহুতেই যেন চোখটা ভিজে যায়। যাদু বললো, বাবা তুমি কেমন আছো ? বাবা চোখ দুটো মুছে বললো আল্হদুআল্লা আমি তোকে ফিরে পেয়েছিরে বাবা। আমি ভালো আছি-রে। তবে! যাদু বললো তবে কী আব্বাস বললো আবুলের অবস্থা বেশি ভালো না-রে।ও শুধু তোর কথায় ভাবছে বাবা চল আমার সাথে আমি সব শুনেছি, আমি তোকে সব খুলে বলছি। যাদু আসলে সভাপতি আব্বাস এর সামানে বা কথায় কোনদিন না শব্দ করিনী। যাদু নয়ন, আব্বাস ও আব্বাসের সহযোগী মিলে এলো বাসায়। যাদু নয়নের সমন্ধে সব খুলে বললো। সভাপতি আব্বাস বললো, যাদু তোর মা মারা যাওয়ার পর থেকে তুই আমার কাছে আমাকে যেমন বাবা বলে ডাকিস, তেমনী আজ থেকে নয়নও আমাকে বাবা বলে ডাকবে। যাদু আমি সুনেছি তোর সব কথা আসলে ডায়না তার ভুল সব বুঝতে পেরেছে। আর তুই হাড়িয়েছিস এই কথা শুনে গ্রামের লোকজন, আমার বাড়ী ঘিরাও করেছে। যাদু চমকে উঠে বললো, কী বলেন ? চলেন এখনী। আব্বাস বললো আমি চেয়াম্যানকে বলে দিয়েছি,এখন ঠান্ডা আছে এলাকা। যাদু বললো, বাবা কখন যাবেন বাড়ি। আব্বাস বললো তোকে পেয়েছি আমি আজই যাবো। যাদু বললো বাবা নয়নও তো যাবে আমাদের সাথে। আব্বাস বললো হ্যা নয়নও যাবে আমাদের সাথে। যাদু তুমি শুনলে খুশি হবে যে, আমরা আগামী মাসেই ইতিম খানা খুলবো। যাদুর মন খুশিতে যেন ভরে গেলো। কারন ইতিম খানা খুলা এই বুদ্ধিটা যাদুর।
রাতে তারা গাড়ীতে উঠলো, বাড়িতে আসার উদ্দশ্যে এই খবরটা বিকালেই পেয়েছে আবুল, যাদুকে পাওয়া গেছে। আবুল গ্রামের সবাইকে বলেদিলো যাদুকে পাওয়া গেছে। গ্রামে যেন হৈ পরে যায় যাদুকে পাওয়া গেছে। যাদু ও
নয়ন আসার পথে আব্বাসকে সব বললো। যাদুর সাথে ওর কিভাবে পরিচয় হয়েছে। এবং ঢাকা শহরের অসাধু কিছু লোকের কথা যারা দিতে বা নিতে পারে না শিশুদের ভালোবাসা। যারা কুকুরদের ভাত খাওয়ায় মাংস দিয়ে। আর পাশে রাস্তার ধারে অনাহারে মারা যায় শিশু গুলে। আব্বাস বললো, বাবা যাদু তোকে তোর মায়ের আশা পূরণ করতেই হবে। আর তুই এমন কিছু করবি যাতে বাংলাদেশে থাকবে না যেন কোন ইতিম শিশু শ্রমিক, শিশু ডাচবিনে খাবার খোজার মতো কোনো শিশু। আমার যত টুকু সর্মথ্য আমি ইতিম শিশুদের আমার ইতিম খানায় রাখবো বা আনবো। যাদু বললো, হ্যা তাই হবে বাবা। আমার জন্য শুধু দোয়া করবেন। আব্বাস বললো সন্তানদের কে পৃথিবীর কোন বাবা মা বদ দোয়া দেয়না। ছেলেরা ভালো থাকবে এইটাই বাবার প্রথম আশা। আব্বাস এর চোখ মুছে দিলো যাদু বললো, বাবা সত্যি তুমি খুব ভালো।
সকালে এসে যায় ওরা তিন জন জুমার বাড়ী বাজার দিয়ে আমদিপাড়া গ্রামের বটতলী।
আহারে কী সুন্দর গ্রাম বলছে নয়ন। যাদু বললো বন্ধু এখনী অবাক হয়ে গেলে আরো সামানে ।
ভাবতেই অবাক গ্রামের মানুষ গুলো এতো ভালোবাসে যাদুকে। শুধু গ্রামের লোকজন না তার স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকা শির্ক্ষাথী ভাই বোন বন্ধুরাও। তাইতো যাদু ফিরে আসচ্ছে, এই উপলক্ষে সব ছাত্র/ছাত্রীরা দশটাকা করে দিয়েছে অনুষ্ঠান করার জন্য। শিক্ষক শিক্ষিকারা ও দিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। বাড়িতে না আসতেই রাস্তাই ঘিরে ফেলে গ্রামের লোকজন যাদুকে দেখার জন্য। যাদু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে লোকজনের দিকে, আর মনে মনে ভাবছে গ্রামের লোকজন আমাকে এতো ভালোবাসে, আমি বুঝতে পারিনী। এক সময় যাদুর চোখের পানিতে ওর বুকটা ভিজে যায়। নয়ন বললো মনে মনে আসলেই সব যেন পাল্টে গেলো। এই সব কি হচ্ছে, আমি কীছুই বুঝতে পারলাম না। যাদু এসেছে এই কথা শুনে আবুল পাগলের মতো ছুটতে লাগলো বটতলীর দিকে। এসে যাদুকে বুকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আবুল। আবুল বললো, কথা দি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবিনা তুই। যাদুও আবুল কে বুকে জরিয়ে বললো না আমি তোকে ছাড়া আর কোথাও যাবো না। আমাকে তুই ক্ষমা করে দে। নয়ন ও আর চোখে পানি রাখতে পারলো না। এইখানে আসা এমন কোন লোক নাই যে তার চোখ পানি ছাড়া। অবশেষে এলো বিন্দু আর মা ডায়না। যাদু একবার মা বলে, ডাকদিলো মা। ডায়নার বুকে যেন কেপে উঠলো এবং কিছুক্ষন মায়াবী অশত্রু চোখে তাকিয়ে বললো বাবারে আমাকে ক্ষমা করে দে আমি আজ বুঝতে পারছি, আমি বড় ভুল করেছি। এই কথা বলে যাদুরা সবাই এলো বাড়িতে। নয়নকে যাদু বললো, বন্ধু তুমি কিছু মনে করিওনা আমি আমাদের গ্রামটা দেখাতে পারলামনা। আসলে তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো। নয়ন বললো পরে দেখে নিবো। তখনী এলো স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক। এসে বললো আব্বাসকে, আব্বাস ভাই যাদু বেড় হয়েছে এই কারনে ওর বন্ধুরা একটা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে। যাদুরা পাশের রুমে। যাদু এসে স্যারকে সালাম দিলো, স্যার বললো যাদু তুমি সত্যি ভাগ্যবান। আব্বাস খুশিই হলো। বললো ভালোই হলো ইতিম খানার কথাটা এখানেই বলা যাবে। তারা দুপুর পর এলো স্কুলে। নয়ন যাদুকে বললো যাদু সত্যি তুই ভাগ্যবান। যাদু মুছকী হেসে বললো, সবই আল্লাহ্ তালার রহমত এবং মায়ের দোয়া। যাদু মঞ্চে উঠে সবাইকে সালাম দিলো এবং বললো বন্ধুরা তোমারা কেমন আছো ? সবাই বললো ভালো আছি। যাদু বললো, সত্যি আমি আজ বুঝতে পারছি তোমরা আমাকে কত ভালো বাসো। আমি তোমাদের ছাড়া আর কোথাও যাবোনা। এবার যাদু বললো বন্ধুরা তোমরা জানোনা ঢাকায় যারা ইতিম শিশু আছে তাড়া কতো দুঃখে আছে, আমি আমরা দোয়া করি আল্লাহ্ তায়ালা যেন ওদের একটা রাস্থানা দেয় বাংলার ঐসব মানুষদের মনে। যাদু এমন সময় লক্ষ করলো তার ছবি তুলছে কয়েকজন সাংবাদিক যাদু বললো ভাই দুই হাত তুলে আপনাদের কাছে অনুরোধ করি, আমার মতো যতো পথও শিশু আছে তাদের কথা আপনাদের টিভি পত্রিকায় তুলে ধরবেন। বাংলার মানুষদের কে জানাবেন সমাজকে নয় আমাদের মনকে পাল্টাতে হবে। সমাজ কাদের নিয়ে গড়বো আমরা সমাজ, তারা তো থাকছে পথে আমাদের সমাজ থেকে অনেক দুরে। আগে শিশুদের আনতে হবে আমাদের ঘরে তারপর সমাজ। আরো অনেক কথা বললো যাদু। যাদু বক্তব্য শুনে সাংবাদিক সহ বিভিন্ন লোক জন এবং তার বন্ধুরা করতালি দিলো। যাদু নয়নকে পরিচয় করে দেয়। বলে নয়ন আমার বন্ধু। আমি আবুল নয়ন এবং আমরা গড়তে চাই পথও শিশু ও শিশু র্শ্রম মুক্ত বাংলাদেশ। এর পর বক্তব্য দেয় আব্বাস এবং গ্রামের ময়মুরুব্বিরা। অনেকে যাদুকে প্রশ্ন করে সে কোথায় থাকবে ? যাদু বলে যেখানে ছিলাম সেখানেই থাকবো। আমার জন্য দোয়া করবেন শুধু আপনারা।
ডায়না এখন যাদু নয়ন আবুলকে তার ছেলের মতো ভালো বাসে। নয়ন শুরু করে ওর নতুন জীবন। নয়ন আবুলের বন্ধু হয়ে যায়। আব্বাসের ইতিম খানায় মোট ছেলে মেয়ে তিনর্শতও বেশি। ইতিম খানার নাম রেখেছে মায়ের আশা। যাদুর মায়ের আশা, ছিলো যাদু একদিন বড় কোনকিছু হয়ে মানুষের সেবা করবে। তাই যাদু ঠিক করে সে ডাক্তার হবে।
তাই আগের মতই পড়াশুনা শুরু করলো।
সমাপ্ত