সিকৃবির ছাত্রী হলে বোরকা পরা ছাত্র; অনৈতিক কর্মকান্ডে বহিষ্কার ৩
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভূতপূর্ব ‘কাহিনি’র জন্ম দিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। বাড়িতে স্ত্রী রেখে এক সহপাঠীর সাথে বন্ধুত্ব, প্রেম, পরিণয়ের পর ডিভোর্স তারপর একই ছাত্রীর বান্ধবীর সাথে জড়িয়েছেন সম্পর্কে। এনিয়ে কয়েক বছরের নানা কাহিনির পর তারা তিনজনই সিকৃবি থেকে বহিষ্কার হয়েছেন।
অসামাজিকতার দায়ে ছাত্রকে আজীবন বহিষ্কার করা হলেও দুই ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শাহ জামাল হোসেন সবুজ ভেটেরিনারি অ্যানিমেল সায়েন্স ২০০৯-২০১০ বর্ষের ছাত্র। সাময়িক বহিষ্কৃত দুই ছাত্রী ওই বিভাগের একই বর্ষের শিক্ষার্থী। দুই ছাত্রী সিকৃবির সুহাসিনী দাশ হলে থাকতেন।
অনুসন্ধানে সিকৃবি সূত্রে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানা গেছে, সবুজের বাড়ি রাজশীহর মোহনপুর উপজেলায়। তিনি বিবাহিত। বাড়িতে তার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছেন। এই অবস্থায়ই তিনি সিকৃবিতে ভর্তি হন। তখন একই ক্লাসের শিক্ষার্থী জয়িতার (ছদ্মনাম) সাথে বন্ধুত্ব থেকে প্রেমে জড়ান। গোপনে সারেন বিয়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে তার স্ত্রী ও পরিবারের অভিভাকদের সিকৃবিতে ডাকা হয়। বসে মিটিং। স্ত্রী ও অভিভাকদের চাপে ওই মিটিংয়েই জয়িতাকে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়। তারপর থেকে সবুজ-জয়িতার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন।
কিন্তু এর কিছুদিন পর জয়িতারই এক বান্ধবী নমিতার (ছদ্মনাম) সাথে নতুন করে প্রেমে জড়ান সবুজ। তখন জয়িতা ও নমিতার মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সবুজ-নমিতার প্রেমের খবর পৌঁছে পরিবারে। স্ত্রী ও অভিভাবকদের সাথে নতুন প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ান ‘সাবেক স্ত্রী’ জয়িতাও। এইসব কাহিনির পর জয়িতাকে ‘সরিয়ে দেওয়ার’ প্ল্যান নেন সবুজ। সেই মতে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গার্ডদের ম্যানেজ করে নমিতার সহায়তায় অনুপ্রবেশ করেন সুহাসিনী দাশ ছাত্রী হলে। একই হলেই থাকেন জয়িতা ও নমিতা। হলে প্রবেশের সময় কেউ যাতে বুঝতে না পারে, সে জন্যে ব্যবহার করেন বোরকা।
সিকৃবি সূত্র জানায়, এই সব ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সিকৃবির প্রায় সবাই এসব বিষয়ে কমবেশ অবগত। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত ও সুরাহা করতে গঠিত হয় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির আহবায়ক ছিলেন ছাত্র কল্যাণ উপদেষ্টা প্রফেসর মতিউর রহমান হাওলাদার। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই ২৮ এপ্রিল তিনজনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে সিকৃবির প্রক্টর প্রফেসর আব্দুল বাসেত ঘটনার সতত্য স্বীকার করে জানান, কমিটির রিপোর্টের আলোকেই তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিশেষ বিবেচনায় ছাত্রীদের আগামী দুই সেমিস্টারের জন্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে সবুজকে আজীবনের জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিন কমিটির সভায় ‘অর্ডিন্যান্স ফর স্টুডেন্ট’ বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। ঘটনার সতত্য স্বীকার করেন সুহাসিনী দাশ হলের সহকারী প্রভোস্ট রুবায়েত নাজনিনও।
এ ব্যাপারে জানতে কমিটির আহবায়ক প্রফেসর মতিউর রহমান হাওলাদারের সেলফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।