ভারতীয় সিরিয়ালের গ্রাসে দেশীয় সংস্কৃতি
বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখপূর্বক সম্ভবত ২০০৪ সালে এনটিভিতে একটি নাটক প্রচার করা হয়েছিল । যেটিতে দেখানো হয়েছিল, ঈদের দিন এক লোক ঈদের নামজ আদায়ের উদ্দেশ্যে ঈদগাহে যাচ্ছে । অপর এক প্রতিবেশী তাকে জিজ্ঞাসা করল, কোথায় যাওয়া হচ্ছে ? তিনি উত্তরে বললেন, ‘ঈদমন্ডপে’ ঈদের নামাজ আদায় করতে যাচ্ছি । তখন উপস্থিত লোকেরা তাকে গণপিটুনি দিয়েছিল । কল্পিত নাটকের সে দৃশ্য আজকের নির্মম বাস্তবতা । যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিল, যতদিন বাংলাদেশের মাটি, আকাশ, বাতাস ও পানি থাকবে ততদিন বাংলাদেশের সংস্কৃতি থাকবে । মরহুমের দেখা না দেখা অনেক স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলেও বাংলাদেশের সংস্কৃতির স্থায়ীত্ব নিয়ে তার নিশ্চয়তা সম্ভবত টিকবে না । প্রবাহমান বাংলার ঐতহ্যবাহী সংস্কৃতিতে যেভাবে বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় সংস্কৃতির মোড়কে বাস্তবতা বিবর্জিত কাল্পনিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় সৃষ্টিকারী সংস্কৃতির নগ্ন আগ্রাসন চালানো হচ্ছে তাতে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় বাকী আছে বলে মনে হয়না । বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ সংস্কৃতি বলতে শুধু টেলিভিশন ইঙ্গিত করে এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বলতে ভারতীয় সিরিয়াল ছাড়া অন্য কিছু নয় । দেশের মোট টিভি দর্শনার্থীর ৮০ ভাগ নারী এবং নারীদের ৯০ ভাগেরও বেশি টিভি অনুষ্ঠান বলতে কেবল ভারতীয় সিরিয়ালে সীমাবদ্ধ । ভারতীয় এসব সিরিয়াল থেকে তবুও যদি ইতিবাচক কিছু শেখা যেত ! এসকল ভারতীয় সিরিয়াল যেমন পারিবারিক শান্তি কেড়ে নিয়ে কুটনামি, পরকীয়া তথা নষ্ট সংস্কৃতির চর্চায় উদ্ভূদ্ধ করছে তেমনি খুঁটিনাটি কারনে ডিভোর্সের মত সর্বনিম্ন বৈধতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে । সিরিয়ালের নেতিবাচকতায় প্রভাবিত সমাজের সর্বত্র । দেশীয় ঐতিহ্যের ধারক যৌথ পরিবারগুলোকে ভেঙ্গে একক ও অনু পরিবারের রূপ দিয়েছে । নষ্ট সংস্কৃতির চর্চায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অমূল্য সম্পর্কে দিন দিন দূরত্ব তৈরি হচ্ছে । মা-মেয়ে এবং বাবা-ছেলেদের মধ্যে টিভি-রিমোট দখলের প্রতিযোগীতায় সাংসারিক অশান্তি নিত্যকার ব্যাপার । পরিবারের ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের অন্তরায় হিসেবে পারিবারিক কলহ নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে । শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ণের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে । আত্মহত্যার মত ঘৃণিত ঘটনার সূত্রপাতেও ভারতীয় সিরিয়াগুলো সরাসরি প্রভাব ফেলছে । বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের অন্যতম আলোচিত নক্ষত্র, জনপ্রিয় বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপস্থাপক ও পরিচালক হানিফ সংকেত আমাদের জীবনে ভারতীয় সিরিয়ালের কূফল উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘হিন্দি টিভি সিরিয়াল দেখছি আর শিখছি কুটনামির কুট সম্ভ্রম লুট কলহ-দাঙ্গা সংসার ভাঙ্গা পরকীয়া প্রীতি নষ্ট সংস্কৃতি’ । সংস্কৃতিমনা জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে । তবে সে সুনাম হয়ত কিছুদিনের মধ্যেই দুর্নামে রূপ লাভ করবে । কেননা প্রতিটি জাতির জাতীয় সংস্কৃতি সে জাতির মানসিকতা ও ভৌগলিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উদ্ভব হয় । ভারতীয় সংস্কৃতির যে আগ্রাসন আমাদের সমাজের ওপর চলছে সে সংস্কৃতি ভারতীয় জাতিসত্ত্বার জন্য মানানসই কিন্তু বাংলাদেশের মত স্বতন্ত্র ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সভ্যতার ধারকদেরকে কেন ভিন্ন জাতির সংস্কৃতি চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে তা সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে দেখা আবশ্যক । বিশ্বয়ানের প্রভাবে আকাশ সংস্কৃতির দ্বার উম্মুক্ত হওয়ায় যে কোন দেশের সংস্কৃতি দেশের ভৌগলিক সীমা পাড়ি দিয়ে নিমিষেই অন্য ভূখন্ডে বসবাসরত জাতির কাছে পৌঁছে যায় । তাই বলে সে সংস্কৃতি গ্রহনের পূর্বে আমদের বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত নয় ? যে সংস্কৃতি সামাজিক পেক্ষাপটে বাঙালি মনন ধ্বংস করছে এবং বাংলাদেশীদের মাঝে সাংস্কৃতিক অবক্ষয় তৈরি করছে তা গ্রহনের পূর্বে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষা অত্যাবশ্যক ।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ করার মাধ্যমে একদেশের পণ্য যেমন অন্যদেশে বিনা বাধায় প্রবেশ করছে তেমনি সংস্কৃতিও । মুক্তবাজারের কল্যানে ভারতীয় স্টার প্লাস, স্টার জলসা, জি বাংলা, জিটিভি, স্টার ওয়ান, সনি, জি স্মাইল ও ইটিভিসহ ভারতের ডজন তিনেক চ্যানেল আমাদের দেশে দেখানো হচ্ছে । বিটিভিসহ আমাদের দেশেরও প্রায় ৩২টি টিভি চ্যানেল রয়েছে । অথচ এর একটিও ভারতের কোন অঙ্গরাজ্যেই সম্প্রচারিত হয়না । ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল প্রচারিত না হওয়ার জন্য কি আমাদের টিভি অনুষ্ঠানের নিম্নমান দায়ী ? অবশ্যই না । আমাদের দেশের টিভিতে যে সকল অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় তা শুধু গতানুগতিক সংস্কৃতির চর্চাই নয় বরং শিক্ষামূলকও । তবুও ভারতে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার না হওয়ার অন্যতম কারণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর অগাধ-প্রবল শ্রদ্ধাবোধ । ব্যক্তিগতভাবে ভারত বিদ্বেষের কারণে কখনোই ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার বিরোধিতা করিনি বরং আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাবের বিবেচনায় এর বিরুদ্ধে আছি এবং থাকব । শুধু আমি নই বরং এদেশের কয়েক কোটি সচেতন তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এদেশে ভারতীয় টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধের দাবীতে প্রত্যহ আন্দোলন করছে । ভারতের ৪০টির অধিক চ্যানেল আমাদের দেশে সম্প্রচারিত হলেও আপাতত তিনটি (স্টার প্লাস, স্টার জলসা ও জি বাংলা) চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের জন্য আমরা দাবী জানিয়ে আসছি । এ দাবী শুধু পুরুষের জন্য বরং সচেতন নারীদের একাংশের । এদেশের নারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, কোন জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির উত্থাণ-পতনে তাদের ভূমিকা অনস্বীকারর্য্য । যারা বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে সামান্য চিন্তা করে, যারা চায় আমাদের প্রজন্ম বিকৃত মানসিকতার পরিবর্তে সুস্থ মানসিকতায় গড়ে উঠুক, যারা বাংলাদেশে সুস্থ ভাবধারার দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা করতে বদ্ধপরিকর তাদের সকলের দাবী; অবিলম্বে যেন আমাদের সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরুপ ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধের মাধ্যমে আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষা করা হয় এবং নতুন প্রজন্মের জন্য সুস্থ-স্বাভাবিক মানবিক গুনাবলী বিকাশের পথ উম্মুক্ত রাখা হয় । যে অধিক সংখ্যক সাধারণ মানুষ, মিডিয়াকর্মী এবং সচেতন মহলের গুনীজন এ সকল ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবীতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক মানুষের আন্দোলনে সরকার অসংখ্য দাবী পূরণ করেছে অথচ কোন এক রহস্যজনক কারনে সরকার দেশের জন্য অমঙ্গলজনক এ চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি অথচ অত্যাবশ্যকভাবে করা উচিত ছিল । সরকারের এমন নিশ্চুপ অবস্থানের পর সমালোচকদের কেউ কেউ বলে, দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিগত টিভি রুমের দর্শকদের হুমকির কারনেই ভারতীয় ক্ষতিকর চ্যানেলগুলোর ব্যাপারে তারা কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস পায়নি । সরকারের সামন্য কিছু দোষ-ত্রুটি প্রকাশের কারনে কিংবা সরকারের বিরোধিতা করায় দেশীয় অনেক জনপ্রিয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল অথচ দেশের সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ ভারতীয় যে চ্যানেলগুলো প্রত্যহ দেশের মানুষের শান্তি গ্রাস করছে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়াটা কতটা যৌক্তিক তা নতুন করে ভেবে দেখা উচিত । দেশীয় যে চ্যানেগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে সেগুলো সরকার ও সরকার সমর্থক শ্রেণীর জন্য হুমকি হলেও সেগুলো রাষ্ট্রের অস্থায়ী ক্ষতি করছিল কিন্তু ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘকালীন ক্ষতির কারণ হবে । যে ক্ষতির মাত্রা এখনও সম্পূর্নভাবে অনুমিত না হলেও নিকট ভবিষ্যতে বর্তমান প্রজন্ম যখন জাতির নেতৃত্ব দিবে তখন পুরোপুরিভাবে মাত্রা টের পাওয়া যাবে । সুতরাং সাবধান হওয়ার এটাই বোধহয় সর্বোত্তম সময় । তথ্যমন্ত্রী বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোকে ধারাবাহিকভাবে প্রথম রেখে অন্য দেশের চ্যানেলগুলোকে শেষে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো খুঁজে পেতে রিমোটের সবগুলো বাটন চাপতে হয় !
সরকারের দায়িত্বশীলরা এসব ক্ষতিকর চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করলেও অন্তত জাতীয় স্বার্থে আমাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে । এজন্য সর্বপ্রথম চাই সকলের সচেতনতা এবং দেশ প্রেমের মনোভাব । দেশের টিভি দর্শকদের বৃহৎ অংশ নারীর দখলে । স্বামী-সন্তান বাসা থেকে অফিস-স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাওয়ার পর তারা দীর্ঘ সময় একাকীত্বের কবলে পড়ে । একাকীত্ব ঘুচানোর জন্য টিভিই তাদের একমাত্র সঙ্গী । কিন্তু টিভি দেখার নামে তারা শুধু ভারতীয় চ্যানেলের অনুষ্ঠানে চোখ রাখে না বরং সেখানে দেওয়া প্রতিটি শিক্ষা তারা তাদের বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করে । বাস্তবতা বিবর্জিত চরিত্রের বাস্তবায়ন যখন বাস্তব চরিত্রে রূপায়ণ করা হয় তখন বহুবিদ সমস্যা সৃষ্টি হয় । দেশীয় টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতারা তাদের অনুষ্ঠানে প্রমীলা শ্রোতা টানতে ইতোমধ্যেই ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের হুবহু নকল করতে শুরু করেছে । সৃজনশীলতার অভাবে অনুষ্ঠান নির্মানের গুনগত কারণে সে অনুষ্ঠানগুলো ভারতীয় সিরিয়ালের তুলনায় অনেক নিম্নমানের হচ্ছে । অপরদিকে দেশীয় চ্যানেলগুলোর অবিরাম বিজ্ঞাপনের যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে দেশের দর্শকরা দেশীয় টিভিগুলোর প্রতি একপ্রকার বিরক্ত । অতএব অনুষ্ঠান নির্মানের সাথে যুক্ত কর্তৃপক্ষকে সৃজনশীল ও রুচিশীল অনুষ্ঠান দর্শকদেরকে উপহার দিতে হবে যা বিদেশী তথা ভারতীয় সিরিয়ালের কূফলের সার্বিক দিক ফুটিয়ে তুলবে এবং বিনোদনের সাথে ইতিহাস, শিক্ষা ও সংস্কৃতির যোগসূত্র ঘটাতে সক্ষম হবে । অনুষ্ঠানের মাঝে বিজ্ঞাপণ প্রচারের জন্য নীতিমালা থাকা আবশ্যক । বিরামহীন বিজ্ঞাপন প্রচারের কারনে উচ্চমানের অনুষ্ঠানও নিম্নমানে পরিণত করে । দেশীয় চ্যানেলগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা ঘণ ঘণ খবর প্রচার । এত খবর যে তারা কোথায় পায় তা তারাই জানে ! বিশ্বের সকল দেশের খবর প্রচারের জন্য আলাদা চ্যানেল রয়েছে এবং তারা তাদের বিনোদেনের চ্যানেলে ক্ষুদ্র পরিসরে খবর পরিবেশন করে কিংবা কোথাও কোথাও খবর প্রচার থেকে বিরত থাকে । অথব বাংলাদেশের বিনোদনমূলক চ্যানেলগুলোতে বিদেশী রাষ্ট্রের সংবাদ প্রধান্য চ্যানেলগুলোর চেয়েও বেশি খবর প্রচার করে । যা দেশের টিভি দর্শক বিশেষ করে নারী দর্শকদের জন্য বিরক্তির অন্যতম কারণ । সুতরাং প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিনবার খবর প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা-তা টিভিগুলোর ভেবে দেখা উচিত । ভারতীয় সিরিয়াল আসক্তদের মনে রাখা উচিত, ভারতীয় বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত ১২টি সিরিয়াল আমাদের জাতীয় জীবনের ৬টি মূল্যবান ঘন্টা নষ্ট করে । কোন জাতির যদি উন্নতির স্বপ্ন থাকে তবে তারা ৬ ঘন্টা সময় অর্থহীনভাবে নষ্ট করার মত বোকামী করতে পারে না । সিরিয়াল প্রচারের পর যারা আবার পুনঃপ্রচার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তাদের ব্যাপারে আমার কোন কথা নাই ! তাদের যথাদ্রুত সম্ভব মনোচিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত । আমাদের যে মায়েরা-বোনেরা দিনের বেশির ভাগ সময় টিভি সিরিয়াল দেখায় নষ্ট করেন তারা তাদের ড্রয়িংরুম সজ্জিত করেন বাজার থেকে কেনা শো-পিসের মাধ্যমে । অথচ এ সকল শো-পিস অল্প সময়ের মধ্যে খুব সুন্দরভাবে নিজ হাতে তৈরি করা সম্ভব । যা বাজার থেকে সংগ্রহ করা শো-পিসগুলোর চেয়ে অনেক মানসম্মত ও রুচিশীল । আমাদের বোনেরা সিরিয়ালের খপ্পরে পড়ে নতুন রেসিপি রান্না করতে প্রায় ভূলতে বসেছে । সুতরাং সিরিয়াল বাদ দিয়ে নতুন নতুন আইটেম রান্না করার মাধ্যমে প্রিয়জনদেরকে যেমন সন্তুষ্ট করা যায় তেমনি আত্মতৃপ্তিও আসে । যারা নিয়মিত বিভিন্ন প্রকারের নেশাজাত দ্রব্য গ্রহনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক ও বিকারগ্রস্থ তাদের সাথে সিরিয়ালের নেশায় বুঁদ হওয়াদের খুব বেশি তফাৎ আছে বলে প্রতীয়ামান নয় । সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর বাঙালীয়ানা বোঝাপাড়া সৃষ্টি, পারিবারিক শান্তি নিশ্চিত করতে এবং সুস্থ প্রজন্ম গঠনের জন্য ভারতীয় সিরিয়াল বর্জনের কোন বিকল্প নাই । দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা করতে ভারতীয় সিরিয়াল ত্যাগের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমে উদ্ভূদ্ধ হতে হবে । ভারতীয় সিরিয়ালগুলোকে মূলত সংস্কৃতি বলা যায়না বরং এগুলো পণ্য ও পোশাকের বিজ্ঞাপণ । ভারতীয় সংস্কৃতিকে সরাসরি অপসংস্কৃতি বলিনা কিন্তু আমাদের জন্য ভারতীয় সংস্কৃতি ঠিক ততোটাই ক্ষতিকর যতটা ক্ষতিকর বহুমূত্রে আক্রান্ত রোগীর জন্য চিনি ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর ।
[email protected]
01728465455