সুন্দরবনে এবার সারবাহী জাহাজডুবি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ তেলবাহী জাহাজ ডুবির পাঁচ মাস পেরোতে না পেরোতেই এবার সুন্দরবনে ৫০০ মেট্রিকটন সার নিয়ে একটি লাইটার জাহাজ ডুবে গেছে।
গত রবিবার বিকাল ৫টার দিকে ‘জাবালে নূর’ নামের ওই জাহাজটি ৫০০ মেট্রিকটন এমওপি সার নিয়ে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই জাহাজের মাস্টার ও নাবিকরা পালিয়ে যায়।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইন্স এর এম-৬৯৪৩ নম্বরের জাহাজটি গত শনিবার মংলার হারবাড়িয়া থেকে সারবোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।
সুন্দরবনে এবার সারবাহী জাহাজডুবি
জাহাজটি শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদের বিমলের চর এলাকায় আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা একটি জাহাজাকে অতিক্রম করতে গিয়ে জাহাজটি ডুবোচরে আটকা পড়ে। পরে ঢেউয়ের আঘাতে জাহাজটির তলা ফেটে গেলে সেটির অধিকাংশ অংশ ডুবে যায়।
এরপর গোপনে মালিকপক্ষ গলিত সার পানিতে ফেলে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে ব্যাপারটি জানতে পারলে জাহাজের মালিক ও নাবিক পালিয়ে যায়।
এদিকে সারবোঝাই জাহাজ ডুবির এলাকা ডলফিন ও শুশুকের বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায় সুন্দরবন আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জাবালে নূর জাহাজটি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সার গলে সুন্দরবনের নদী ও খালের পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সার পানিতে মিশে পানির রঙ লালচে আকার ধারন করেছে।
ইতিমধ্যে জাহাজটি উদ্ধারে মংলা থেকে এমবি নূসরাত-ই-হক ও এমবি তছির উদ্দিন নামের দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছছে। কিন্তু জোয়ারের চাপ ও স্রোত বেশি থাকায় উদ্ধারকারী জাহাজ দুটি ডুবো জাহাজের কিছু দূরে নোঙর করে আছে। স্রোত কমলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা হবে বলে নুসরাত-ই-হক জাহাজের মাস্টার আব্দুল মালেক জানান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা শরণখোলা স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে ৫০০ মেট্রিকটনের মতো লাল রঙের এমওপি সার রয়েছে। জাহাজটির পিছনের কিছু অংশ ছাড়া পুরোটাই পানিতে ডুবে গেছে। সারের লাল রং পানিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ওই জাহাজের সংরক্ষিত তেলও পানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম বলেন, সারের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় বিরল প্রজাতির ডলফিন, শুশুক, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণির মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রো টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সর্দার সরিফুল ইসলাম জানান, সার গলে পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সারবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনাটি সুন্দরবন বিপর্যয়ের আরেকটি প্রধান কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, ডুবে যাওয়া পটাশ (এমওপি) জাতীয় এ সারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বলে তাকে মালিক পক্ষ জানিয়েছে। তবে, গলিত সার পানিতে ফেলা হলে জাহাজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর চাঁদদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী ‘সাউদার্ণ স্টার সেভেন’ নামের একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। সেই জাহাজের ক্ষতিকর তেল সুন্দরবনের সমস্ত নদনদীতে মিশে বনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। সেই থেকে এক মাস সুন্দরবনের অভ্যন্তর থেকে সব ধরণের জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। বিকল্প পথ না থাকায় পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ওই ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় সারবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটল।