হৃদরোগে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টুর মৃত্যু : নানা প্রশ্ন
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। বুকে ব্যথা অনুভব করায় গতকাল তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বহুল আলোচিত সাবেক এই ছাত্রনেতার আকস্মিক মৃত্যুতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার চিকিৎসার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন জানিয়েছেন, শনিবার তিনি রাজশাহী কারাগারে গেলেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। পিন্টুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তবে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এদিকে পিন্টুর ছোটভাই রিন্টু জানান, দুপুরে তারা টিভির স্ক্রল দেখে পিন্টুর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। খবর পেয়ে সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও পিন্টুর আত্মীয় রফিকুল ইসলাম দিপু রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। রিন্টু বলেছেন, তার ভাইয়ের লাশ রাজশাহী থেকে ঢাকা আনতে হেলিকপ্টার চেয়েছিলেন। কিন্তু রাতে হেলিকপ্টারে লাশ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পিন্টুর লাশ আনতে তার ছোট ভাই নাসিম উদ্দিন আহম্মেদ, শ্যালক মোহাম্মদ অপু, পিন্টুর সাবেক পিএস রফিক আহমেদ ডলার, যুবদল নেতা রুহুল আমিন আকিল, সাবেক ছাত্রদল নেতা নয়ন হোসেন ও মোহাম্মদ টিটু রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। রিন্টু জানান, সোমবার হাজারীবাগ ও নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে। এদিকে পিন্টুর মৃতু?্যুর সংবাদ শোনার পর থেকে তার রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ২৫ মনেশ্বর রোডের ?বাসায় চলছে শোকের মাতম। দুপুরে ২৫/১ হাজারীবাগের মনেশ্বর রোডের পিন্টুর বাসায় গিয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী, বোন ও ভাই এবং ঘনিষ্ঠজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তার বাসায় জড়ো হচ্ছেন তার স্বজন ও দলের নেতাকর্মীরা। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ বাড়ির তিনপাশের সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। উল্লেখ্য, নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর জন্ম ১৯৬৭ সালে। পুরান ঢাকার মরহুম নিজাম উদ্দিন আহম্মেদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে পিন্টু ছিলেন সবার বড়। তার বোন ও সাবেক কাউন্সিলর ছায়েদুর রহমান নিউটনের স্ত্রী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টিও এক সময় ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন। পিন্টুর স্ত্রীর নাম নাসিমা আক্তার কল্পনা। তাদের বড় ছেলে শাহরিয়ার আহম্মেদ রাতুল কানাডার টরেন্টোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ছোট ছেলে নাহান আহম্মেদ ঢাকার স্কলাস্টিকার ছাত্র। পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় আসামিদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসার পর ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্টের বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক এমপি পিন্টুকে। এরপর তিনি আর জামিন পাননি। ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। পিন্টুর বিরুদ্ধে পিলখানা হত্যা মামলাসহ দুর্নীতি ও ভাঙচুরের সাতটি মামলা রয়েছে। পিন্টুর আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা জানান, পিলখানার মামলায় সাজা হয়েছে। বাকি ছয়টি মামলা হাইকোর্টে স্থগিত রয়েছে। এদিকে সূত্র আরও জানায়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (দক্ষিণ) নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি সিটি নির্বাচনে অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকে পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পিন্টুকে ২০শে এপ্রিল রাত ১১টা ৪০ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসা করতে দেয়া হয়নি চিকিৎসককে
এদিকে অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী কারাকর্তৃপক্ষের বাধার কারণে শনিবার বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেননি চিকিৎসক। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন শনিবার সকালে পিন্টুকে কারাগারে চিকিৎসা দিতে যান। কিন্তু তাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। ডা. রইস উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে আনার কয়েক দিন পরেই বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ২৬শে এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, এর আগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে হাসপাতাল পরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘বিএনপি নেতা পিন্টুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তবে তাকে হাসপাতালে নয়, কারা হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে। এ কারণে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞকে কারাগারে পাঠানোর অনুরোধ করা গেল।’ ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুকে চিকিৎসা দিতে যাই। কিন্তু সেখানে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান আমাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। তিনি বলেন, আমি সিনিয়র জেল সুপারকে বলেছিলাম, আপনারা পিন্টুর জন্য চিকিৎসক চাওয়ায় পরিচালক তাকে পাঠিয়েছেন। তবে কেন আপনারা তার সঙ্গে আমাকে দেখা করতে দিচ্ছেন না? তিনি অভিযোগ করেন, আমি জেল সুপারকে বলেছি, আল্লাহ না করুক, বিএনপি নেতা পিন্টুর যদি কোন দুর্ঘটনা হয়, তবে এ জন্য আপনারাই দায়ী থাকবেন। এরপরও তিনি আমাকে পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে দেননি। বরং চা খাইয়ে বিদায় করে দেন। রোববার হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাৎক্ষণিক ইসিজি করা হলে তার হৃদস্পন্দন পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে আনার অন্তত ২০-৩০ মিনিট আগেই পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। তবে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান জানান, পিন্টু নানাবিধ অসুখে ভুগছিলেন। হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিকস, ব্লাডপ্রেসারসহ চোখ ও বুকের সমস্যা ছিল তার। রোববার বেলা ১২টার দিকে তিনি কারাগারের মধ্যে বুকের ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত তাকে কারাগার থেকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ পরিবারের
এদিকে নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, কারাগারে পরিকল্পিতভাবে পিন্টুকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে পিন্টুর হাজারীবাগের বাসায় তার স্ত্রী ও ভাইবোনেরা সাংবাদিকদের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন। পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, চিকিৎসায় অবহেলা করে পরিকল্পিতভাবে পিন্টুকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে নেয়া হয়। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল, পিন্টুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা দেয়া। আমরা আদালতের ওই নির্দেশনার কাগজ আইজি প্রিজনের কাছে দিলেও তাকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়। পিন্টুর ভাই নাসিমউদ্দিন আহম্মেদ রিন্টু বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকার এরআগেও দুইবার আমার ভাইকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সফল হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাকে উন্নতমানের চিকিৎসা না দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। রিন্টু বলেন, কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় চিকিৎসার অবহেলায় তার ভাই পিন্টুর একটি চোখ নষ্ট হয়েছিল। তার স্পাইন্যাল ও হার্টে গুরুতর সমস্যা ছিল। এই কারণে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২ মাস আগে উচ্চ আদালত এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছিল যে, পিন্টুর অসুস্থতাসহ সার্বিক বিষয়ে চিন্তা করে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল নতুবা সমমানের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে স্থায়ী চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কিন্তু আইজি প্রিজনের কঠোর নির্দেশে পিন্টুকে সিটি নির্বাচনের আগেই পিন্টুকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। যাওয়ার পর থেকে সেখানে পিন্টু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। শনিবার রাতে পিন্টু অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ডেপুটি জেলার তাকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। তখন কারাগারের চিকিৎসককে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। সকালে সেলে পিন্টুর শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা আরও বেড়ে গেলে তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে স্থানীয় (আইসিইউ) ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করেন। দুপুর পৌনে একটার দিকে পিন্টু কোমায় চলে যান। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু ঘটে। রিন্টু আরও বলেন, প্রিজন সেলে রেখে চিকিৎসা দিলে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হতো না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পিন্টুর বোনেরা বলেন, বিডিআর হত্যা মামলায় তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জড়ানো হয়েছিল। এই ঘটনায় আমাদের ভাই পিন্টু জড়িত ছিল না। এটা সরকারের অপকৌশল ছিল। এদিকে পিন্টুর বোন সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌসী আহম্মেদ মিষ্টি বলেন, আমার ভাইকে সরকার মেরে ফেলেছে। কারাকর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা করতে দেয়নি। আমরা বারবার তার উপযুক্ত চিকিৎসা দেয়ার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার সকালে তিনি পিন্টুর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় পিন্টু জানিয়েছেন, অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও রাজশাহী কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে সময়মতো ওষুধ দিচ্ছে না।
চিকিৎসা গাফিলতির কারণে অকাল মৃত্যু: বিএনপি
এদিকে নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পিন্টু কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছিল। সেখানে পিন্টুকে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বা সমপর্যায়ের একটি মেডিক্যালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। উল্টো কারাকর্তৃপক্ষ নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করে। সেখানেও তাকে সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হয়নি। কারাকর্তৃপক্ষের চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে পিন্টুর অকাল মৃত্যু হয়েছে। এ সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ও সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি কারান্তরীণ নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর নামাজে জানাজা আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ শুভানুধ্যায়ীদেরকে যথাসময়ে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া, নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুতে দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করা হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অস্বীকার
তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পিন্টুর চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে কেউ কোন রাজনৈতিক বক্তব্য দিলে তা হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। পিন্টু হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তাকে কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়া হলে সেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু একজন বন্দি ছিলেন। একজন বন্দি হিসেবে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তাকে তা দেয়া হয়েছে।
রাজনীতিতে পিন্টু
জেল-জুলুম ও নির্যাতন দিয়েই ছাত্র রাজনীতিতে আবির্ভাব হয়েছিলেন নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর। রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময় কারাগারেই কাটিয়েছেন তিনি। কারাগার থেকেই শেষ বিদায় নিয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি। তৃণমূল থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। মহানগরের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ আমলে চার দফায় ২৩ মাস কারাভোগ করেন। ছাত্রদলের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকার লালবাগ-কামরাঙ্গীরচর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচবছরে নানা ঘটনায় বহুবার পত্রিকার শিরোনাম হন পিন্টু। এরকম এক ঘটনায় বিএনপি সরকারে থাকা অবস্থায় কারাগারে যেতে হয় তখনকার এমপি পিন্টুকে। ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের জমানায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুইবছর কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের কাছে পরাজিত হন পিন্টু। সর্বশেষ কাউন্সিলে পিন্টুকে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। সদ্য সমাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কারাগারে থেকেই তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর গত ১লা এপ্রিল তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক মহলের শোক
বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন দলের চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবাণীতে তিনি অভিযোগ করেন উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে সুচিকিৎসা না দিয়ে বরং গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। দুই দিন কোন চিকিৎসা না দিয়ে ২৬শে এপ্রিল তাকে রাজশাহী কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসায় কারা কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলা এবং সুচিকিৎসা দিতে ডাক্তারদের পরামর্শ উপেক্ষা করার কারণেই তার অকাল মৃত্যু হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের এই ধরনের অমানবিকতায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খালেদা জিয়া। শোকবাণীতে তিনি বলেন, নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুতে দেশবাসী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ন্যায় আমিও গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। জাতীয়তাবাদী দর্শনে বিশ্বাসী পিন্টু সমাজসেবার মহান ব্রত নিয়ে রাজনীতি করতেন। আর এ কারণেই ঢাকাবাসীসহ সারা দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসীদের কাছে তিনি একজন জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ঢাকা বিভাগীয় বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছিল। এছাড়া তার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে অবদানের কথা তার এলাকাবাসী কোন দিনও ভুলে যাবে না। মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন, লড়াই ও সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা দেশবাসী চিরকাল স্মরণ রাখবে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একজন অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবককে হারালো, যার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হওয়ার নয়। খালেদা জিয়া পিন্টুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আলাদা শোকবাণীতে শোক প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ শোক প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ছাত্রদলের উজ্জ্বল নক্ষত্র। পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার পেছনে তার অবদান স্মরণীয়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে যখনই বাংলাদেশের গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে তখনই নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ঢাকার রাজপথে গর্জে উঠেছেন। বর্তমান অবৈধ সরকারেরও বড় ভয় ছিল তাকে নিয়ে। সে কারণেই মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর কারারুদ্ধ রেখে, উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা। শোকপ্রকাশ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, একজন কারাবন্দি রাজনীতিবিদ হিসাবে নাসির উদ্দিন পিন্টুর এ মৃত্যু মোটেই স্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে জনাব পিন্টুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি কারাগারে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করেনি। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী এক শোকবার্তায় সাবেক এমপি পিন্টুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক শোকবাণীতে বলেছেন, পিন্টু দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কারা হেফাজতে বিনা চিকিৎসায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। সরকার বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের একের পর এক গুম, খুন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার নির্মম যে খেলায় মেতেছে- পিন্টু তারই ধারাবাহিকতারই অংশ। আমরা প্রতিটি গুম, খুনের আন্তর্জাতিক ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুতে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ইসলামী, লেবার পার্টি, এনডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগের তীর কারা কর্তৃপক্ষের দিকে
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু বুকে ব্যথা অনুভব করলেও তার দেড় ঘণ্টা পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তার মৃত্যুকে ঘিরে নানান প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসা অবহেলা ও মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেছেন একাধিক বিএনপি নেতা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপক্ষ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে। রামেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন জানান, প্রথমে নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হৃদরোগ বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তবে তার আগেই তিনি মারা যান। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি জানান, গত শনিবার কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে তিনি কারাগারে পিন্টুসহ অন্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য যান। তবে নিরাপত্তা ও অন্যান্য অজুহাত দেখিয়ে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান তাকে পিন্টুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেননি। ডা. রইছের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র জেলার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ডা. রইস এসেছিলেন। তাই তাকে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। তাছাড়া, নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে ঢাকা পিজি হাসপাতালে নেয়ার প্রস্তুতি ছিল। তিনি বেঁচে থাকলে আগামী ১১ই মে তাকে পিজিতে চিকিৎসার জন্য নেয়া হতো। এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক এস এম সায়েম জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নাসিরউদ্দিন পিন্টু বুকে ব্যথা অনুভব করেন। তাকে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার কথা বলেছিলেন। কারা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা পিন্টুকে গত ২০শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তাকে কোন ডিভিশন দেয়া হয় নি। তিনি ১০ নম্বর সেলের একটি কক্ষে থাকতেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মিন্টু অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল যাতে নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে ঢাকা বা তার আশেপাশের এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও না নেয়া হয়। এরপরও ২০শে এপ্রিল তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করেন এই নেতা। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দীন জানান, নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে জরুরি বিভাগ থেকে দ্রুত তাকে হৃদরোগ বিভাগে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরআগে গত ২৬শে এপ্রিল নাসিরউদ্দিন পিন্টুকে কারা কর্তৃপক্ষ রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সে সময় তার হৃদরোগ ও চোখের পরীক্ষা করা হয়। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় তাকে সেদিনই আবারো কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে জানিয়েছিলো নাসিরউদ্দিন পিন্টুর আগামী ১১ই মে তার রিভিউ ডেট আছে। কোন প্রয়োজন দেখা দিলে যেন কারাগারে চিকিৎসক পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, গত ২৫শে এপ্রিল ইস্যুকৃত একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান গত শনিবার কারাগারে গিয়েছিলেন। ওই আবেদনটি ক’দিন পরে তারা পেয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ফিরিয়ে দেন। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল দুপুরে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে দ্রুত রামেক পাঠানো হয়। তখন তার জ্ঞান ছিল না, তবে শ্বাস নিচ্ছিলেন। হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পিন্টুকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পিন্টুর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। (মানবজমিন)