খালেদার গাড়িবহরে হামলা, মিডিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ গণমাধ্যমের এতো স্বাধীনতা দেয়া সত্ত্বেও তারা খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করছে। বিরোধী দলের জ্বালাওপোড়াও মিডিয়াতে গুরুত্ব না পেয়ে উল্টো খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার দুপরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচনী প্রচারণাকালে খালেদা জিয়া গাড়ি বহরে হামলা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বেশক’টি ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘তার গাড়িতে হামলা করেছে বিক্ষুদ্ধ জনতা। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী সিএসএফ সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ছুড়েছে। তার বহরের গাড়ির চাকার নিচে সাধারণ মানুষ পড়ার পর তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে হামলা করেছে। এখন জনগণ যদি কারো ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তা হলে সরকারের কী করার আছে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণমাধ্যমের চলমান স্বাধীনতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’ তবে তিনি গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বহরের গাড়ির চাকার নিচে মানুষ পড়লেও মিডিয়ায় তার ছবি ছাপানো হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর ৬ রাউন্ড গুলি করলেও মিডিয়া সেই ছবি প্রকাশ করেননি। শুধু গোল চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কে হামলা চালিয়েছে তা দেখানো হয়েছে। এটা মিডিয়ার পক্ষপাতিত্ব ও খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি।’
খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যে মানুষকে পোড়ালেন সেই মানুষের কাছে ভোট চান কীভাবে? বাস পুড়িয়ে ড্রাইভার ও হেলপার পুড়িয়ে মারছেন। এখন আবার সেই বাস মার্কায় ভোট চান। কোন মুখে চান। লজ্জা করে না?’
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘খালেদা জিয়ার কারণে বিদেশি বহু বিনিয়োগ চলে গেছে। বিশ্ব ব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সৌদি আরব থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া পর্যন্ত অবৈধভাবে মানুষ পাচার করেছে বিএনপি সরকার। আমরা এসব জায়গা কাভার করে একটা স্থানে নিয়ে এসেছি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতো অল্প সময়ের মধ্যে অনেক উন্নয়ন করেছি। ঢাকা শহরে ১১টি স্কুল ও কলেজ করে দিয়েছি। অথচ তিনি হরতাল দিয়েই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন। ৬৬৫ জন বিএনপি নেতা পেট্রোলবোমাসহ ধরা পড়েছে। ৭০ জনের মতো সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়েছে এবং তারা গণপিটুনির শিকার হয়েছে। বোমা বানাতে গিয়ে নিজেদের নেতাই মারা গেছে। বহু মায়ের বুক খালি করেছেন। বহু বোনকে বিধবা করেছেন। তিনি এখনো প্রতিশোধ নিচ্ছেন। তার কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। এখন যদি সাধারণ মানুষ তার ওপর প্রতিশোধ নেয় তা হলে তিনি কী করবেন। তিনি দেশের মানুষকে এতো বোকা মনে করেন কেন?’
যারা পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসব হুকুমদাতা ধরা পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে অবরোধ আছে কি না খালেদা জিয়া তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি। এখন যে নেত্রী তার কর্মসূচির ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা দিতে পারেন না তিনি দেশ চালাবেন কী করে?’
উল্লেখ্য, এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল মূলত সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মালয়েশিয়ার সফরের অর্জন সম্পর্কে। কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের পুরোটা জুড়েই ছিল সিটি করপোরেশন নির্বাচন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। আর প্রধানমন্ত্রীও এসব প্রশ্নের জবাব প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তার প্রস্তুতিও ছিল যথেষ্ট।