‘এসি রেজাউল ভাই, আমার মৃত্যুর জন্য…’
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ মৃত্যুর আগে সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এনায়েত কবির চঞ্চল। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন তিনি। একজন চিকিৎসকরে অধীনে ছিলেন অনেক দিন ধরে। মৃত্যুর পর তার মরদেহ যেন ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় নোটেও এ অনুরোধও করে যান তিনি। প্রশাসনও তার শেষ ইচ্ছে পুরণ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয় তাকে।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে ধানমণ্ডির ১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর বাড়ির গ্যারেজের শৌচাগার থেকে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এনায়েত কবির চঞ্চলের (৪৯) গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে তার বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট। চঞ্চল রাজধানীর ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এবং শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সদস্য ছিলেন।
পরিবার ও পুলিশের ধারণা, মা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন। তবে ঘটনার পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কি না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওই বাড়ির বাসিন্দা ও কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সভাপতি এএম কামাল জানান, বাড়ির তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে খবর পেয়ে শৌচাগারে উঁকি দিয়ে চঞ্চলকে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন শৌচাগারের ছিটকিনি ভেঙে তার নিথর রক্তাক্ত দেহ বের করে আনা হয়। এসময় তার ডান হাতে পিস্তল ধরা ছিল। পকেটে ছিল পাঁচ রাউন্ড গুলি, মানিব্যাগ ও একটি চিরকুট। চিরকুটে লেখা ছিল, ‘এসি রেজাউল ভাই, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার লাশ পোষ্টমর্টেম ছাড়া দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করছি’।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সকাল ১০টার দিকে চঞ্চল হাঁটার জন্য বাইরে যান। তবে বাইরে যাওয়ার সময় পকেটে পিস্তল নেয়ার বিষয়টি কেউ টের পাননি।
চঞ্চলের বাবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রশিল্পী এনামুল কবীর জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চঞ্চলের মা মারা যান। এর পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মাতৃভক্ত চঞ্চল। তিনি বারবার মায়ের কথা বলতেন। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলতেন। বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকায় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে তার চিকিৎসা চলছিল। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। কিন্তু ইদানীং অবস্থা আবার আগের মতো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী নিরাপত্তাকর্মী জিল্লুর রহমান জানান, সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হন চঞ্চল। ১৫ মিনিট পর তিনি হেঁটে বাড়িতে প্রবেশ করেন। নিচতলার বাথরুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। এরপর মিনেট পাঁচেক পরেই বাথরুমে গুলির শব্দ হয়। সেইসঙ্গে চিৎকারের শব্দও ভেসে আসে। সঙ্গে সঙ্গে নিচতলায় থাকা নিরাপত্তাকর্মী ও চালকরা বাথরুমের কাছে যান। তারা কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে এনায়েত কবির চঞ্চলের বাবা এনামুল কবিরকে বিষয়টি জানান। সবাই মিলে বাথরুমে ধাক্কা ধাক্কি করেন। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে খবর দেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হাজির হয়।
ধানমণ্ডি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বাথরুম থেকে জব্দকৃত পিস্তলটি নিহতের নামেই লাইসেন্স করা। নিহতের প্যান্টের পকেট থেকে পয়েন্ট ২২ বোরের পাঁচ রাউন্ড তাজা বুলেট উদ্ধার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বুলেটগুলো জব্দকৃত লাইসেন্স করা চঞ্চলের পিস্তলের। খুব সম্ভবত পিস্তলে একটি বুলেট ভরে ডান হাতে ধরে সরাসরি কানের উপরে মাথায় গুলি করেন। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’
এ ঘটনায় নিহতের বাবা এনামুল কবীর বাদী হয়ে ধানমণ্ডি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউল কবির বলেন, ‘সুইসাইডাল নোটের প্রেক্ষিতে নিহতের পিতা এনামুল কবির ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে নিহতের লাশ হস্তান্তরের আবেদন করেন। বিচারক আবেদন আমলে নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এমন আদেশের পর নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃত্যুর আলামত হিসেবে পিস্তল ও বুলেটের খোয়া জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত পিস্তলেই চঞ্চলের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পিস্তলটি ও বুলেটের খোসার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হতে পারে।’
এদিকে বুধবার বাদ আছর ধানমণ্ডি সাত নম্বর সড়কের বাইতুল আমান মসজিদ ও বাদ মাগরিব বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে চঞ্চলের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সন্ধ্যায় আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
চঞ্চলের ছোট ছেলে তাহমিদ কবীর নবম শ্রেণীতে পড়ছে। মেজ ছেলে আফনান কবীর একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ও লেভেলের ছাত্র। বড় ছেলে ফারহান কবীর তন্ময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র। চঞ্চলের গ্রামের বাড়ি নড়াইলের নড়াগাতী থানার ডুমুরিয়ায়।