সুনামগঞ্জে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভা
মহান মে দিবসে হোটেল শ্রমিকদের স্ববেতন ছুটির দাবি
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে সকল হোটেল শ্রমিকদের স্ববেতন ছুটির দাবিতে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিস্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং বিঃ-২১২৬-এর সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এক কর্মীসভা ১৯ এপ্রিল রাত ৯ টায় ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মইনুল হক রনির সভাপতিত্বে শহরের সুরমা মার্কেটস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রজত বিশ্বাস ও সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বাদল সরকার। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা বারকি শ্রমিক সংঘ রেজিঃ নং চট্টঃ ২৩৫৫ এর সভাপতি মোঃ নাছির মিয়া, সুনামগঞ্জ জেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের আহবায়ক সিরাজ মিয়া ও হকার্স শ্রমিকনেতা বিনন্দ কর। সভায় হোটেল শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ লিলু মিয়া, সহ-সভাপতি কবির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ আশরাফ শেখ মাকুল, প্রচার সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন, সদস্য হারিছ মিয়া, ইকবাল হোসেন, ফারুক মিয়া, মোঃ জাকারিয়া আহমেদ, সেবুল মিয়া প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন মহান মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর ঐক্য ও সংহতি প্রকাশের দিন। মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী ছুটি ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের সরকারীÑবেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করলেও আমরা হোটেল শ্রমিকরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। মে দিবসে ছুটি প্রদানের জন্য আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিরবতা পালন করে আসছেন। মে দিবসে ছুটি প্রদানের প্রেক্ষিতে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। এমন কি শ্রমিক সংহতি দিবস পালনেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাঁধা নিষেধ ও অনুষ্ঠানে যোগদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর হোটেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নি¤œতম মজুরীর গেজেট প্রকাশ করলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর করা হয়নি। বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ৪৫ দিনের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরী প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও হোটেল শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য হন। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সভা থেকে মহান মে দিবসে সর্বাত্মক ছুটি কার্যকর, বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ নি¤œতম মজুরি ঘোষণা, সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরির গেজেট কার্যকর, শ্রমিকদের জন্য রেশনিং চালু, ৮ ঘন্টা কর্ম দিবস, নিয়োগ পত্র, পরিচয় পত্রসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন, শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত ও যুগ্ম-শ্রম পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করার দাবি জানানো হয়। সভায় মহান মে দিবসে সর্বাত্মক ছুটির দাবিতে জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি