ঐশীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ৩ চিকিৎসক
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় তাদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন চিকিৎসক।
সাক্ষ্য প্রদানকারী তিন চিকিৎসক হলেন- ময়না তদন্তকারী ডা. সোহেল মাহমুদ, মনোরোগ চিকিৎসক ডা. নাহিদ মাহজাবিন ও ডা. সুলতানা আলগিন।
রোববার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক এবিএম সাজেদুর রহমান তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। জবানবন্দী প্রদান শেষে তাদেরকে জেরা করা হয়। জেরা শেষে বিচারক আগামী ২৩ এপ্রিল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ নিয়ে মামলাটিতে মোট ২৩ জন সাক্ষি তাদের সাক্ষ্য দিলেন।
গত বছরের ৬ মে ঐশী ও তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এখানে গত বছরের ৩০ নভেম্বর নতুন করে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।
এদিন ঐশী তার বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি ও মিজানুর রহমান রনিকে জেলহাজত থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
এ মামলার অপ্রাপ্ত বয়স্ক আসামি গৃহকর্মী খাদিজা আক্তার সুমির বিচার চলছে শিশু আদালতে। গত ২০ মে সুমির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন শিশু আদালতের বিচারক জাকিয়া পারভিন। এরপরই তিনি সুমিকে জামিন দেন। গত ১ জুন গাজীপুরের কিশোর সংশোধন কেন্দ্র থেকে মা সালমা বেগমের জিম্মায় জামিনে মুক্তি পেয়েছে সে।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ ডিবির ইন্সপেক্টর আবুয়াল খায়ের মাতুব্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ঐশীসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দু’টি চার্জশিট দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে ঐশী বাইরের পরিবেশে মোহগ্রস্ত হয়ে নিজ পরিবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মা-বাবার শাসনকে অমানুষিক আচরণ হিসেবে সে গণ্য করতো।
খুনের ঘটনার ২/৩ মাস আগে ঐশী তার ড্যান্সমাস্টার জনির সঙ্গে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এ জন্য ঐশী তার বাবার কাছে ৩০ হাজার টাকা চায়। কিন্তু ঐশীর বাবা মাহফুজুর রহমান মেয়েকে দুবাই যেতে নিষেধ করেন।
খুনের ঘটনার একমাস আগে ঐশী তাদের চামেলীবাগের বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধু জনির সঙ্গে রামপুরা এলাকায় বাসা সাবলেট নিয়ে ১৫ দিন বসবাস করে। ওই সময়ই বন্ধু জনির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে পরিবারের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং মা-বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
খুনের ঘটনার পনের দিন আগে সে বাসায় ফিরে এলে তার অবাধ চলাচল ও মোবাইল ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
ড্যান্সমাস্টার জনির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে ঐশী মুক্ত জীবনযাপনের জন্য দুবাই যেতে টাকার প্রয়োজনে মা-বাবাকে খুনের পরিকল্পনা করে। এরপর পরিকল্পনা মোতাবেক জনির প্ররোচনা ও আশ্রয়ের আশ্বাসে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায় ঐশী।
ঐশী ও জনির বন্ধু রনি খুনের পরিকল্পনার কথা জানতো। ঐশী তার মা-বাবাকে খুন করার পরও তাকে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে খুনের কথা গোপন করে তার দূর সম্পর্কের এক খালার কাছে ঐশীর থাকার ব্যবস্থা করে।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (পলিটিক্যাল শাখা) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরদিন ঐশী গৃহকর্মী সুমীকে নিয়ে রমনা থানায় আত্মসমর্পণ করে।
ওই বছরের ২৪ আগস্ট আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে ঐশী জবানবন্দি দেয়। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছিল দাবি করে ৫ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। আদালত তা নথিভূক্ত রাখার নির্দেশ দেন।