নবীগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন : তবুও আতংক!
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ থেকেঃ নবীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে এখন বোরো ধানের বাম্পার ফসল সবুজের সমারোহ চোঁেখ পড়ছে। চারদিকে বাম্পার ফসলের দৃশ্য দেখে কৃষককুলও আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ছেন। বোরো মৌসুমের শুরুতে এবছর তেমন শিলা-বৃষ্টি ঝড় তুফান না হওয়ায় ভাল ফলন হবে, এমনটাই আশা করছেন উপজেলার সকল কৃষকগন। কিন্তু খুশির আমেজ ধান-চালের বাজারে এসে মলিন হয়ে যায় কৃষকদের। এতে করে গরীব ও মধ্যবিত্তরাই বেশি বিপদে রয়েছেন। নিজের সামান্য জমির সাথে অন্যের জমি বর্গাচাষ করেন তারা। সার, বীজ, কিটনাশক, পানি সবকিছুই নিজের টাকায় ক্রয় করেছেন তারা। কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে সোনার ফসল ফলালেও বিক্রি করতে চাইলে উৎপাদন খরচই ঠিকভাবে উঠবে কিনা এ নিয়ে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে কৃষকদের মাঝে। অনেক কৃষকরাই হতাশ প্রকাশ করে বলেছেন উৎপাদন খরচ তুলতে পারবে কি না এ নিয়ে তাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের হিসাব মতে এ বছর নবীগঞ্জ উপজেলায় বোরো ফসলের লক্ষমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪শত ৯০ হেক্টর জমি তার মধ্যে ১৬ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। নবীগঞ্জে প্রতিমন ধানের দাম এখন ৩শ ৫০ থেকে ৪০০ টাকার মতো। বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। লাভের আশায় চাষ করে ধানের দাম দেখে হতাশায় ভোগছেন কৃষকরা। গত ৭ এপ্রিল সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নবীগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেপরোয়া ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ফসলের খিচুটা ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
ধানের দাম যদি আশানুরুপ না হয় নবীগঞ্জের কয়েক হাজার কৃষকের কষ্টার্জিত নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দকে ম্লান করে দিবে। নবীগঞ্জে হাওরে হাওরে এখন চলছে বোরোধান কাটার উৎসবের পূর্ব প্রস্তুতি। আর মাত্র ২ সপ্তাহ পরই নতুন ধান কাটার এই উৎসব চলবে বৈশাখ জুড়ে।
চৈত্র জুড়ে খরা থাকায় ধান পেকেছে এ বছর একটু দেরিতে। চৈত্রের শুরুর দিকে বা মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হলে ধানের ফলন আরো ভাল হত। কিন্তু এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারনে তা হয়নি। অন্য বছর বৈশাখের শুরুতেই ধান কাটা শুরু হলেও এবছর তা হবে একটু দেরিতে। নবীগঞ্জ উপজেলার বড়হাওর পারের কৃষক আলাউর রহমান জানান, এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় খরায় ধানের মধ্যে লালচে রং ধরে হাওরের অনেক জমিতে ফলন আশানুরুপ কম হয়েছে। যেসব জমিতে এক কিয়ারে ২০/২৫ মণ ধান হতো, এবার হয়েছে সেসব জমিতে ১৫ থেকে ১৮ মণ। ধানের ফলন কম হওয়ায় ধান কাটা শ্রমিকেরা কাজে গড়িমসি করছেন। নবীগঞ্জ পৌর এলাকার কৃষক পরিমল দাশ জানান, অনাবৃষ্টির কারণে বি-২৮ ধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কম হয়েছে। তবে বি-২৯ জাতের ধানের ফলন তার চেয়ে একটু ভাল হয়েছে।
কৃষক রিপন মিয়া জানান, চলতি বৈশাখেই হাওরের পুরো ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। খরচ ও কষ্টের তুলনায় বোরো ধানের দাম যদি আশানুরুপ হয় তবে কৃষকদেও পোষাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে বয়ে যাওয়া শিলা-বৃষ্টিতে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
অনেক কৃষকের হাতে নগদ অর্থ না থাকায় ফসল কাটার আগেই অগ্রিম ধান বিক্রি করে অর্থাভাব দূর করছেন। একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি উপকরন ও শ্রমের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে না। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকই দরিদ্র। তারা ঋণ করে ফসল উৎপাদন করেন। ফসল ওঠার সাথে সাথেই তা বিক্রি করে মহাজনদেরকে দেনা শোধ করতে হয় এমনকি অনেক কৃষক উত্তোলনকৃত ধান দিয়েও দেনা পরিশোধ করে থাকেন। বাকিটা দিয়ে সারা বছরের খাবার চালিয়ে যেতে অনেক কৃষককেই হিমশিম খেতে দেখা যায় । আর মাত্র ১ সপ্তাহ পরেই চলতি বছরের বোরো ধান কেটে ঘওে তোলবেন সেই অপেক্ষায় রয়েছেন নবীগঞ্জের কৃষকরা ।