দুদকের হাতে গ্রেপ্তার কন্ঠশিল্পী আদনান বাবু

Adnan-Babu-Singerসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মানিকগঞ্জের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কণ্ঠশিল্পী আদনান বাবু। গত ২ এপ্রিল গোপনীয়তার সঙ্গে এক সহযোগীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের বারাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা ভবন নির্মাণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর প্রথম পর্যায়ে ফাউন্ডেশনসহ এক তলা পর্যন্ত নির্মাণের জন্য ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। আদনান বাবু নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেকশন অফিসার মাহবুব পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মো. রফিকুল ইসলামের কাছে ভবন নির্মাণে বরাদ্দপত্র পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রধান শিক্ষক ঘুষ দিতে অপারগতা জানালে তিন লাখ টাকার কম দিলে বরাদ্দ বাতিলের কথা জানান। ঘুষের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৫০ হাজার দিলে বরাদ্দপত্রের ফটোকপি এবং বাকি আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার পর মূল বরাদ্দপত্র দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। টাকা না দিলে বরাদ্দ বাতিল ও প্রধান শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করারও হুমকি দেন।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক এ বিষয়টি শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানকে অবহিত করেন। প্রতারক চক্রের সদস্যদের ধরার জন্য টেলিফোনে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের সহায়তা চান সচিব।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই চক্রটি বেশ আগে থেকেই হুমকিধমকি দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। বহু স্কুল থেকে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ আমি পেয়েছি। প্রতারক চক্রের তৎপরতায় মন্ত্রণালয়েরও সুনাম নষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু প্রতারণার শিকাররা কেউই মুখ খুলতে চাচ্ছিলেন না। তবে দুদকের তৎপরতায় অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়েছে। আশা করি আদালতে এর যথাযথ বিচার হবে।’
শিক্ষাসচিবের অনুরোধ পাওয়ার পর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিচালক তাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুদকের একটি অনুসন্ধান দল কাজ শুরু করে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে কাজ শুরু করে দলটি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়। মাহবুব নামীয় আদনান বাবুর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ট্র্যাকিং চালাতে থাকেন দলের সদস্যরা। প্রধান শিক্ষক ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেবেন বলে কৌশলে রফা করেন আদনানের সঙ্গে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে টাকা দেওয়া হবে বলে রফা হয়। স্বরাষ্ট্রসচিবের অনুমতি নিয়ে ওই দিন সচিবালয়ে ফাঁদ পাতে দুদকের দলটি। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সচিবালয় থেকে সরে পড়ে প্রতারকেরা। অভিযান ব্যর্থ হলেও মুঠোফোন ট্র্যাকিং করে আদনানের ওপর নজর রাখে দুদকের দলটি।
এরই ধারাবাহিকতায় ২ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে আদনান বাবু ও তাঁর সহযোগী শরিফুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন রাতেই দুদকের ঢাকা-১ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশীষ কুমার কণ্ডু বাদী হয়ে আদনান বাবু ও তাঁর সহযোগী মোশাররফ হোসেনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন।
এজাহারে বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর বারাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ঘুষ চাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন আদনান বাবু। আদনান বাবু ও তাঁর সহযোগী মোশাররফ হোসেন বিভিন্ন স্কুলের নামে নামে ভবন নির্মাণের বরাদ্দপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে বরাদ্দপত্র পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অর্থ আদায় করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন আদনান। যার মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা তার সহযোগী মোশাররফ হোসেনকে দিয়ে বাকি এক লাখ টাকা তিনি নিজে নিয়েছেন।