সেনা মোতায়েনের দাবি বিএনপি’র ॥ পরিস্থিতি বুঝে সেনা মোতায়েন: সিইসি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রাকিব উদ্দিন আহমেদের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার বিকেলে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিদের এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ।
এর আগে বিকেল ৩টায় প্রতিনিধি দলটি নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রায় দেড়ঘণ্টা বৈঠক শেষে সাড়ে ৪টায় বেরিয়ে আসে। এসময় তারা বেশকয়েকটি দাবিসহ একটি চিঠি দেন সিইসিকে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নার শাহ ও জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন- সাবেক যুগ্ম সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ সুজা উদ্দিন আহমেদ, এইচএম আব্দুল হালিম ও আব্দুর রশিদ সরকার।
হান্নান শাহ বলেন, ‘পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচনের ১৫ দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য দাবি জানিয়েছি আমরা। এ ব্যাপারে কমিশন আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছি যে নির্বাচনের সময় যেন বিএনপির অফিসগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। কারণ কোনো দলের প্রার্থী অফিস খোলা রেখে নির্বাচন করবে। অন্যদিকে আরেক দলের অফিস বন্ধ থাকবে এটা হতে পারে না।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘একটি বিশেষ দল যাতে বিশেষ সুবিধা না পায় সেজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারকৃত ২০ দলের সব নেতাকর্মীকে জামিনে মুক্তি দিতে এবং প্রার্থীদের নির্বিঘ্নে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর নিশ্চয়তা দিতে সিইসির কাছে দাবি জানিয়েছি।’
উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থীতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে হান্নান শাহ বলেন, ‘সিইসির সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনি যথাসময়ে আবেদন করার কথা বলেছেন। বিষয়টি তারা বিবেচনায় আনবেন বলেও আমাদের জানিয়েছেন। তবে মিন্টু প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা না করতে পারলে আমরা কাকে সমর্থন দেবো, সেটা সময় বলে দেবে।’
এসময় সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘দলীয় অফিস ও গুলশান অফিসসহ আমাদের সব নেতাকর্মীর অফিস খুলে দেয়ার জন্য সিইসি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে মামলা হলেই তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যতক্ষণ না মামলার চার্জ গঠন হয়। আমাদের বিরুদ্ধে কিছু মামলা আছে যেগুলোতে ১০ জনের নাম আছে। কিন্তু অজ্ঞাত আসামি হচ্ছে ২ হাজার। এসব অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে আমাদের ভোটার ও প্রার্থীদের যেন হয়রানি করা না হয় সে জন্য সিইসির কাছে অনুরোধ করেছি।’
সিইসির কাছে তুলে ধরা বিএনপির প্রধান দাবিগুলো হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ২০ দলের সব নিখোঁজ নেতা-কর্মীকে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির প্রমাণ দিতে হবে।
প্রার্থী কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেতা-কর্মীদের যারা সন্দেহমূলক মামলায় গ্রেপ্তার বা আত্মগোপনে আছে তারা জামিন চাইলে তা মঞ্জুরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
পুলিশ বা যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িঘর তল্লাশি বা হয়রানি করা যাবে না।
প্রার্থীতা জমাদানের পর সাদা পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান বন্ধ রাখার দাবি তুলে ধরেছে এ প্রতিনিধি দলটি। তাদের দবি, শুধুমাত্র পোশাকধারী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিনের বেলায় আসামি গ্রেপ্তার করতে যাবেন। এসময় প্রতিবেশীদের জানানোর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পরিচয় দেবেন।
পাশাপাশি পেশীশক্তির ব্যবহার, ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, ভোট জালিয়াতি ও ভোট ছিনতাইয়ের খবর পেলে ইসিকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্বাচনী গণসংযোগ ও সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার অপচেষ্টায় মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগো কোনো মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীকে বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত কাউকে ফলাফল ঘোষণা আগে বা পরে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা যাবে না।
প্রতিনিধি দলের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের আচরণে প্রতীয়মান হয় যে, তারা সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার মাধ্যমে সরকারি দলকে বিশেষ সুবিধা দিতে কমিশন আগ্রহী। সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে সুযোগ না থাকলেও তাদের মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়ে কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, একটা কথাও বলেনি।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয় থেকে বের হয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী ১৯ এপ্রিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন আছে কিনা।’
এর আগে বুধবার বিকেল ৩টায় সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নার শাহ ও জমির উদ্দিন সরকার।
সাক্ষাৎকালে তারা আসন্ন সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বন্ধ থাকা অন্য কার্যালয়গুলো খুলে দেয়ারও দাবি জানান।
বন্ধ থাকা বিএনপির কার্যালয় খুলে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচন একটি নির্দলীয় নির্বাচন। তারপরও সবাই দলীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করে। এ কারণে এটি একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নির্বাচনী আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু পারব করব।’
যারা আত্মগোপনে আছে বা কারাগারে আছে তাদের ব্যাপারে ইসি বিএনপিকে কীভাবে সহায়তা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা আত্মগোপনে আছে এ ব্যাপারে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে আদালত। আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। এর আগে জেলে থেকেও অনেকেই নির্বাচনে জেতার নজিরও আছে।’
বিএনপিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে দিতে ইসি কী সহায়তা দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনে, ‘এখানে সহায়তা করার বিশেষ কিছু নেই। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের দায়িত্ব পালন করবে ইসি।’