ছাতকের সেই হাতুড়ে ডাক্তার’র বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ
মিজানুর রহমান ফজলু, ছাতক প্রতিনিধিঃ ছাতকের দশঘর গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় কথিত হাতুড়ে ডাক্তার কর্তৃক অপচিকিৎসায় নিহত হেনা বেগমের স্বামী ছাদিকুর রহমান এ অভিযোগটি দায়ের করেছেন। ছাতকে হাতুড়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় গৃহবধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর সংবাদটি বুধবার জাতীয় দৈনিক নতুন ভোর, দৈনিক শ্যামলসহ বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হলে স্বাস্থ্য বিভাগ নরে-চড়ে উঠে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে তাৎক্ষনিক বুধবার সকালে একটি তদন্তটিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। উপজেলা হেলথ ইন্সপেক্টর নিখিল চন্দ ও গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন হেলথ সুপারভাইজার বিধান দাশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে এবং লিখিত একটি প্রতিবেদন স্থানীয় গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র ইনচার্জ ডাক্তার আবদুল হাই আল মনসুর’র নিকট জমা দিয়েছেন। এদিকে বিভিন্ন আলামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন, ডাক্তার আবদুল হাই আল মনসুর। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এগুলো উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মৌলার কাছে জমা দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দশঘর গ্রামে ২২মার্চ রাত প্রায় সোয়া ১০টায় দিকে ছাদিকুর রহমান’র স্ত্রী হেনা বেগম (২২) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন। এসময় একজন গ্রাম্য প্রশিক্ষিত দাত্রী প্রসব কালে হেনা বেগমকে সহায়তা করেন। প্রসবের পর হেনা চা-পান করেন ও তার সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করেন। এর প্রায় আধা ঘন্টা পর মহিলার প্রসব ব্যাথা ও শারিরিক দুর্বলতার জন্য দশঘর রাজ্জাকিয়া দাখিল মাদাসার সহ-সুপার ও দশঘর গ্রামের নিরাময় ফার্মেসীর মালিক কথিত হাতুড়ে ডাক্তার মাওলানা আবদুল হান্নানকে আনা হয়। তার বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর উপজেলায়। তিনি এসে হেনা বেগমের শরীরে একের পর এক ইনজেকশন পুশ করতে থাকেন। এতে হেনা বেগম শোর চিৎকার করতে থাকলে এক পর্যায়ে হাতুড়ে ডাক্তার রোগীর মাথায় প্রচুর পরিমানে পানি ঢালার নির্দেশ দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপরও হেনা বেগমের শারিরিক অবনতি ঘটলে রাত দেড়টার দিকে তার স্বামী ছাদিক মিয়া অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে টুকেরবাজার এলাকায় পৌছলে তার মৃত্যু ঘটে। ২৩মার্চ স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকির মুখে পড়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে কথিত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে একটি প্রভাবশালী মহল ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। হাতুড়ে ডাক্তার মাওলানা আবদুল হান্নান প্রথমে গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসা দেয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে হেনা বেগমকে চিকিৎসা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রসবের আধা ঘন্টা পর তিনি চিকিৎসা প্রদান করেছেন। হেনা বেগমের শরীরে পুশকৃত বিভিন্ন ওষুধের খোসা দেখে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন এসব ওষুধ প্রাণ সংহারী। এসব ওষুধের মধ্যে একটি স্যালাইন ছাড়া বাকি সবগুলো ইনজেকশন একই সাথে পুশ করা হয়েছে। এ কারণে হেনার মৃত্যু হতে পারে বলে তাদের ধারণা। কথিত এ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এলাকায় সীমাহীন অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠেছে। যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারদের অপতৎপরতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লি¬ষ্ট প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন। কথিত হাতুড়ে ডাক্তার আবদুল হান্নান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে এটা আল্লাহর ইচ্ছাতেই, এতে তার কিছু করার নাই। ড্রাগ লাইসেন্স’র ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রসেসিং চলছে। এ লাইসেন্স ছাড়াই ১০-১২ বছর ধরে তিনি এলাকাতে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।