তাহিরপুরে সপ্তাহ্ ব্যাপী দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্বিক সাধকের মিলন মেলা শুরু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সুনামগঞ্জের সীমান্ত উপজেলা তাহিরপুরে সপ্তাহ্ ব্যাপী দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্বিক সাধকের মিলন মেলা ১৮ই মার্চ বুধবার থেকে শুরু। একই সাথে দুটি উৎসব উপলক্ষে তাহিরপুরে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ দুটি উৎসব হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহৎ মহোৎসব সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রী শ্রী অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর রাজারগাঁও লাউড় ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের নবগ্রাম আখড়াবাড়ী সংলগ্ন ২৩ কিঃ মিঃ দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত নদী যাদুকাটায়র তীরবর্তী পণাতীর্থধামে প্রায় ৭শত ১১ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্নানযাত্রা ও হযরত শাহ্জালাল (র:) ’র ৩ শত ৬০ আউলিয়ার অন্যতম সঙ্গী হযরত শাহ্ আরেফীন (র:) ’র মহা পবিত্র ওরশ। উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্তবর্তী আস্থানায় মুসলিম ও সনাতন ধর্মের দু আধ্যাত্বিক মহা সাধকের ভক্তবৃন্ধের সপ্তাহ্ ব্যাপী মিলন মেলা আগামীকাল ৩ই চৈত্র অর্থাৎ ১৮ই মার্চ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে ৬ই চৈত্র ২০শে মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে। এ নিয়ে উভয় ধর্মের লোকজন বিভিন্ন কর্মসুচী গ্রহন করেছে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউপির প্রাচীন লাউড় রাজ্যের হাবেলীর পুরোহিত শ্রী অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর আখড়াবাড়ী ও জন্মধাম সংরক্ষন সংস্কার কমিটি সুত্র ও জন্ম মহোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী জগদানন্দ রায়, সাধারণ সম্পাদক ডা.এন সি রায় নান্টু, জানিছেন,দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ স্নানযাত্রার মুখ্য সময় এবছর ১৮ই মার্চ বুধবার বিকাল ৪টা ১৩ মিনিটি ১১ সেকেন্ড গতে শুরু হয়ে রাত ৯ টা ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বালুচরে বারুনী মেলা ১৮ই মার্চ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে ১৯ শে মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সমাপ্ত হবে। স্থানীয় আখড়াবাড়ী উৎসব কমিটি ও ইসকন সুত্রে জানাগেছে, সপ্তাহ্ ব্যাপী উৎসব ও গঙ্গাস্নান যাত্রাকে কেন্দ্র করে উৎসব কমিটি ও আন্তর্জাাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ’র উদ্যোগে পৃথক ভাবে মঙ্গল আরতী, ভজন, লীলা কীর্তন, বৈদিক নাঠক, গঙ্গাপুঁজা, দেশের বেতার, টিভি ও মঞ্চ শিল্পীদের অংশ গ্রহনে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান এবং ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
অপরদিকে একই সময়ে উপজেলার সুনামগঞ্জ ৮ রাইফেল বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের লাউড়েরগড় সীমান্ত ফাঁড়ীর মেইন পিলার ১২শ ৩এর ৪এস থেকে ৭এস এলাকায় মেঘালয়-খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে হযরত শাহ্ আরেফীন (র:) ’র আস্থানায় ওরশ মোবারক আগামী ১৮ই শে মার্চ বুধবার সন্ধা থেকে অনুষ্টিত হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে।
ওরশ উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি প্রাক্তন চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন, হযরত শাহ্ আরেফীন (রঃ) আস্থানার খাদেম নুরুল আমিন চিশতী, সদস্য রায়হান উদ্দিন রিপন জানিয়েছেন, ওরশ ও স্নানযাত্রাকে উপলক্ষে সপ্তাহ্ ব্যাপী উৎসবকে ঘিরে দেশ বিদেশের কমপক্ষে ৪ লক্ষাধিক নারী, পুরুষ অবাল বৃদ্ধ, বনিতার সমাগম ঘটবে। ইতিমধ্যে দেশের সমগ্র অঞ্চল থেকে হাজার হাজার কাফেলাধারী পাগল ফকির, ভক্ত ও সাধক, দর্শনার্থীদের সীমান্তর্তী গ্রামগুলো ও আখড়াবাড়ীর আশে পাশের গ্রামে আসা শুরু হয়ে গেছে। পাশা পাশি ওরশস্থলের আস্থানায় ইবাদতখানা, অতিথি ভবন, কাফেলাঘর, বাগানের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, আখড়াবাড়ী ও ইসকন মন্দিরে প্রস্তুতি ও সংস্কার চলছে। ওরশের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত, হালকা জিকির, মুর্শিদী, ভান্ডারী, পল্লীগীতি, লালনগিতি, বাউল সঙ্গীত, জেলার মরমী কবি ও সাধক পুরুষ হাছন রাজারার লোক সঙ্গীতে ওরশ ও মেলাস্থল মাতিয়ে রাখার আয়োজন চলছে জোরেসোরে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, ৭শ ১১ বছরের ঐতিহ্যবাহী সপ্তাহ্ ব্যাপী মিলন মেলাকে শান্তিপুর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে জেলা প্রসাশক শেখ রফিকুল ইসলাম, স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, পুলিশ সুপার হারুন-অর রশিদ, সুনামগঞ্জ ৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল গোলাম মহি উদ্দিন খন্দকার, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল সহ তাহিরপুর উপজেলার ৭ ইউপি চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে সভাপতি করে পৃথকভাবে আইনশৃংখলা রক্ষা, উৎসব উদযাপন ও মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ও প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুল্লাহ্, সেকেন্ড অফিসার এসআই জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, আখড়াবাড়ী, পণাতীর্থ ধামে গঙ্গাস্নান, গড়কাটি ইসকন মন্দির,বারুনী মেলা ও ওরশ মোবারক আস্থানায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হবে। ২জন ম্যাজেস্ট্রিটের নেতৃত্বে ২টি ভ্রাম্যমান আদালতের পাশাপাশি মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা মেলায় আগতদের দেহ, ব্যাগ তল্লাশী সহ ডিএসবি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারী এবং ঝুঁকিপুর্ণ সড়কগুলোতে দিবারাত্রী যাতায়াতকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানি বন্ধে একাধিক পুলিশ ও বিজিবি টহল দল মোতায়েন করা হবে।