ভাটির বোরো ফসল : ২৭ হাওর এখনও অরক্ষিত

paddyটিপু সুলতান, দিরাই : দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ২৭ হাওর এখনো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। মাটি কাটার শ্রমিক নেই কোনো বাঁধেই। দেখা মিলছে না পিআইসির সদস্য ও পাউবো’র প্রকৌশলীদেরও। তবে ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান ও পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলীরা (এসও) দাবি করছেন, পারিশ্রমিক না পাওয়ায় কাজ বন্ধ রেখেছেন, মাটি কাটার শ্রমিকরা। পিআইসির সভাপতি মেম্বাররাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে না পেরে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এখনও না পাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্ঠি হয়েছে। আর দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন বাঁধের কাজ মনিটরিং করতে পৃথক চারটি কমিটি গঠন করেছেন।
তাড়ল ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘টেখার লাগি অনেকেই বাঁধের কাজ করতে পারতেছে না। কিছু কিছু বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও মাইট্রলের টেখার লাগি মেম্বাররা ভাগলও আছইন’। অতদিনে তিনটা বিল ফাওয়ার খতা। গতবারের টেখাও বাকি রইছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি করিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আছাব উদ্দিন সরদার বলেন, অনেখ মেম্বার ঋন খইরা টেখা আইন্যা বান্দ খাম খরাইছে। ওয়াবদার অফিসাররারে জিগাইলে খয় ফান্ড আইলে টেখা দিব। কোন্ দিন ফান্ড আইব আর কোন্ দিন টেখা দিব। অনেখ আওর রইছে খোলা। টেখা না ফাইলে খাম খরাইব কিলাখান।
জগদল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, তিন সপ্তাহ্ ধরি খালি তারিখ দেয়। গত বৃহস্পতিবারে খইছে রবি-সোমবারে টেখা দিব। অখন খয় আগামী রবিবারের খথা। টেখা না ফাইয়া আমরাও আর খাম খরাইতামনায়।
কুশিয়ারা নদীর ডানতীরসহ দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বরাম, কালিগোটা, ছায়া ও ভেড়ার ডহর হাওরের ৪২ পিআইসির বাঁধের কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, লেবাররা টাকার জন্যে মেম্বারদেরে চাপ দিচ্ছে। টাকা না দিতে পারার কারনে অনেকেই ভাগছেন। কেউ আসছেন সুনামগঞ্জ, কেউ গেছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। তিনি দাবি করেন, বরাদ্ধ আসতে বিলম্ব হওয়ায় বাঁধের কাজ পিছিয়ে পড়ছে। এতে পাউবো’র মাঠ কর্মকর্তাদের উপর চারিদিক থেকে চাপ বাড়ছে।
দিরাই’র অংশের সুরাইয়া-বিবিয়ানা ও চাপতির হাওরে ১০ পিআইসির দায়িত্বে নিয়োজিত পাউবো’র উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহীদুল্লা বলেন, তার অধিস্থ সবগুলো পিআইসিতেই ৬০/৬৫ ভাগ কাজ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্ধ ছাড় দেয়া হলে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ৭ দিন সময় লাগবে। সিলেটে প্রশিক্ষনে অবস্থানরত দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন মুঠো ফোনে বলেন, বাঁধের কাজ মনিটরিংয়ের জন্য পৃথক চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাঁধের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ বলেন,‘ অর্থ বরাদ্ধ পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে টাকা আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক সময় দেখা যায়, ইমার্জেন্সী রোগী হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসকরা অবহেলা করে থাকেন।’
প্রসঙ্গত এসব হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্তাবধানে পিআইসির মাধ্যমে ৫ কোটি টাকার বাঁধের কাজ করছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার সময়সীমা নির্ধারন করে দিয়েছিল পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়।