তোমাকে খুব ভালোবাসি : মো: শামীম মিয়া
আশা, স্বপ্ন, দুঃখ, বেদনা, সুখ, কান্না, হাসি প্রতিটি মানুষের সাথী। আমাদের সংক্ষিপ্ত জীবনে রইয়েছে অনেক স্মৃতি যা মানুষ জাতি কোনদিন ভুলতে পারেনা। সময় সময়ের গতিতে চলে চলচ্ছে তবে আমরা সবাই কিছু না কিছু পরির্বতন হচ্ছি। আপনার আমার এই জীবনে দেখলাম কে আসলো আবার কে গেলো সেই চিরোতরে। বলা চলে দুইদিনের দুনিয়ায় আমরা আছি ।
যাই হক, এবার আসল কথায় আসা যাক। সবে মাত্র যৌবনে পা দিলাম। এর মধ্যে আমার জীবনে আসে এক সুখের আলো। যে আলো সারা জীবন আমাকে সুখে রাখবে। সেই আলোটি হলো রত্না। যৌবন কালে মন্টা এতো ব্যাকুল হয় বলা বাহুল্য। শুধু সামনের দিকে এগোতে চায়। অতিৎ ভবিষৎ কিছুই যেন ভাবার সময় থাকে না। বর্তমানকেই মনে হয় জীবনের সব কিছু।
এর আগেও তো রত্না আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো। তখন তো আমি প্রেম প্রস্তাব গ্রহণ করিনী। যখন যৌবনে পা রাখলাম তখন রত্নার প্রেস্তাব গ্রহণ করলাম। আগে পিছে যা যা ঘটেছে তা যেন মনেই নেই আমার। শুধু মনে হয়েছে পেয়েছি। এই সুযোগ ছাড়লে হয়তো পাবনা কিছু।
শুরু হয়ে গেলো প্রেমের গল্প, স্মৃতি, প্রতিদিন চিঠি আদান প্রদান ইত্যাদি। আমাদের চিঠি আদান প্রদানের জন্য ডাক পিওন ছিলো না। ছিলো রত্নার প্রিয় বান্ধবী ইকা। রত্নার সাথে হয়তো ইকার কথা হয়েছিলো রোজ একটা করে চিঠি আদান প্রদান করবে। ইকা কথা রেখেছিলো।
চিঠিতে এতো মুধুর মিষ্টি কথা লেখা থাকতো সুন্দর ভাবে, মনে হতো রত্নার ঠোট দুটি কথা বলছে আমার সাথে। ওর বাকা দুনয়ন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চিঠি পড়ে মনে হতো রত্না কী আর একটু লেখতে পারিনী, চিঠিটা পড়ে রাত ফ্রুরিয়ে যেতো। আবার ভাবী রত্নাও তো এমনটা ভাবতে পারে। তাই বাকি সময় রত্নার জন্য চিঠি লেখে রাত ফ্রুরিয়ে দেই।
ভালোই চলছিলো দুজনার প্রেম। আমি চাই পুরো সময় দুজনার মনের কথা বলে কেটে দেই। কিন্তু তা সম্ভাব নয়, কারণ আমরা দুজন শিক্ষার্থী ছিলাম। দু-জনার পরিবারে কঠিন শাসন ছিলো। তার মধ্যে রত্না নাম্বার ওয়ান শিক্ষার্থী। ওকে পড়তেই হবে আমাকেও। রত্নার হাতে রুটিন করা হলো,সে দিন কাসে। চিঠি আদান প্রদান কম হবে তবে দেখা দিনে দু-বার। সকাল বিকাল।
এখন চিঠি আদান প্রদান কম হয় তবে দেখা হয় চোখে চোখে দিনে দু-বার। কাছে যেতে পারিনা, হাজারো মানুষের চলাচল রত্নাদের সেই জানালার গ্রিলের পাশ দিয়ে, অন্যদের মতে আমাকে দেখতে হতো। কষ্টে বুকটা ফেটে যেতো রক্তে চোখ লাল হতো। অজানতেই মন কেঁদে উঠতো। আমার মন্টা এতো ব্যাকুল হতো না যদি একটু কথা হতো। রত্নার ও কিছু করার ছিলো না। রত্না জানালার ওপার থেকে তাকিয়ে দেখতো ভিজা দুটি ঠোটে কাঁপানো ঠোঁটে।
প্রতিদিনের মতো আজও রত্না জানালার ওপারে। আজ রত্নাকে কেন জানি অন্য রকম লাগছে। রত্নার ঠোট দুটি কাঁপছে রত্না কী যেন বলবে আমাকে। হটাঃ রত্নার মা রত্নাকে ডাকলো রত্না চলে গেলো রুমে। স্কুল বন্ধ সামনে আবার পরিক্ষা, কঠিন চাপে আছে রত্না। ইচ্ছা করছিলো জানালার কাছ থেকে যেনে নেই, কী বলতে চেয়েছিলো রত্না ? তা তো আর সম্ভাব না।
পরেরদিন থেকে সকাল-বিকাল কোন সময় রত্নাকে জানালার ওপারে দেখা যায় না। ব্যাকুল হয়ে রত্নার প্রিয় বান্ধবী ইকা কে। অনেক কষ্টে ইকাকে খুজে পাই।
কিন্তু একি শুনালো ইকা। বুকের ভিতর থেকে কলিজাটা ছিড়ে ফেলার গল্প। একটা রিদয় ভাঙ্গার গল্প। আমার জীবনের আলো নিভানোর গল্প। একটা সুন্দর ফুল ছিড়ে ফেলার গল্প। চোখে সমুদ্রের ঢেউয়ের গল্প। রত্নার বাবা মা রত্নাকে বগুড়া নিয়ে গিয়ে কোন রাজ পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে গতকাল। স্থির হয়েছিলাম মুখে কোন কথা বলা শক্তি ছিলোনা। হাটছি না কাদছি কিছু বুঝার শক্তি ছিলো না আমার, তবে হঠাৎ চমকে উঠলাম রত্নাদের সেই জানালাটা দেখে। অনেকক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম সেখানে। আর ঠিক থাকতে পারছিলাম না তখন। দৌড়ে গিয়ে ছিলাম শূন্য জানালাটার কাছে। জানালাটা দু-হাতে ধরে বলেছিলাম কী বলতে চেয়েছিলো রত্না। ওর বিয়ের কথা, না বলতে চেয়েছিলো চলো দুজনে হাড়িয়ে যাই কোন অচেনা দেশে। অনেকক্ষন কেঁদেছিলাম সেখানে। অবশেষ আমি জানালাকে বলিলাম, রত্না এলে বলো আমি সত্যি সত্যি রত্নাকে খুব ভালোবাসি।