সিলেটে বৈদেশিক মূদ্রা ভাঙ্গানোর নামে অভিনব প্রতারনা!
সিলেট নগরীতে বৈদেশিক মুদ্রা ভাঙ্গানোর প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব প্রতারনার ফাঁদে ফেলে নিরীহ মানেষকে ঠকাচ্ছে একটি চক্র। এই চক্রের প্রতারনার ফাঁদটি অনেক অদ্ভুত বলা যায় । বেশ কয়েক বছর থেকে বিভিন্ন লোক মুখে টুকরো টুকরো গল্প শোনা যাচ্ছিল এই সব প্রতারনার ।
গত সোমবার দক্ষিন সুরমার পলিট্যাকনিকেল জামে মসজিদের ইমাম জামাল উদ্দিন এই চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন । খতিব সাহেব প্রতিদিন কাজির বাজার নতুন ব্রীজের উপর ফজর এবং আসরের নামজের পর হাটতে যান । গতকালকে প্রতিদিনের মত সকালে উনি হাটছিলেন হঠাৎ পিছন থেকে আ্ওয়াজ আসে হুজুর সালামু আলাইকুম । লোকটির কাপড় চোপড় তেমন ভাল না , কিছুটা ময়লা, মাথার চুল এলোমেলো, পায়ে সেন্ডেল পড়া । আগন্তুক সালাম দেওয়ার পর উনাকে বলল ,”হুজুর সোনালী ব্যাংকটা কোন দিকে? আমি চিনিনা । বলে পকেট থেকে একটা ৫০ রিয়ালের নোট বের করে উনাকে দেখিয়ে বলল এটা আমি পাইছি এবং ভাঙ্গাবো । পরে আগন্তুক লোকটি বলরো হুজুর আমার এটা কি আপনি ভাঙ্গিয়ে দিতে পারবেন ? কারন আমার কাপড় চোপড় ভালনা , ব্যাংকের লোক হয়তো ভাববে চুরি করে আনছি । আপনি তো হুজুর মানুষ এই সাহায্যটা করেন আমাকে । আমার মোবাইল নম্বার রাখেন নোটটা ভাঙ্গাইতে পারলে আমাকে ফোন দিয়েন বিকালে আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাব । হজুর বলনেন “আচ্ছা দেউক্কা আমার কাছে, আমি ইতা কোনদিন ভাঙ্গাইছিনা অত করি যখন কইরা দেখি পারা যায়নি” পরে সে হুজের কাছ থেকে ৫০ রিয়াল দিয়ে সে চলে যায় ।
পরে হজুর আম্বরখানা সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০ রিয়াল ভাঙ্গিয়ে ১০০০ টাকা পান এবং বিকেলে ঐ আগন্তুককে ফোন করেন এবং টাকাটা দিয়েদেন । ইমাম জামাল উদ্দিন টাকা দিয়ে চলে আসবেন এ সময় আগন্তুকটি পথরোধ করে আবার বললো হুজুর এই নোটগুলো আরও ৯ বান্ডিল আমার কাছে আছে। আপনি কি নিবেন ? জামাল উদ্দিন উদ্দিনের চোখ কপালো উঠারমত অবস্থা । কিছুক্ষন চিন্তা করে বললেন, “দেখ আমি তো আপনারে চিনি না আর অতগুলো রিয়াল আপনি কই পাইছইন”।
পরে সে বলল হুজুর দেখেন ঐনোট গুলে আসলে আমার না আমার পরিচিত আরও একজনের, সে হল হিন্দু ঢাকায় থকতো , জাতে সুইপার । তার বউ এক বিদেশী সৌদির বাসায় কাজ করত এবং ঐ সৌদি লোকটি একদিন মারা যায় । সৌদি লোকটি মারা যাওয়ার পর তার ব্যবহৃত সব বিছানা-বালিশ তারা ফেলেদেয়। কাজের লোক হিসাবে তার বউ ঐ ফেলে দেওয়া জিনিস পত্র নিয়ে আসে এবং বালিশের ভিতরে ঐ নোটগুলো ছিল । পড়ে তারা ঐগুলা নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে চলে আসে।
সে ঐনোট গুলা নিয়ে খুব আতংকের মাঝে আছে , সে এমন একজন ভাল মানুষকে খুজছে যে সবগুলা নোট একসাথে ভাঙ্গিয়ে দিবে? আমি এবং তারা সুবিদবাজারের একটা কলনিতে থাকি সেখানে গিয়ে তার সাখে আপনারে আলাপ করিয়ে দিব যদি আপনি ভাঙ্গাইতে পারেন , তবে হুজুর আপনি ছাড়া আর কাউকে এসব কথা বলতে পারবেন না। হুজুর বললেন আচ্ছা ঠিক আছে।
হুজুরের মাথায় তো রিয়ারের পোকা ঘোরপাক খাচ্ছে । ৫০ রিয়ালের ৯টা বান্ডিল ১০০০X৯০০= ৯,০০,০০০/- টিক মাগরিবের নামাজের পর ঐ আগন্তিকের মোবাইল থেকে কল আসছে , আগন্তুক: হুজুর ঐ যে ভাই আপনার সাথে কথা ভলবে” বলে ফোন টা অন্য একজন ধরল ঐ পাশ থেকে, “আদাভ হুজুরজি মে বহত গরিব লোক হু, আপনাকে তে সোব কোথা বোলছে হামার ভাইয়ে” (কথা গুলো চা বাগানে কাজ করে কুলি সম্প্রদায়ের লোকেদের কথার মত লাগছিল), হুজুরজি কেয়া আপনে হামাকো সব নোট ভাংগাইয়া দিতে পার বেন, না হলে আপনে সব কিনেলেন?
হুজুর বলনেন সবতো একসাথে ভাঙ্গানি সম্ভবনা , আর অল্পকরি দিলে আজকুর লাকাল ভাঙ্গাইল যাইব আর অতটেকা আমারকাছে নাই।
নোটের মালিক: আছা সাবজি তয় আপনে হামারে কত দিতে পারবেন সব নোটের দামতো অনেক টেকা ৯,০০,০০০/- এক কাম করেন আমারে ৪ লাক টাকা দিয়া দিয়েন , আমি এইগুলা নিয়া খুব বিপদে আছি , হামার এত টেকার দরকার নাই কিচু পাইলেই অইল নাইলে দেখা যাইবো কেউ হামারে পরে মারিয়া সব লইয়া যাইবগিয়া।
হজুরের মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম আল্লাহ আমাকে ধনী করেদিবেন এই জন্য মনে হয় এই প্রাস্তাব পাচ্ছি। এই সুযোগ কিভাবে কাজে লাগারো যায় ৪ লাখ টাকায় ৯ লাখ টাকা । পরে ইমাম জামাল উদ্দীন তার এক ব্যাংকার বন্ধুর সাথে সবকিছু শেয়ার করেন এই ভেবে যে উনার সাথে শেয়ার হয়ে না হয় কিনে নেব ঐ রিয়ালগুলো ।
ঐ ব্যাংকার বন্ধু সবকিচু শুনে তো অবাক দুইটি ঘটনা কিভাবে এত মিলেগেল । ব্যাংকার বন্ধু বললেন জামাল ভাই “ইতা সব ভুয়া ” আরে আইজতাকি তিন বছর আগে আমার এক কলিগর লগে অউরকম আর একটা ঘটনা য়টছিল যার গল্প হুনছিলাম,যা দেখি হুবহু আপনার লগে যা ঘটছে মিলিগেল তবে আনপার বেলায় আসিল পথচারি , রিয়াল আর সৌদি বিদেশী লোক আর আমার কলিগর লগে যা গটছে হিকানোর বাস্তব গল্পটা আছিল আছিল রিক্সা ডাইভার বানাম ব্যাংকার, ১০ পাইন্ড নোট ১০ টা । এখন বুজছইন নি?
যাই হোক এর পরে হয়তো হুজুর ধনী হওয়ার আশাটা নষ্ট হয়ে গেল কিন্তু পরবর্তীতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করলেন যে , যাই হোক হয়তো ঠকতে হত , আল্লাহ বাচাইছেন ।
আপনারা সকলে হয়ো এতক্ষনে বুঝো গেছেন সমস্ত ব্যপারটা , পরবর্তী ঘটনাটা কল্পনা করলে হয়তো এমন হতে পারতো, ইমাম নিজাম উদ্দীন লোভে ৪ লক্ষটাকা যোগাড় করে ঐ রিয়ালগুলো লুকিয়ে কিনে নিলেন পরবর্তীতে দেখাগেল যে পুরা ৯টি বান্ডিলের উপরের আটারটি বা ছয়ত্রিশটি নোট আসল আর সবগুলো জাল রিয়াল । হতে পারতো?
অথবা এটাও হতে পারতো ইমাম নিজাম উদ্দীন যখন টাকা নিয়েগেছেন যেকোন ভাবে তাকে আঘাত কিংবা স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে টাকা নিয়ে পালিয়ে যেত। আরও অনেক কিছু হতে পারতো ।
এই লেখাটির উদ্দেশ্য হল এরকম ঘটনা গত তিনবছর আগে ২০১১ সালে ঘটেছিল একজন ব্যাংকারের সাথে এবং ২০১৫ তে ঘটল একজন মসজিদের ইমামের সাথে । এক ব্যাক্তি ঐ দুই ঘটনা কাকতালিয় ভাবে সময়ের ব্যবধানে শোনার কারনে এই চক্রোর অভিনভ পদ্ধতিটি উৎঘাটিত হয় এবং ঐ ব্যাংকার আমাকে ফোন করে পুরো ঘটনাটা বলেন এবং সবশুনার পর মনে হল কিছু একটা করা দরকার আর তা না হলে ঐ চক্রের অভিনব ফাঁদে কেউনা কেউ কোন একসময় ঠকবেই। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম কলমদিয়ে লিখে ঐ অবিনব চক্রের বাস্তবগল্পটা সবার মাঝে প্রকাশ করব।
সবাই এখন থেকে সাবধান । আমার মনে হয় এই রকম চক্র শুধু সিলেট নগরীতে নয় এদেশের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে আছে এবং প্রতি নিয়ত নিরিহ জনগনকে ঠকাচ্ছে । তাই সরকারের উধ্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর সকলের দুষ্টি আকর্ষন করছি দয়াকরে এই চক্রোর সকল হোতাদোর চেষ্টা করেন যাতে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় ।
মোঃ আরিফুল ইসলাম (সম্পাদক ও প্রকাশক)
জৈন্তিয়ানিউজটুয়েন্টিফোর.কম