গোয়াইনঘাটে ওসির সহযোগীতায় অশ্লীল যাত্রাগান
গোয়াইনঘাট সংবাদদাতাঃ গোয়াইনঘাটের ওসি আব্দুল হাই’র কাছে গিয়েছিলেন প্রায় শতজন আলেম-উলামা। অভিযোগ করেছিলেন, যাত্রাপালা,মদ,গাজা ও জুয়ার কারনে এলাকার যুবসমাজ বখে যাচ্ছে। এর আগে আলেমরা ইউএনও’র কাছে দিয়েছেন স্মারকলিপি। ইউএনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে ওসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস সময় পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশি ভূমিকা নীরব । উল্টো রাত হলেই নর্তকীর নৃত্যে জেগে উঠেন সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটের হাওর এলাকার মানুষজন। অবিরাম চলছে লাখ লাখ টাকার জুয়ার আসর। এ নিয়ে ক্ষোভের অন্তঃ নেই গোয়াইনঘাটের আলীগাও ইউনিয়নের সাধারন মানুষের। স্থায়ী কোনো যাত্রা গানের আসর হচ্ছে না গোয়াইনঘাটে। তবে, এবার ‘মোবাইল যাত্রা পার্টি’র নৃত্যচারনা বেড়েছে গোয়াইনঘাটে। গত দুই মাস ধরে তারা গোয়াইনঘাটের একাধিক হাওরে যাত্রা পার্টির আয়োজন করে চলেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল।
এলাকার লোকজন জানান, সিলেট নগরীর কাস্টরের ওই যাত্রাপার্টিতে রয়েছে ৪-৫ তম্বী-তরুনী। এদের সাথে রয়েছে কিছু যুবকও। প্রত্যহ সন্ধ্যা হলেই সিলেট শহর থেকে গাড়ি ভাড়া করে তারা চলে যায় গোয়াইনঘাটে। সেখানে রাতের যাত্রাপার্টিতে নেচে-গেয়ে ভোর রাতে আবার সিলেটে ফিরে আসে তারা। যাওয়ার আগে স্থানীয়রা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখে। আড়ালে আবড়ালে ও কানে কানে চলে প্রচারনাও। দিনে ‘ঘোড়দৌড়’ আয়োজনের পর সন্ধ্যা নামলেই বসে মদ,গাজা,জুয়া ও নর্তকীর আসর। অর্ধশতাধিক পেশাদার জুয়াড়ী এসব জুয়ার আসরের সঙ্গে জড়িত। গত ডিসেম্বরের শুরু থেকে গোয়াইনঘাটের একাধিক হাওরে চলছে এই আয়োজন। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসনকে অবহিত করেন। চলতি মাসের শুরুতে স্থানীয় কুরিহাই হাওর ও ধর্মগ্রাম হাওর পাড়ের ৭ টি গ্রামের অর্ধশতাধিক আলিম-ওলামারা স্থানীয় গোয়াইনঘাট থানার ওসির কাছে যান। তারা ওসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই লিখিত অভিযোগে তারা জানান, আলীর গাও ইউনিয়নের কুরিহাই ও ধর্মগ্রাম হাওরে প্রতি রাতেই স্থানীয় দুস্কৃতিকারীরা যাত্রা গান ও অসামাজিক কার্যকলাপের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া, জুয়া মদ ও দেহদানের হাটও বসে বলে অভিযোগ করেন তারা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে তারা ওসিকে অনুরোধ জানান। ওসি তাদের আশ্বস্থ করে আর গান হবে না বলে জানালেও বাস্তবতার সাথে ওসির কথার কোন মিল নেই। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি গোয়াইনঘাটের ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসিকে নির্দেশ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছেনা।
সর্বশেষ সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষে প্রতিবাদী সালেহ রাজা লিখিত অভিযোগে উলে¬খ করেছেন, গোয়াইনঘাটের ইউএনও ও ওসির কাছে এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ করেও কোনো ফল আসেনি। সালেহ রাজা জানান, আলীরগাও ইউনিয়নের হাজরাই হাওর, কুরিহাই হাওর, খাল হাওর, খলা হাওর, খলাগ্রাম হাওরে এসব যাত্রাগানের আয়োজন করা হয়। দুই মাস ধরে এসব হাওরে যাত্রা গানের অশ্লীলতা চললেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। বরং রাতে এসব যাত্রাগান ও জুয়ার আসরের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিনি জানান, আয়োজকরা প্রতি রাতে গোয়াইনঘাট থানার ওসিকে ৫০হাজার টাকার দিয়ে এসব অনুষ্টানের আয়োজন করেন। এ কারনে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি জানান, কুরিহাই গ্রামের খলিল, খলা গ্রামের শওকত, বারহাল গ্রামের আতাই, কুরিহাই গ্রামের ইয়াসিন, উযুহাত গ্রামের রকিব, খাস গ্রামের চান মিয়া, হাজরাই গ্রামের আব্দুলাহ, ধর্মগ্রামের রশিদ, উযুহাত গ্রামের ফরিদ ও হাজরাই গ্রামের হানিফের নেতৃত্বে এসব আয়োজন চলছে। এদিকে, বর্তমানে চলছে কুরিহাই গ্রামে যাত্রা ও জুয়ার আসর। হাওরে প্যান্ডেল দিয়ে এসব অপকর্ম চলার কারনে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করায় শুক্রবার সকালে আলীরগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম মো. আনোয়ার শাহ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল হাই জানান, যাত্রা এবং জুয়ার আসরের কোনো খবর তার কাছে নেই। কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তিনি টাকার নেওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন।