বিরোধী দলকে ধ্বংস করে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় : কর্নেল অলি
২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল অলি আহমদ বীর বিক্রম (অব.) বলেছেন, গত দেড় মাসে ২০ দলের প্রায় ২০ হাজারের বেশী নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। সরকারের বাহিনীর হাতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০ দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অঘোষিত অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পাঠানো খাবার পর্যন্ত ভেতরে নিতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি দলের অনেক বড় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অশোভন ও অনাকাক্সিক্ষত বাক্য ব্যবহার করে রাজনীতিকে কলুষিত করছে। বাস্তবতা হল মানুষ আগুনে পুড়ে মরছে, গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে। দেখামাত্র গুলির ভয়ে তারা আতঙ্কে আছে। কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে এবং বিরোধী দলকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সর্বতভাবে বিরোধী দল সমুহুর রাজনীতি ধ্বংসের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। বিরোধী দলকে ধ্বংস করে কখনো গণতন্ত্র সুসংহত বা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
তিনি আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
কর্নেল অলি বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফলে দেশে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ৯৩-৯৫ ভাগ জনগন এই নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত ছিল। বর্তমান সরকার পরিচালনায় তাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। ফলে জনগণ সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং সমান সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
সহিংসতা প্রসঙ্গে কর্নেল অলি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে বিএনপির জš§ হয়েছিল। বিএনপি কখনো অসাংবিধানিক-অনিয়মতান্ত্রিক বা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত ছিল না, বর্তমানেও নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলন করার অর্থ জঙ্গিবাদ হতে পারে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কখনো সন্ত্রাসী কর্মকা- হতে পারে না। দেশে যখন আন্দোলন সংগ্রাম চলে তখন কিছু কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী তাদের নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়।
তিনি বলেন, বিরোধী দলকে ধ্বংস করে কখনো গণতন্ত্র সুসংহত কিংবা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যে যখনই সরকারে থাকে তার উচিত হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকা- এগিয়ে নেওয়া।
কর্নেল অলি বলেন, ১৯৭৬ সালে আমি নিজেই সাক্ষীÍ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক সদস্য ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তারা তৎকালিন সরকারের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছিলো। সরাসরি অস্ত্র হাতে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে বি.বাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত এক ধরনের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। সীমান্ত এলাকার জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজেই বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং তৎকালীন বিজেপি (ভারত) সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের সাহায্যে এই ধরনের হামলাগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নেন। ধীরে ধীরে তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং এটা আমাদের জানা ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা বা প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বরং সুনাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নয়ন ও সঠিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।